বুধবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দুই রাজ্যের ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ দেবে কংগ্রেসকে : রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা

News Sundarban.com :
অক্টোবর ২৫, ২০১৯
news-image

রাশিদ রিয়াজ 

অতএব, যাহা যেখানে ছিল, তাহা সেখানেই সমাপ্ত হইল। দিনভর উল্লাশের পর সন্ধে নাগাদ একপ্রকার অস্তমিত হল হরিয়নায় কংগ্রেসের সরকার গড়ার যাবতীয় সম্ভাবনা। আর কয়েকটা আসন জোগাড় করতে পারলেই হয়তো এ যাত্রা অঘটন ঘটিয়ে ফেলত কংগ্রেস। কিন্তু প্রশ্ন হল, যে অঘটনের কথা বলা হচ্ছে তা ঘটানোর আদৌ কোনও ইচ্ছা কংগ্রেসের ছিল তো? সংবাদ প্রতিদিন

লোকসভা নির্বাচনে বিপুল পরাজয়ের পর একপ্রকার নির্বাচনে জেতার যাবতীয় আশা জলাঞ্জলি দিয়েছিল হাত শিবির। রাহুল গান্ধী সভাপতিত্ব ছাড়লেন। দীর্ঘদিনের টানাপোড়েনের পর কোনওক্রমে অন্তর্বর্তী সভানেত্রীর দায়িত্ব নিলেন সোনিয়া। এই টানাপোড়েনের মধ্যে পড়ে হরিয়নায় কংগ্রেসের গোটা তিনেক গোষ্ঠী তৈরি হল। প্রভাবশালী ভুপিন্দর সিং হুডাকে মুখ্যমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরা হল নির্বাচনের মাসখানেক আগে। টানাপোড়েনে উপযুক্ত সময়ই পেলেন না হুডা। ফলাফল প্রকাশের পর দু’বারের মুখ্যমন্ত্রী সেজন্যই আফশোস করে বললেন, “আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই ক্ষমতায় ফিরতাম… যদি আর একটু সময় পাওয়া যেত।”

এতো গেল ভোটের আগের পরিস্থিতি। এবার আসা যাক প্রচারের কথায়। হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্র দুই রাজ্যেই জেতার আশা ছিল না কংগ্রেসের। শীর্ষ নেতৃত্ব হতাশায় ডুবে গিয়েছিল আগেই। সেজন্যেই হয়তো দুই রাজ্যের কোথাও প্রচারে গেলেন না সোনিয়া গান্ধী। পাঠালেন না প্রিয়াঙ্কাকেও। রাহুল গান্ধী ভোটের আগে উড়ে গেলেন বিদেশে। কোনওক্রমে শেষদিকে এসে হরিয়ানা আর মহারাষ্ট্রে ৩টি আর ২টি করে জনসভা করলেন। বিজেপি নেতৃত্ব কিন্তু এতদিন থেমে থাকেনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে হরিয়নায়ার মতো ছোট রাজ্যে ৭টি জনসভা করেছেন। অমিত শাহ করেছেন ১০টি। মহারাষ্ট্রেও কংগ্রেস সেভাবে জোর দেয়নি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তো বটেই স্থানীয় নেতারাও সকলে মাঠে নামেননি। ভোটের আগে কংগ্রেস-এনসিপি ছেড়ে অনেক নেতাই পা বাড়িয়েছেন গেরুয়া শিবিরে। এই পরিস্থিতিতে কর্মীদের মনোবল ভেঙে যাওয়াটা স্বাভাবিক।

এসব সত্ত্বেও এই দুই রাজ্যের ফল কংগ্রেসের জন্য যথেষ্ট আশাপ্রদ। হরিয়ানায় সমস্ত ওপিনিয়ন পোল, এক্সিট পোল যেখানে কংগ্রেসের পনেরোর গণ্ডি পেরোনো নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিল, সেখানে ৩১টি আসন পেয়ে চমকে দিল হাত শিবির। মহারাষ্ট্রে যখন সকলে বলছেন বিজেপি-শিব সেনা জোট দু’শোর গণ্ডি পেরিয়ে যাবে। তখন তাদের ১৬০-এর মধ্যে আটকে দিল কংগ্রেস-এনসিপি। ইউপিএ জোটও একশোর গণ্ডি পেরিয়ে গেল।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ হেন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানার এই ফলাফল প্রমাণ করে কংগ্রেস এখনও ফুরিয়ে যায়নি। লোকসভায় হতাশাজনক ফলের পর যেভাবে কংগ্রেস নেতারা আশা ছেড়ে দিয়েছেন, সেটা না করলে হয়তো ফলাফল অন্যরকম হতে পারত। মহারাষ্ট্রে যেভাবে শরদ পওয়ার লড়লেন, সেভাবে যদি রাহুল গান্ধী বা পৃথ্বিরাজ চহ্বান লড়তেন তাহলে হয়তো ফলাফল অন্য হতে পারত। তেমনি হরিয়ানায় যদি কংগ্রেস হুডাকে আরও সময় দিত, তাহলেও ফলাফল অন্য হতে পারত। ফলাফলের এই ট্রেন্ড বলছে, মানুষ বিকল্প চাইছেন, কিন্তু কংগ্রেস নিজেদের বিকল্প হিসেবে তুলে ধরতে পারছে না। মানুষের এই পরিবর্তনের ইচ্ছেটাই হয়তো আগামী দিনে ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ দেবে হাত শিবিরকে।