শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাসন্তী থানা ও চাইল্ড লাইনের যৌথ প্রচেষ্টা প্রতিবন্ধী শিশু ফিরে পেল তার পরিবার

News Sundarban.com :
জুলাই ৪, ২০১৮
news-image

সিনেমাকে হার মানাবে এ ঘটনা।বাসন্তী থানারর৮ নং তীত কুমার গ্রামের সুনীল হালদার ও সোমা হালদারের দুই মেয়ে । বড় মেয়ে শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী হওয়ায়   মেরে ফেলতে চেয়েছিল পরিবারের লোকজন। অবশেষে মেরে ফেলতে না পেরে গত ২৮ শে মে জীবনতলা থানার সরবেড়িয়ায় একটি খ্রীষ্টান  মিশনারী চার্চে গিয়ে সবার অলক্ষ্যে রাস্তার পাশে বছর চারেকের প্রতিবন্ধী কন্যা কে ফেলে দিয়ে আসে সুনীল হালদারের মা সুশীলা হালদার।
এরপর রাস্তার উপর পড়ে থাকা শিশুর কান্না শুনে নজরে আসে চার্চের সীষ্টার সহ অন্যান্যদের।প্রথমে সীষ্টাররা শিশু টিকে মায়ের স্নেহ দিয়ে আদর করে বুকে তুলে নিলে ও সেই আদর খুব বেশী সময় ধরে রাখতে পারেননি প্রবাদ প্রতিম সকলেরই মা “মাদার টেরিজা” র আদর্শ কে পাথেয় করে চলা সীষ্টাররা।শিশুকন্যা কে উদ্ধার করে এক সীষ্টার ও তার সহকর্মী সুশিলা কুজুর প্রথমে বাসন্তী থানায় গেলে থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারীক সত্যব্রত ভট্টাচার্য্য হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন এবং সহযোগিতা করেন। চার্চের সীষ্টার ও সহকর্মী সুশীলা কুজুর শিশুটিকে কোন ক্রমে ফেলে পালাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বাসন্তী হাসপাতালে অসুস্থ শিশুটিকে ভর্তি না করে পালিয়ে গিয়ে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে আনেন ভর্তি করার জন্য।
বিড়ম্বনার শুরু সেই থেকেই।চার্চের সীষ্টার রা কোন ভাবেই শিশুটির দায়ভার নিতে রাজী নন।এমত অবস্থায় শিশুটিকে কোনক্রমে ক্যানিং হাসপাতালে ভর্তি করে ফেলে রেখে পালানোর চেষ্টা করতে থাকে।দীর্ঘক্ষণ চলে এমনই নাটক। “মাদার টেরিজা”র আদর্শে আদর্শিত সীষ্টাররা ভুলে গেলেন মাদারের কথা,ভুলে গেলেন আর্তদের সেবা করার কথা।“মাদারের আদর্শকে কলুষিত করে কালিমালিপ্ত করলেন চার্চের সীষ্টার ও তার সহযোগী সুশীলা কুজুর”। শিশুটিকে তারা হাসপাতালে দিয়েই কেটে পড়েন। ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে সেদিন প্রায় রাত প্রায় দশটা পর্যন্ত নিরুপায় হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে ক্যানিং থানার এক পুলিশ অফিসার শুভময় দাস চিন্তায় মগ্ন শিশুটিকে কি করবেন। চাইল্ড লাইন অবশ্য জানিয়ে দিয়েছিল পুলিশ সঠিক কাগজ পত্র দিলে শিশুটির দায় ভার নিতে বাধ্য তারা।
একটি শিশু ভালো ভাবে থাকতে পারে তার মা কিংবা মাতৃস্নেহের কোন মহিলার কাছে। সীষ্টার রা চলে যাওয়ায় শিশুটির দেখভাল কিংবা তার কাছে একজন মহিলার প্রয়োজন হওয়ায় মহা ফাঁপরে পড়ে যান পুলিশ অফিসার।ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল আধিকারিক ও দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে ব্যস্ত।
অবশেষে ক্যানিং থানার পুলিশ অফিসার শুভময় দাস এবং চাইল্ড লাইনের বান্টী মূখার্জী ঐ শিশু কন্যাটির সর্বক্ষণের  দেখভাল,পরিচর্যা করার জন্য একজন আয়া রাখার ব্যবস্থা করেন।
এরপর নিঃষ্পাপ শিশুটি ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীনে থাকে।পাশের বিছানায় থাকা রোগীর পরিজনরা অবশ্য শিশুটিকে মাতৃস্নেহে কেউ দুধ,বিষ্কুট খাওয়াচ্ছেন অাবার কেউবা কোলে নিয়ে আদর করছেন।সকলের স্নেহ আদরে সুস্থ হয়ে উঠুক ‘অপরাজিতা’ কিংবা ‘মোনালিসা’ এই নামে মঙ্গল কামনা করতেন অন্যান্য রোগীর পরিবারের লোকজনরা।
মোনালিসা কিংবা অপরাজিতার ভবিষ্যতই বা কি এমনই কথা বলেই কেঁদেই ফেললেন পাশের বেডে থাকা এক রোগীর পরিবার পরিজনরা।
এমনই পরিস্থির সম্মূখীন হয়ে চাইল্ড লাইন ও বাসন্তী থানার পুলিশ আধিকারীকরা শিশুটির খোঁজ করতে থাকেন। অবশেষে ১ লা জুলাই রবিবার শিশুটির পরিবারের খোঁজ পাওয়া যায়। খোঁজ পেয়েই পুলিশ ও চাইল্ড লাইনের সদ্যস্যরা সাথে সাথে বাসন্তী থানার ৮ নং তীতকুমার গ্রামে ঐ শিশুর বাড়ীতে হাজীর হলে শিশুটির ঠাকুমা বাড়ী থেকে পালিয়ে যায়। দীর্ঘ প্রায় ঘন্টা দুই গ্রামের মাঠে ঝোপের মধ্যে চোর-পুলিশের মতো রহস্যময় খেলা চলে। অবশেষে ঐ শিশু কন্যার ঠাকুমা ধরা পড়ে যায় পুলিশের হাতে। বর্তমানে পলাতক ঐ শিশুর বাবা-মা’র ও খোঁজ করছে পুলিশ।
শিশুটির পরিবার খুঁজে পাওয়ায় হাফ ছেড়ে বাঁচলো বাসন্তী থানার পুলিশ ও চাইল্ড লাইন।
বাসন্তী থানার পুলিশ আধিকারীক সত্যব্রত ভট্টাচার্য্য বলেন “ কবিতা নামক শিশুটি যে তার পরিবারের কাছে ফিরে যাবে এটা বড় আনন্দের”।