বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

স্তন ক্যান্সার কেন হয়

News Sundarban.com :
মার্চ ২৫, ২০১৮
news-image

স্তন ক্যান্সার একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। পুরুষ এবং মহিলা উভয়েরই এ রোগ হতে পারে, তবে মহিলাদের মধ্যেই এর প্রবণতা বেশি দেখা যায়।স্তনের কিছু কোষ যখন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠে তখন স্তন ক্যান্সার হতে দেখা যায়। অধিকাংশ মহিলাদের জন্য এই রোগ একটি আতঙ্কের কারণ। স্তন ক্যান্সার বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বসহ বেশিরভাগ অঞ্চলের নারীদের মধ্যে রীতিমতো আতঙ্কের নাম। তবে আশার কথা হলো সঠিক সময়ে এর নির্নয়ে আমরা সহজেই এর চিকিৎসা করতে পারি। আজ আমরা স্তন ক্যান্সার কি এবং এর চিকিৎসার কথা জানবো।
কি করে বুঝবেন স্তন ক্যান্সার হয়েছেঃ ১। স্তন কিংবা বগলে চাকা বা দলা অনুভব করা। ঋতুচক্রের সময় অনেক মহিলার ক্ষেত্রে এ ধরনের লক্ষণ দেখা দেয় এবং ঋতুচক্র পরবর্তী সময়ে তা চলেও যায়, এতে ভয়ের কিছু নেই তবে এই লক্ষণ স্থায়ী হলে তা পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন। স্তন ক্যান্সার জনিত এ ধরনের চাকা বা দলায় সাধারণত কোন ব্যথা অনুভূত হয় না তবে এক ধরনের খোঁচা লাগে এমন অনুভূতি হতে পারে।
২। হাতের নিচে অর্থাৎ বগলের কোথাও নির্দিষ্ট কোন কারশ ছাড়াই ফুলে ওঠা।
৩। স্তনের কোথাও লালচে ভাব কিংবা ব্যথা অনুভব করা।
৪। স্তনের কোন অংশ অস্বাভাবিকভাবে দেবে যাওয়া।
৫। স্তনের আকার, রঙ, ত্বকের মসৃণতা কিংবা তাপমাত্রায় তারতম্য পরিলক্ষিত হওয়া। স্তনের ত্বকে লালচে আভা এবং কমলা লেবুর খোসার মত অমসৃণতা দেখা দিলে তা এডভান্সড ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ। এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে কালক্ষেপণ না করে একজন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের পরামর্ষ নেয়া প্রয়োজন।
৬। স্তনবৃন্তে (Nipple) বিশেষ কিছু পরিবর্তন পরিলক্ষিত হওয়া, যেমন- স্তনবৃন্ত দেবে যাওয়া, চুলকানি, জ্বালা পোড়া, খুস্কি অথবা ক্ষত কিংবা ঘা এর উপস্থিতি।
৭। স্তনবৃন্ত থেকে অস্বাভাবিক নিঃসরণ। এ ক্ষেত্রে স্তনবৃন্ত থেকে পরিস্কার, রক্ত যুক্ত কিংবা অন্ন কোন রঙের পাতলা অথবা আঠালো তরল নিঃসরণ হতে পারে।
৮। চামড়ার নিচে কোন ধরনের গুটি অনুভব করা।
৯। স্তনে এমন যেকোনো ধরনের পরিবর্তন যা দৃশ্যতই অস্বাভাবিক।
স্তন ক্যান্সারের প্রতিকার ঃ
যেহেতু এ রোগটির নির্দিষ্ট কোনও কারন এখনো জানা যায়নি, তাই এই রোগ এড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট কোনো উপায় বলা যাবে না। তবে কিছু বিষয় মেনে চলার পরামর্শ দেয়া যেতে পারে। যা বেশ ফলদায়ক।
২০ বছর বয়স থেকে নিজে নিজে ব্রেস্ট পরীক্ষা করুন। ৩০ বছর বয়সের মধ্যে ১ম সন্তান জন্ম দেয়ার চেষ্টা করুন। সন্তানকে বুকের দুধ পান করান। খাবার দাবারের ক্ষেত্রে চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করুন। ফলমূল এবং সবজি বেশী খাওয়ার অভ্যাস করুন। ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘সি’ জাতীয় ফলমূল বেশী খাওয়ার চেষ্টা করুন। যেসব খাবারে বিটা ক্যারোটিন রয়েছে, যেমন গাজর, মিষ্টি আলু এবং সবুজ শাক বেশি বেশি খাওয়ার অভ্যাস করুন। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। যাদের ওজন বেশী অবশ্যই তাদের ওজন কমাতে হবে। মানসিক চাপ থাকলে সাইকোথেরাপিস্টের পরামর্শ নিন। ধর্মীয় অনুশীলন মেনে চলুন। জীবনযাত্রায় নৈতিকতা এবং শৃংঙ্খলা বজায় রাখুন। ধূমপান ও এ্যালকোহল পরিহার করুন। রিস্ক ফ্যাক্টর থাকলে মেমোগ্রাফি করুন। সন্দেহ থাকলে ক্যান্সার সার্জনের শরনাপন্ন হন।
স্তন ক্যান্সারের জন্য সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি ঃ
স্তন ক্যান্সারের জন্য সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল অপারেশন, রেডিওথেরাপিএবং কেমোথেরাপি।অপারেশন প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার রোগীদের জন্য প্রধান পদ্ধতি। এর মাধ্যমে ক্যান্সার কোষগুলো ধবংস করে রোগী সুস্থ করা হয় । কিন্তু অপারেশনে কিছু নিজস্ব সীমাবদ্ধতা রয়েছে। প্রথমত, টার্মিনাল স্তন ক্যান্সার বা দুর্বল রোগীদের জন্য ক্যান্সার কোষ এক্সসিসন করার সময়ে কিছু স্বাভাবিক টিস্যু অপসারণ করতে হয়। দ্বিতীয়ত, অপারেশনের সাহায্যে ক্ষুদ্র টিউমারগুলো সরানো যায় না এবং এদের পুনরাবৃত্তি ও জীবানু ছড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়ে যায়। সুতরাং, অপারেশনের পরে পুনরায় চেক আপ করা উচিত।

