বাঘের আক্রমণে স্বজন হারিয়েও সেই বাঘকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলেন বিধবা বধু
বিশ্লেষণ মজুমদার, ক্যানিং:
নিজের স্বামীকে বাঘ তুলে নিয়ে গেছে।তা স্বত্বেও সেই হিংস্র বাঘ কে তার শত্রুর হাত থেকে বাঁচানের উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে এলেন প্রত্যন্ত সুন্দরবনের দরিদ্র এক গৃহবধু শান্তি দাস।দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার প্রত্যন্ত সুন্দরবনের পিছিয়েপড়া বাসন্তী ব্লকের ঝড়খালী গ্রামপঞ্চায়েতের ৪নং নেহরু পল্লীর বাসিন্দা শান্তি দাস। তিনি সুন্দরবনের বাঘ রক্ষা করার জন্য নাইলন জাল বুনে চলেছেন। এই জাল দিয়েই সুন্দরবনের জঙ্গলকে ঘিরে রাখা হয়।যাতে করে কোন চোরা শিকারী জঙ্গলের মধ্যে প্রবেশ না করতে পারে এবং জঙ্গল পেরিয়ে বাঘ লোকালয়ে না চলে আসে।উল্লেখ্য গত ২০১৯ এর ৭ ফেব্রুয়ারি শান্তি দেবীর স্বামী সুন্দরবনের নদীখাঁড়ীতে মাছ,কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারায়।সংসারের একমাত্র উপার্জনকারীর অকাল প্রয়াণে শান্তিদেবীর সংসারে নেমে আসে ঘণ অন্ধকার। তারপর থেকে বহু কষ্টের মধ্য দিয়ে তাঁর জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। স্বামী হারানোর পর থেকে শান্তি দেবীর সংসার অচল হয়ে পড়ে। সরকারি ভাবে তেমন কোন সুযোগ সুবিধা না পাওয়ায়,তাঁকে অন্যের বাড়িতে দিন মজুরের কাজ করে সংসার চালাতে হয়, তার মধ্যে ছেলে মেয়ের পড়াশোনা ও আছে । সেসব প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে।আর এমন পরিস্থিতিতে এলাকার সেচ্ছাসেবী সংস্থা ঝড়খালী সবুজ বাহিনীর পক্ষ থেকে এলাকায় বাঘের আক্রমণে নিহত পরিবারের মহিলাদের নিয়ে সুন্দরবন রক্ষা করার বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে।বাঘে আক্রান্ত পরিবারে মহিলারা সেখানে জাল বুনে বনবিভাগের কাছে বিক্রী করে সংসার চালাচ্ছে।শান্তি দেবী বলেন “আমি বিধবা হয়েছি। আর যাতে কেউ বাঘের আক্রমণে স্বামীকে হারিয়ে বিধবা না হয় তার জন্য এই জালবোনা পেশাকে বেছে নিয়েছি। শীতের সময় সুন্দরবনের বাঘ লোকালয়ে প্রবেশ করে।এরফলে যেকোনো মুহূর্তে বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারাতে পারে এলাকার মানুষজন।আর সেই জন্য এই জাল দিয়ে ঘিরে রাখা হয় জঙ্গল এলাকা়।বাঘ সহজে যাতে গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করতে না পারে। সুন্দরবনে এমন ব্যাঘ্র বিধবা পরিবারের পরিবারের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছেন।” অন্যদিকে স্বামী কে বাঘে নিয়ে গেলেও সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে প্রত্যন্ত সুন্দরবনের শান্তি দেবী সেই বাঘকে বাঁচানোর উদ্যোগ নিয়েই এমন পেশাবেছে নিয়েছেন। যা সুন্দরবনের বুকে এক বিরল অনন্য দৃষ্টান্ত।