শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাসন্তী ব্লকে শিক্ষার আলো আনতে স্কুল গড়লেন প্রাক্তন ফুটবলার

News Sundarban.com :
ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২০
news-image

সুভাষ চন্দ্র দাশ,ক্যানিং :

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার প্রত্যন্ত সুন্দরবন এলাকার পিছিয়ে পড়া ব্লক বাসন্তী। আর এই বাসন্তী ব্লকের অধীনস্থ অত্যন্ত পিছিয়েপড়া এলাকা ১০ নম্বর বড়িয়া। এই ১০ নম্বর বড়িয়া এলাকার সিংহ ভাগ মানুষজন আদিবাসী সম্প্রদায়ের এবং নিরক্ষর। যাঁদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। সেই এলাকার ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া কিংবা খেলাধূলা করার ইচ্ছা থাকলেও আর্থিক অনটনের জন্য তা পেরে ওঠে না পরিবারের সদস্যরা। অগত্যা খেলাধূলা কিংবা পড়াশোনা ছেড়ে অন্নের সন্ধানে নেমে পড়তে হয় এলাকার ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের কে। এমনই দৃশ্য কোন এক সময়ে নজরে পড়ে প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলার রুপক চৌধুরীর। সেই মতো খোঁজ খবর করেই বড়িয়া এলাকায় একটি জায়গার সন্ধান ও পেয়ে যান।প্রাক্তন এই ফুটবলারের পাশে দাঁড়িয়ে বিদ্যালয় তৈরীর জন্য ১৫ কাঠা জমি দান করেন এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবী ত্রৈলোক্য নাথ রায়।বাসন্তী ব্লকের পিছিয়ে পড়া আদিবাসী অধুষ্যিত ১০ নম্বর বড়িয়া এলাকায় রুপক গড়ে তোলেন “সৃজন বিদ্যাপীঠ” নামক একটি বিদ্যালয়।যেখানে শিশুদের পড়াশোনার পাশাপাশি শরীরচর্চা এবং খেলাধুলার প্রশিক্ষণ চলবে।সৃজন বিদ্যাপীঠে পড়াশোনার জন্য স্কুল পোশাক থেকে বই খাতাপত্তর সহ সমস্ত উপকরণ দিয়ে সাহায্য করবে “হরিনাভি সৃজন”।বুধবার সকালে প্রত্যন্ত আদিবাসী এলাকায় সৃজন বিদ্যাপীঠ স্কুলের সুচনা অনুষ্ঠানে গিয়ে জানতে পারেন স্কুলের ভূমিদাতা ত্রৈলোক্য নাথ রায় পরলোক গমন করছেন কিছুদিন আগেই।শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন প্রাক্তন এই ফুটবলার রুপক।চোখের জল ফেলতে ফেলতে তিনি জানিয়েছেন “ত্রৈলোক্য বাবুর দান করা জমিতে কি হল তা তিনি দেখে যেতে না পারায় খুব দুঃখজনক ঘটনা। তবে তাঁর এই অমূল্য দান কোনদিনও বিফলে যাবে না।পাশাপাশি রুপক বাবু আরো বলেন
এই কাজে আমার কোনো কৃতিত্ব নেই, যা কিছু প্রশংসা সবই ত্রৈলোক্য বাবু ও অন্যান্য যে সমস্ত ব্যক্তি সাহায্য করেন বা করেছেন তাঁদের।এমন মহান ব্যাক্তিত্বরা না থাকলে কোনো কাজই করা সম্ভব হতো না,আমি শুধুই সামান্য একজন কর্মীমাত্র।” বুধবার ২৫ জন ছাত্রছাত্রী ও দুজন শিক্ষক নিয়ে পথ চলা শুরু করলো ১০ নম্বর বড়িয়া গ্রামের “সৃজন বিদ্যাপীঠ”।
কে এই রুপক চৌধুরী ? তা জানতে কয়েক দশক পিছিয়ে যেতেই হয়।

একদা ইষ্টবেঙ্গল,মোহনবাগান,মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে ফুটবল পায়ে দাপট দেখিয়ে ছিলেন হরিনাভির ফুটবলার রুপক চৌধুরী।১৯৯১ সালে নঈমুদ্দিনের ইষ্টবেঙ্গল কিংবা ১৯৯৭ এ অমল দত্তের মোহনবাগানে নিয়মিত ছিলেন হরিণাভির ফুটবলার রুপক চৌধুরী।পাশাপাশি সত্যজিত চ্যাটার্জী,তুষার রক্ষিত,দীপেন্দু বিশ্বাসদের মতো ফুটবলাদের সাথে দাপটের সঙ্গে ফুটবল খেলে বি সি রায় ট্রফি ও সন্তোষ ট্রফি এনে দিয়ে দেশের মধ্যে ফুটবলে বাংলার মান-মর্যাদা এক উচ্চশিখরে পৌঁছে দিয়েছিলেন। পরবর্তী কালে বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে প্রিয় ফুটবল খেলে থেকে অবসর নেন। কিন্তু অবসর বললেই তো আর অবসর হয় না। এরপর স্ত্রী রিনা চৌধুরীর অনুপ্রেরণা ও একান্ত সহযোগিতা এবং তাঁর ইচ্ছায় নেমে পড়েন সমাজসেবা মূলক কাজে।গড়ে তোলেন “হরিনাভি সৃজন” নামে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।১৯৯৩ সাল থেকে জেলা সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রাম্যমাণ ভাবেই রক্তদান শিবির,দুঃস্থদের বস্ত্র বিতরণের পাশাপাশি অসহায় দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়ে পড়াশোনার খরচ দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে পথ চলা শুরু “হরিনাভি সৃজন” এর।১৯৯৫ সালে শিশুদের শিক্ষা,স্বাস্থ্য ও শরীর চর্চার জন্য দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার চাম্পাহাটিতে গড়ে তোলেন একটি বিদ্যালয়। নাম দেন “হরিনাভি সৃজন বিদ্যাপীঠ”।এরপরই বিদ্যালয়ে বাড়তে থাকে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও।বাড়তে থাকে সহৃদয় বন্ধুবান্ধবের সংখ্যাও তাছাড়াও রুপকের এই উদ্যোগে সাহায্য সহযোগিতা করে বিভিন্ন সময়ে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন চন্দন সরকার,কমল ঘোষ,মেহেতাব,অরুন লাল,সঞ্জয় সেন,মানবাধিকার কর্মী জে এস সি জ্যাকসন,এভারেষ্ট জয়ী রমেশ রায় মতো খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বরা। বড়িয়া গ্রামে ছোট ছোট প্রতিভাববান ছেলে মেয়েদের করুণ দুর্দশা দেখে দুঃখও পেয়েছিলেন রুপক বাবু।সুন্দরবনের সেই পিছিয়ে পড়া আদিবাসী অধুষ্যিত এলাকা বড়িয়া এলাকার অসহায় নিরক্ষর মানুষের সেই দুঃখ বিমোচনের উদ্যোগ নিয়ে অন্ধকার ঘুঁচিয়ে শিক্ষার আলো প্রজ্জ্বোলিত করতে দ্বিতীয় স্কুল গড়ে পথচলা শুরু করলো রুপকের সৃজন বিদ্যাপীঠ।