রেডিওথেরাপি স্তন ক্যান্সার চিকিত্সায় শুধুমাত্র প্রধান পদ্ধতি নয়, এটি স্থানীয় চিকিত্সার পদ্ধতির মধ্যে অন্যতম। অপারেশন সাথে তুলনা করলে রেডিওথেরাপি রোগীর শরীরে তেমন উপযোগী নয়।যদিও এর চিকিত্সামূলক ফলপ্রসূতা বায়োলজিক্যাল রে এর উপর নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে রেডিওথেরাপি এর মাধ্যমে টিউমার পুরোপুরি ধবংস করা যায় না।অপারেশন চিকিত্সার তুলনায় রেডিওথেরাপি কম কার্যকর।সাধারণত বায়োলজিক্যাল ইম্যুনোথেরাপি রেডিওথেরাপির সাথে প্রয়োগ করে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং জটিলতা কমানো হয় যার ফলে আংশিক ক্ষতি হতে পারে ।

রেডিওথেরাপির মধ্যে কেমোথেরাপি একটি পদ্ধতিগত চিকিত্সা যার শক্তিশালী পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে।কেমোথেরাপি ফলে অস্থি মজ্জা এর হেমাটোপোইটিক সিস্টেমকে নষ্ট করতে পারে যার ফলে ডব্লিউ বি সি এবং প্লেটলেট কমে যায়। চিকিৎসাগতভাবে , বায়োলজিক্যাল ইম্যুনোথেরাপি হেমাটোপোইটিক সিস্টেমের ক্ষতি কমিয়ে কেমোথেরাপি এর অসুবিধা কমাতে পারে।