শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ঘুরে আসা যাক শান্তিপ্রিয় দেশ ভুটান

News Sundarban.com :
এপ্রিল ১৩, ২০১৮
news-image

এশিয়ার ‘শান্তিপ্রিয় দেশ’মনে করা হয় ভুটানকে। দেশটির অবস্থান হিমালয় পর্বতমালার কোলে। সুউচ্চ পর্বতশ্রেণী দ্বারা আবৃত প্রকৃতি এবং অসংখ্য ঝরনা সেখানকার অন্যতম শোভা। স্থানীয় সংস্কৃতিও বেশ সমৃদ্ধ। রয়েছে বিচিত্র সব প্রাণীর অবাধ বিচরণ। অধিকন্তু দেজং (প্রাসাদদুর্গ), বৌদ্ধ মন্দির ও পর্বতের গায়ে অসংখ্য গুহা সেখানকার গৌরবময় প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রয়েছে। যে কারণে ভুটান এই অঞ্চলের অন্যতম পর্যটনসমৃদ্ধ দেশ। দেশটির পশ্চিমে হিমালয়কন্যা নেপাল, উত্তরে তিব্বত এবং পূর্বে ভারতের অরুণাচল প্রদেশ। চলুন জেনে নেয়া যাক ভুটানে গিয়ে আপনি কী কী দেখবেন-
থিম্পু ভ্যালিঃ দেশটির রাজধানী থিম্পু হলেও জায়গাটি কিন্তু ‘থিম্পু ভ্যাল’ নামেই সমধিক পরিচিত। পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম রাজধানী শহর এটি। উচ্চতা ২৩০০ মিটার, অর্থাৎ ৭০০০ ফুটেরও অধিক। একমাত্র রাজধানী শহর হিসেবে সেখানে গেলে অবাক হয়ে দেখবেন রাজপথে কোনো সিগন্যাল বাতি নেই। নেই শব্দটি সেখানে আরও দুটি ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সেখানে কোনো ভিক্ষুক নেই এবং নেই কোনো গৃহহীন মানুষ।
তাশিকো দেজংঃ ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত দালানটি দেশের প্রধান সচিবালয়। একইসঙ্গে এটি পার্লামেন্ট ভবন, রাজার কার্যালয় এবং দেশের ধর্মীয় প্রধানদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রাসাদটি অনেক পুরনো না হলেও এর কারুকাজ আপনাকে মুগ্ধ করবে।
সিমতোখা দেজংঃ এই প্রাসাদ দুর্গটি রাজধানী থেকে আট কিমি দূরে। এটি দেশের অন্যতম পুরনো প্রাসাদ। ১৬২৭ খ্রিস্টাব্দে এটি নির্মাণ করেন দেশের প্রথম রাজা সাবদ্রুং নাওয়াং ন্যামজেল। এখানকার দেয়ালে দেয়ালে যেন ছড়িয়ে আছে প্রাচীন দিনের রাজাদের জীবনযাপনের ইতিহাস।

পারো ভ্যালিঃ ভুটানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এটি। দেশের একমাত্র বিমানবন্দরটি এখানে অবস্থিত। যা পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল অথচ নয়নাভিরাম বিমানবন্দর! চারদিকে পর্বত ঘেরা ভ্যালি আপন প্রাকৃতিক লীলার কারণে ভুটানের সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয় জায়গা। টাইগার নেস্ট নামক দৃষ্টিনন্দন ভবন দেখতে এখান থেকেই যেতে হয়। পৃথিবীর বিখ্যাত ট্র্যাকিং ট্রেইল দ্রুক পাথ ট্রেইলের শুরু এই পারো ভ্যালি থেকে। পারোতে বেশ কয়েকটি দর্শনীয় বৌদ্ধ মন্দির রয়েছে।
জিগমে দর্জি ন্যাশনাল পার্কঃ ভুটানের সর্ববৃহৎ সংরক্ষিত বনাঞ্চল। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম অভয়ারণ্য হিসেবে এই পার্কের অবস্থান শীর্ষে। ভুটানের জাতীয় ফুল ব্লু পপি। বিরল প্রজাতির মনোহর এই ফুল পার্কের ভেতর প্রচুর দেখতে পাওয়া যায়। রয়েছে ম্যাগনোলিয়া, জুনিপার্স ফুল এবং সচরাচর দেখা যায় না এমন বহু প্রজাতির অর্কিড। দৈত্যাকৃতির রুবার্ব এবং অতি পুরনো পাইন ও ওক গাছ রয়েছে প্রচুর। প্রাণীর মধ্যে দেখা মেলে ভুটানের জাতীয় পশু টাকিন, যার শরীর গরুর মত কিন্তু মাথা ছাগলের মত। ভাগ্য ভালো থাকলে আপনি দেখতে পাবেন রেড পান্ডা, গোল্ডেন লাঙ্গুর, লেপার্ড এবং শ্বেত ভালুকসহ অন্যান্য প্রাণী।
পুনাখা ভ্যালিঃ নৈসর্গিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী সুনিপুণ কারুকার্যে শোভিত দেজংগুলি ভুটানের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে যুগ যুগ ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ফু চু (পুরুষ) এবং মু চু (নারী) নামের দুই নদী দ্বারা আবদ্ধ জায়গা এটি।
বুমথাংঃ জায়গাটি টংসা ভ্যালি থেকে পূর্বে। উচ্চতা ২৬০০ মিটার। বায়ু পরিবর্তনযোগ্য নির্মল হাওয়ার প্রবাহ এখানে নিত্য বয়ে যায়। পাশাপাশি দেশের ধর্মীয় নগরী বলেও খ্যাত এ জায়গা। রয়েছে কিছু দৃষ্টিনন্দন অতি প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির।
থাসিংগাংঃএটি ভুটানের সর্ববৃহৎ জেলা। এখানকার দেজংগুলি ১৭ শতকে নির্মিত। থাসিংগাংকে বৌদ্ধ ভিক্ষু ও সন্ন্যাসীদের গৃহনগর বলা হয়। আপনি এখানে লক্ষ করবেন কত নিবিষ্ট মনে ভিক্ষুগণ ধর্মচর্চায় নিজেদের নিমগ্ন রেখেছেন।
চ্যালেলা পাঃ সপারো ভ্যালি থেকে দুই ঘণ্টা উপরের দিকে উঠে যাওয়া পথ ধরে এগিয়ে গেলেই চ্যালেলা পাস চোখে পড়বে। আপনি আর দৃষ্টি ফেরাতে পারবেন না। জায়গাটি এতটাই সুন্দর! শীতে নদী ও ঝরনাগুলো জমে কাঁচের মত স্বচ্ছ হয়ে থাকে। আপনি লক্ষ করবেন আপনার যাত্রা পথের দুপাশে রং বেরঙের ফুলে ফুলে ভরে রয়েছে। থেকে থেকে মৃদু গতিতে তুষার ঝরার ঘটনা এখানে নিত্যদিনের বিষয়। কথিত আছে এই পাস তার ভক্ত পর্যটকদের আহ্বান করে সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। পাসে দাঁড়িয়ে দেখা যায় পর্বতের সাদা চূড়া আর তার নিচে অপরূপ বিস্তীর্ণ উপত্যকাভূমি।