বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হিন্দু পরিবারের মৃতদেহ নিয়ে সৎকারে এগিয়ে এলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ, ভিডিয়ো

News Sundarban.com :
জানুয়ারি ২৯, ২০২০
news-image

বিশ্লেষণ মজুমদার,ক্যানিং:

বর্তমানে রাজ্য থেকে শুরু করে সমগ্র দেশ উত্তাল এনআরসি সিএএ নিয়ে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজনের ভ্রাতৃত্ববোধ চিত্র পরিষ্কার হয়ে দেখা গেল। খোদ প্রায় ৭০ শতাংশ মুসলিম অধুষ্যিত এলাকা ঘুটিয়ারী শরীফের মনসাপুকুর এলাকায়।
দেশ জুড়ে সাম্প্রদায়িতকা নিয়ে উত্তাল,হিন্দু পরিবারের মৃতদেহ নিয়ে সৎকারে এগিয়ে এলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। এমনই নজীর বিহীন ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ক্যানিং ১ ব্লকের বাঁশড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মনসাপুকুর গ্রামে। স্থানীয় সুত্রে জানা যায় ,মনসাপুকুর গ্রামের বাসিন্দা বছর সত্তরের বৃদ্ধ মানু মিস্ত্রীর আর্থিক অনটন থাকায় ভিক্ষা বৃত্তি করে দীনযাপনণ করতেন। কখন ট্রেনে,বাসে,ষ্টেশনে কখনওবা রাস্তার ফুটপাথে বসে ভিক্ষা করতেন মানু মিস্ত্রী।এর পাশাপাশি মুসলিম ভাইয়ের বাড়ীতে গিয়েও ভিক্ষা করতেন। কখনও কখনও মুসলিম বাড়ীতে রাত্রী যাপণও করতেন বলে জানা যায়।ইদানিং বার্ধক্যজনিত কারণে বেশ কিছুদিন তার শরীর অক্ষম হয়ে যায়।মাঝে মধ্যে গ্রামের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজনেরা তাকে স্থানীয় চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় চিকিৎসার জন্য।কিন্ত শেষ মুহূর্তে তার শরীর আরো অবনতি হয়ে পড়ে।বাড়ীতেই শয্যাশায়ী অবস্থায় পড়ে থাকেন।সোমবার সন্ধ্যা ছটা নাগাদ মৃত্যু হয় মানু মিস্ত্রীর।মানুর পরিবার বলতে কেউ না থাকায় কি করবেন ভেবে উঠতে পারছিলেন না তার ভাগ্নে সন্ন্যাসী মিস্ত্রী ও ভাগ্নের স্ত্রী। কান্না ভেঙে ও পড়েন। ইতি মধ্যে খবর পেয়ে মানুর বাড়ীতে রাতেই হাজীর হন হাজী মহম্মদ মোজাম্মেল সরদার,মৌলানা সেখ মহম্মদ হুসাইন,ফজলুর রহমান মোল্ল্যা,রাজ্জাক সরদার,সফিউদ্দিন সরদার,ফকির মহম্মদ সরদার,আবুল কাশেম সরদাররা। তাঁরা মৃতের পরিবারের তার ভাগ্নের সাথে কথা বলেন । কিভাবে সৎকার হবে সে বিষয়ে। এরপর দরিদ্র পরিবারে সমস্ত অক্ষমতার কথা শুনে হাজী মহম্মদ মোজাম্মেল সরদার,মৌলানা সেখ মহম্মদ হুসাইন সিদ্ধান্ত নেন তারাই মানু মিস্ত্রীর সৎকার থেকে শ্রাদ্ধ শান্তি সমস্ত ক্রীয়া কার্য করবেন হিন্দু ধর্মীয় মতে। সেই মতো এই সমস্ত মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন মঙ্গলবার সকালে একত্রিত হয়ে মানু মিস্ত্রীকে স্থানীয় একটি শশ্মানে নিয়ে যায় দাহ করার জন্য।
শুরু হয় দাহ করার তোড়জোড়। হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনেরা মিলিত ভাবে চিতা সাজিয়ে সৎকার শেষ করে চিতভষ্মে জলও ঢালেন।আর এমন অসহায় সময়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন সাহায্য সহযোগিতা করে পাশে দাঁড়ানোয় কৃতঞ্জতা প্রকাশ করেছেন মানুর ভাগ্নে সন্ন্যাসী মিস্ত্রী।

এমন ঘটনা শুনে ক্যানিং ১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তথা ক্যানিং ১ ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি পরেশ রাম দাস বলেন ”আমরা মানুষ। কে কোন ধর্মের তা ভেদাভেদ করতে রুচিতে বাধে।ফলে আজকের দিনে যে ভাবে মুসলিম ভাইয়েরা হিন্দু ভাইয়ের সৎকারে হাজীর হয়ে একাগ্রতার সাথে ভ্রাতৃত্ববোধ অক্ষুন্ন বজায় রেখেছে। তাতে করে হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজনদের কে আগামী দিনে আরো বেশী করে উদ্যোগ নিয়ে এমন জনহিতকর কাজ করে অশুভ শক্তিকে পরাজয় করতে হবে।”
অন্যদিকে এমনই আশ্চর্য্য জনক ঘটনা প্রসঙ্গে বিশিষ্ট শিক্ষক ও সমাজসবী মৌলানা আনোয়ার হোসেন কাসেমি বলেন “কোন অশুভ শক্তি আমাদের এই ভ্রাতৃত্ব বোধের অটুট বাঁধন ভাঙতে পারবে না। আগামী দিনে তার উজ্জ্বল এই দৃষ্টান্ত নজীরবিহীন ঘটনা সাক্ষী বহন করবে সমগ্র দেশ তথা বিশ্বে”।