শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

করোনা নিয়ে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ সুন্দরবনের সমাজসেবী কার্তিক বোস

News Sundarban.com :
মার্চ ১৮, ২০২০
news-image

 

সুভাষ চন্দ্র দাশ,ক্যানিং -ক্যানিংয়ে করোনা নিয়ে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন সুন্দরবনের বিশিষ্ট সমাজসেবী কার্তিক বোস,বিলি করলেন পাঁচ হাজার মাস্ক,পাঁচ হাজার পেন,পাঁচ হাজার সাবান ও পাঁচ হাজার মিনারেল জলের বোতল।বুধবার সকাল থকে বিকাল পর্যন্ত ক্যানিং মহকুমার বিভিন্ন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রে হাজীর হয়ে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ও একাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিলেন এই সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।
উল্লেখ্য কান পাতলেই করোনা আর করোনা’র আতঙ্ক। চারিদিকে চলছে ত্রাহিত্রাহি বর।সমানে চলছে গুজব রটনাও।পাশাপাশি মাস্ক কিংবা স্যানিটাইজারের কালোবাজারী চলছে।করোনা আতঙ্কে একের পর এক আতঙ্ক গ্রাস করে জটিল পরিস্থিতির সম্মূখীন হয়ে আরো আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন সাধারণ মানুষজন।
মুষ্ঠিমেয় কিছু মানুষজন গুজব কে হাতিয়ার করেই আতঙ্কের মহামাীর এক পরিবেশ তৈরী করতে বদ্ধ পরিকর।বিশেষ করে প্রত্যন্ত সুন্দরবন এলাকায় যত্রতত্র চলছে গুজব আর গুজব।অন্যদিকে প্রাথমিক ভাবে করোনা কে প্রতিহত করতে স্কুল,কলেজ গুলি ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত রাজ্য সরকার ছুটি ঘোষণা করায় প্রত্যন্ত সুন্দরবন এলাকার সাধারণ মানুষজন থেকে স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা খুশি। ছুটি ঘোষণা হলেও রাজ্যে এই মুহূর্তে চলছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা।আর এই করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সহ তাদের পরিবারের লোকজন।পাশাপাশি সেই আতঙ্ক থেকে সচেতন করতে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছে ত্রাতার ভুমিকায় হাজীর হলেন সুন্দরবনের সমাজসেবী কার্তিক বোস।তিনি সমগ্র ক্যানিং মহকুমার সমস্ত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে রীতিমতো দোকানের পরসা সাজিয়ে বসেছেন।জলের বোতল থেকে শুরু করে পেন,হাত ধোওয়ার সাবাব এমন কি বর্তমান বাজারে দুর্লভ,টাকা দিয়েও অমিল সেই মাস্ক নিয়ে।
বুধবার পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে চোখে মুখে আতঙ্কের ভয় নিয়ে জড়ো হয় উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা। করোনা আতঙ্কে আতঙ্কিত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের হাতে তুলেদিলেন মাস্ক,সাবান পেন ও মিনারেল জলের বোতল। পাশাপাশি গুজবে কান না দিয়ে সতর্ক ও সাবধানতা অবলম্বনের কথা জানাচ্ছেন।
আর এই সচেতনতা দেখে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অভিভাবক সালেমা মোল্ল্যা,কুতুবুদ্দিন মন্ডল,পিয়ালী সরদার’র বলেন করোনা ভাইরাসের কথা শুনে বাজারে গিয়েছিলাম মাস্ক কিনতে।১০ টাকার মাস্ক ৫০,১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। একশ টাকা দিয়ে কিনতে রাজী ছিলাম। কিন্তু পেলাম না।না পাওয়ার জন্য আরো যেন আতঙ্কিত হয়ে পড়ি।বুধবার বাসন্তীর ঢুঁড়ি এলাকার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাকেন্দ্র জনপ্রিয়নগর জনপ্রিয় বিদ্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখি স্কুলের পাশেই এক ব্যাক্তি জলের বোতল,পেন,সাবান ও মাস্কের পরসা সাজিয়ে দোকান দিয়েছেন। তড়িঘড়ি সেখানে মাস্ক কিনতে যাই উচ্চমাধ্যিক পরীক্ষার্থী মেয়ের জন্য। দোকানদার বললো মাস্ক বিক্রি হবে না। একশ টাকা দিয়ে কিনতে চাইলে ও দিলেন না। আরো দুর্বল হয়ে ভেঙে পড়ি। পয়সা থাকলেও মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না।খানিক পরেই দেখতে পেলাম উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের কে ডেকে নিয়ে একত্রিত করে সকলের হাতে জল,পেন,সাবান ও মাস্ক তুলে দিচ্ছেন। অগত্যা ভুল ভাঙে।দূর হয় করোনা আতঙ্কের চিন্তা।
এদিন সকাল থেকেই ক্যানিং মহকুমার পরশুরাম যামিনীপ্রাণ হাইস্কুল,বাসন্তীর নারায়ণতলা রামকৃষ্ণ বিদ্যমন্দির সহ সুন্দরবনের অন্যান্য বিদ্যালয়ে প্রায় পাঁচ হাজারের অধিক মাস্ক জলের বোতল পেন ও হাত ধোওয়ার সাবান বিলি করেন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের কে।
কেন এতো সংখ্য মাস্ক বিতরণ করলেন এমন প্রশ্ন করতেই সমাজসেবী কার্তিক বোস বলেন “রাজ্য সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর আদর্শকে সামনে রেখে এমন উদ্যোগ নিয়েছি। আগে থেকেই মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পেন জলের বোতল দেওয়ার জন্য কিনে রেখেছিলাম। আচমকা হাজীর হয়েছে করোনা ভাইরাস।সমগ্র বিশ্ব এই ভাইরাসে উত্তাল। চারিদিকে কানাতলেই একটাই বাক্য এবং আলোচ্য বিষয় করোনা ভাইরাস।পাশাপাশি গুজব ও রটনা চলছে সমান ভাবে এবং মাস্ক ও স্যানিটাইজার বাজারে অমিল। চলছে কালোবাজারী।বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীরাই আমাদের আগামীর ভবিষ্যৎ। তারা সচেতন হলে তাদের পরিবার ও সচেতন হবে। আর সেই জন্যই এতো কিছুর মধ্যে নিজের জন্মভূমি সুন্দরবনের মানুষজন কে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মাধ্যমিক,একাদশশ্রেণী ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের হাতে পাঁচ হাজারের অধিক মাস্ক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তুলে দিয়েছি।আগামী দিনেও বিভিন্ন বাসষ্ট্যান্ড,রেলওয়ে ষ্টেশন,স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং হাসপাতালে হাজীর এমন সচেতনতার বার্তা নিয়ে পৌঁছে দিতে বদ্ধ পরিকর।”
কার্তিক বোসের একক ভাবে এমন উদ্যোগ কে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ অন্যান্যরা। তাঁরা জানিয়েছেন কার্তিক বাবু মতো সমাজে আরো মহান ব্যাক্তিত্বরা এমন সচেতনতার প্রচার করে ঝাঁপিয়ে পড়লে প্রাথমিক ভাবে সচেতনতায় সফল হওয়া সম্ভব। আর তাতে করে করোনা ভাইরাস হার মানতে বাধ্য।
এদিন সমাজসেবী কার্তিক বোসের সাথে এমন কর্মযঞ্জে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে সাহায্য করেছিলেন তাঁরই সন্তান বিজিৎ বোস ও ভাইপো সৌভিক বোস।