শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বৌভাত অনুষ্ঠানে শিশুদের হাতে চারা উপহার নববধুর , ভিডিয়ো

News Sundarban.com :
ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২০
news-image

ক্যানিং – ছেলের বিয়ে বলে কথা। এলাকার সকল লোকজন আত্মীয় বন্ধুবান্ধব ভেবেছিলে বিশাল যাঁকজমক হইহোল্লা করে বিয়ে দেবেন ছেলেকে।শেষমুহূর্তে সেই যাঁকজমক এর পরিবর্তে ছেলের বিয়ের বৌভাত অনুষ্ঠানে অসহায় শিশুদের পেটপুরে খাওয়ানোর পাশাপাশি তাদের হাতে চারগাছ ও বই,খাতাপত্তর উপহার তুলে দিয়ে সুন্দরবনের বুকে এক অনন্যভিন্ন নজির স্থাপন করলেন সমাজসেবী তথা শিক্ষক অমল নায়েক।আর এমন নজীর দেখে হতবাক হয়েগিয়ে সাক্ষী থাকতে বাধ্য হলেন বৌভাত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হাজার হাজার ভিআইপি অতিথী অভ্যাগতরা।কোথাও কোন মাইকের আওয়াজ নেই। শুনসান চেহারা।ঘটনাস্থল বাসন্তীর শিবগঞ্জ। এরই মাঝে জ্যোস্নার স্নিগ্ধ চাঁদের আলোয় উজ্জ্বল বিয়ে বাড়ীর বৌভাত অনুষ্ঠান।হাজার হাজার অতিথী বৌভাত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত।আমন্ত্রিত অতিথীদের মধ্যে আশি শতাংশই ভিআইপি।এত সব ভিআইপির আনাগোনার মধ্যে ছোট্ট একটি ম্যাজিক গাড়ী প্রবেশ করলো।গাড়ী থেকে নেমে এল সাধারণ পোশাক পরিহিত অসহায় জনাকুড়ি কচিকাঁচা।সাথে অভিভাবক অমল পন্ডিত। সাধারণ ধুতি পাঞ্জাবি পরিহিত পাকাদাড়িতে আবৃত তাঁর মুখ। তাঁকে দেখেই অভ্যর্থনা জানিয়ে আদর আপ্যায়ণ করে অনুষ্ঠান বাড়ীর মধ্যে নিয়ে গেলেন অমল নায়েক। এমন অসহায় কচিকাঁচাদের বৌভাত অনুষ্ঠানে হাজীর হতে দেখে অনেকেই ভুরু কুঁচকে উঠেছিলেন।
বধূবরণ অনুষ্ঠানের দিন রাতে গণমান্য অতিথিদের সাথে আমন্ত্রিত ছিল এই সমস্ত অসংখ্য অসহায় দরিদ্র শিশুরাও।তাদেরকে অমল নায়েক স্বহস্তে পরিবেশন করে খাওয়ালেন ছেলের বৌভাত অনুষ্ঠানে।খাওয়ার শেষে নববধু সুমনা’র হাতদিয়ে অসহায় নবপ্রজন্মের শিশুদের হাতে তুলে দিলেন চারাগাছ ও বেশকিছু পড়াশোনার সামগ্রী।
“সুন্দরবনকে বাঁচাতে ছেলের বৌভাত অনুষ্ঠানে নবপ্রজন্মের কাছে ছেলে অর্ঘ্য ও নববধু সুমনা’র হাত দিয়ে সেই বার্তা দিলেন বিশিষ্ট সমাজসেবী তথা শিক্ষক অমল নায়েক। চারাগাছ রোপন ও তার রক্ষণাবেক্ষনে যত্নবান হলে তবেই বাঁচবে পরিবেশ, রক্ষা পাবে সুন্দরবন।শ্বশুর মশাই এর এই অভিনব উদ্যোগে যারপরনাই খুশি নবাগতা বধূ সুমনাও।
আমন্ত্রিত অতিথি অরিন্দম আচার্য্য,প্রভুদান হালদার’রা এহেন সামাজিক উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে অভিনব কর্মকান্ডকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন।
তাঁদের দাবী শিক্ষক অমল বাবুর মতো সকলে যদি ভাবতে পারতেন,তাহলে এই ভগ্নধরা সমাজে পুনরায় নবজাগরণ সৃষ্টি হতে বাধ্য। ঘুঁচে যাবে সকল ভেদাভেদ অন্ধকার।ধনী গরিব উচ্চ নীচ ভেদাভেদ ভুলে সকলে একই ছত্রছায়ায় মানবিকতার শিক্ষার মন্ত্রে দীক্ষিত হতে পারবে গড়ে উঠবে মহামানবের মিলনক্ষেত্র।
উল্লেখ্য অমল আলোয় আলোকিত সুন্দরবনের বাসন্তী।দুটি নামই অমল। একজন অমল পন্ডিত অপরজন অমল নায়েক। দুজনের বাড়ী বাসন্তী ব্লকে। দুজনেই সমাজসেবী ও শিক্ষক। তবে বর্তমানে পন্ডিত বাব শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়েছেন। সুন্দরবনের এই দুই শিক্ষক শিক্ষকতার পাশাপাশি সমাজের জন্য বিভিন্ন ধরনের সামাজিক উন্নয়ণের কাজ করে চলেছেন। বিশেষ করে সুন্দরবনের অসহায় দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েদের মানুষ করে প্রকৃত মানুষ গড়া।ইতিমধ্যে দুই অমলই তাদের এই চিন্তাভাবনা কে সাফল্য করে আগামী প্রজন্মের কাছে বার্তা দিতে সক্ষম হয়েছেন। মানুষ গড়ার পাশাপাশি অমল নায়েক সুন্দরবনের ব্যাঘ্রবিধবাদের পাশে দাঁড়িয়ে স্বনির্ভরতা করে তাদের কে দারিদ্র দূরীকরণর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।ইতিমধ্যে সফলতাও পেয়েছেন।আর বাসন্তী তথা সুন্দরবনের গর্ব দুই অমলের গর্বে গর্বিত সাধারণ মানুষজন।
বৌভাত অনুষ্ঠানে কচিকাঁচাদের হাতে পড়ার সামগ্রী আর চারা গাছ উপহার দেখে অমল পন্ডিত বলেন “অমল নায়েক আমার থেকে অনেক ছোট। কিন্তু আজকে বৌভাত অনুষ্ঠানে যেভাবে শিশুদের হাতে চারাগাছ তুলেদিয়ে সুন্দরবন কে বাঁচানোর আহ্বান জানিয়েছে তা আমার শেষজীবনের এক অপূরণীয় শিক্ষা ও অভিঞ্জতা দিয়ে গেলো।”