শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মিড ডে মিলে মাছ ভাজা ,অবাক পড়ুয়ারা

News Sundarban.com :
ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২০
news-image

বিশ্লেষণ মজুমদার,ক্যানিং:  জেলা সহ সারা রাজ্যে মিডডে মিল নিয়ে নানান ধরনের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।কখন চাল,ডাল,তেল চুরি ঘটনা সামনে চলে এসেছে। আবার কখনও বা অল্প পরিমান নিন্ম মানের খাবার দেওয়া,খাবারে পোকা,শুধু মাত্র ডাল ভাত দেওয়ার ঘটনাও রয়েছে। এর পাশাপাশি বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকারা আবার বিদ্যালয়েই আলাদা ভাবে উন্নত মানের খাবার তৈরী করে খেয়ে থাকেন বলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে অভিযোগও রয়েছে ।এমন ভুরী ভুরী অভিযোগ রয়েছে মিডডে মিলের ক্ষেত্রে।সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার প্রত্যন্ত সুন্দরবনের পিছিয়ে পড়া একটি ব্লক বাসন্তী। এই বাসন্তী ব্লকের বাসন্তী গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় অবস্থিত সি এস এফ পি প্রাথমিক বিদ্যালয়।বর্তমানে এই বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১০২ জন এবং শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা ৪ জন। আর এতসব অভাব অভিযোগের মধ্যে প্রত্যন্ত সুন্দরবনের এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মিডডে মিলের পাতে পড়লো বড় বড় মাছের ভাজা!যা দেখে ক্ষুঁদে ছাত্র ছাত্রী থেকে অভিভাবকরা ও আশ্চর্য!
বিগত ২০১৯ সালে ৩১ আগষ্ট সুন্দরবনের এক অনুষ্ঠানে বাসন্তী ব্লকের চুনাখালি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় বিধায়ক জয়ন্ত নস্করের উদ্যোগে ছোট ছোট স্কুল পড়ুয়াদের পুষ্টির জন্য পড়ুয়াদের মিডডে মিলের পাতে ‘ঘি’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। নিজের বিধায়ক ভাতার টাকা খরচ করে এমন সিদ্ধান নিয়েছিলেন বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর।সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৯ এর ৯ সেপ্টেম্বর মাস থেকেই চুনাখালি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সমস্ত বিদ্যালয়ের মিডডে মিলে সপ্তাহে তিন দিন ৪৭০৩ জন পড়ুয়ারা ‘ঘি’ খেতে পাচ্ছে।এবার বাসন্তী ব্লকের সজিনাতল সি এস এফ পি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের মিডডে মিলের পাতে মাছ দেওয়ার কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। অন্যান্য তরিতরকারী পাশাপাশি পড়ুয়াের মিডডে মিলে বাড়তি সংযোজন হল ভাজা মাছ।যা দেখে কচিকাঁচা পড়ুয়ারা এবং তাদের অভিভাবকরা অবাক এবং খুব খুশি।


উল্লেখ্য শিশুদের পুষ্টির জন্য মিডডে মিল খাওয়ার পাতে মাছ তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুভাষ দেবনাথ,শিক্ষিকা রচিতা সাউ,অমলা রায়,দেবদত্ত দাস।আর সেই জন্যই বিদ্যালয়ে পড়ে থাকা ছোট্ট একটি পুকুরে শুরু হয় মাছ চাষ।পুকুরের এই মাছ যতদিন থাকে ততদিনই বিদ্যালয়ের ১০২ জন পড়ুয়ার মিডডে মিলের পাতে পড়ে মাছের ভাজা।
ত্রিশা দাস,অর্ণব বেরা,ফোফিজুল মোল্ল্যার মতো ক্ষুঁদে ছাত্র ছাত্রীরা মিডডে মিলের সাথে বিদ্যালয়ের পুকুরের জ্যান্ত মাছের ভাজা খেয়ে আনন্দে আত্মহারা।
পড়ুয়াদের মিডডে মিলের পাতে মাছ কেন? এমন প্রশ্ন শুনেই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুভাষ দেবনাথের সোজা সাপটা জবাব “আমাদের এই বিদ্যালয়ে বেশীর ভাগ ছাত্রছাত্রী অত্যন্ত দরিদ্র। তাদের পুষ্টির প্রয়োজন।সেই পুষ্টি জোগাতে আমরা বিদ্যালয়ের পড়ে থাকা পুকুরে মাছ চাষ করে পড়ুয়াদের খাওয়ার পাতে তুলে দিতে পেরে খুশি। কারণ এই নব প্রজন্মের পড়ুয়ারা আমাদের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।”
মিডডে মিলে বাড়তি সংযোজন মাছ,এমন ঘটনা প্রসঙ্গে বাসন্তীর বিডিও সৌগত সাহা বলেন “এটা খুবই ভালো উদ্যোগ।তারপর সুন্দরবনের পিছিয়ে পড়া ব্লক বাসন্তী।সেই বাসন্তী ব্লকে পিছিয়েপড়া মানুষজনেরা তাঁদের শিশুদের কে শিক্ষার জন্য স্কুলে পাঠাচ্ছেন। তাদের পুষ্টিরও প্রয়োজন।শিশুদের পুষ্টির জন্য রাজ্য সরকারের পাশাপাশি স্কুল শিক্ষকদের এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়।”
অন্যদিকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংংসদের  সদস্য নিমাই মালী বলেন “সুন্দরবনের বুকে এমন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ভালো।শিশুদের পুষ্টির জন্য যদি মিডডে মিলে স্কুল বাড়তি সংযোজন করে উদ্যোগ নেয় তাতে খারাপের কিছু নেই ববং ভালো উদ্যোগ।”