শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কিশোরীর মুক্তির জন্য সোচ্চার হয়েছেন বিশ্বের খ্যাতিমান নারী তারকারা

News Sundarban.com :
নভেম্বর ২৪, ২০১৭
news-image

কাহিনিটি ১৬ বছরের খুনি এক কিশোরীর! যার মুক্তির জন্য সোচ্চার হয়েছেন বিশ্বের খ্যাতিমান নারী তারকারা। ২০০৪ সালে সাইন্টোনিয়া ব্রাউন নামের মেয়েটি মাথায় গুলি করে ৪৩ বছর বয়সী জনি অ্যালেনকে হত্যা করে। যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যের ন্যাশভিল শহরে এ হত্যাকাণ্ডে মেয়েটিকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত তার আজীবন কারাবাসের আদেশ দেয়।

সাইন্টোনিয়া আদালতে তার জবানবন্দিতে জানায়, বয়ফ্রেন্ড কুথলটের নির্দেশে সেই রাতে একজন যৌনকর্মী হিসাবে সে জনি অ্যালানের সঙ্গী হয়। কিন্তু জনি তাকে অস্ত্রের মুখে কয়েক দফা ধর্ষণ ও প্রচণ্ড মারধর করে। একপর্যায়ে জনি অস্ত্রের দিকে হাত বাড়ালে সে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। আত্মরক্ষার তাগিদে সে তখন বয়ফ্রেন্ডের দেয়া পিস্তল দিয়ে জনির মাথা লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতেই তার মৃত্যু হয়।

আত্মপক্ষ সমর্থনে সাইন্টোনিয়া এসব কথা বললেও প্রসিকিউটররা দাবি করেন, ডাকাতির উদ্দেশেই জনিকে খুন করে সিনথিয়া। এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি, এজন্যই হত্যার পর পরই তার ম্যানিব্যাগ ও অস্ত্র নিয়ে পালিয়ে যায় সে। প্রসিকিউটরদের দাবির সঙ্গে একমত হয়ে জুরিরা মেয়েটিকে ৫১ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন।

সেই কিশোরীটির বয়স এখন ত্রিশের কোঠায়। রায় অনুযায়ী, ৬৭ বছর পূর্ণ হলে সে প্রথমবারের মতো প্যারোলে মুক্তি পাবে।

কিশোরী সাইন্টোনিয়ার জীবনের এমন পরিণতি নিয়ে সম্প্রতি সরব হয়েছেন বহু নারী সেলিব্রেটি। পপ তারকা রিহানা, রিয়েলিটি শো তারকা কিম কার্দাশিয়ান ওয়েস্ট, সুপারমডেল কার ডেলিভিঞ্জনের মতো তারকারা এ নিয়ে স্যোসাল মিডিয়ায় আবেগতাড়িত সব পোস্ট দিয়েছেন। ‘যে মেয়েটির এখনও ভোট দেয়ার মতো বয়সই হয়নি, এমন কঠোর শাস্তি দিয়ে তার জীবন কেন ধ্বংস করা হলো?’ ‘কত ভয়ঙ্কর যৌন নির্যাতনের শিকার হলেই না একজন শিশু এমন মারাত্মক অপরাধ করতে পারে!—তাদের তোলা এমন সব প্রশ্ন নিয়েই সোস্যাল মিডিয়ায় চলছে জোর বিতর্ক।

টুইটারে কার্দাশিয়ান ওয়েস্ট লিখেছেন, ‘যৌন হয়রানির শিকার একটি অল্প বয়সী মেয়ের এমন পরিণতি খুবই কষ্টদায়ক। ওর জন্য যেটা ঠিক হবে, আমাদের সেটাই করতে হবে। এ ব্যাপারে কী করা যায়, তা নিয়ে আমার আইনজীবীদের সঙ্গেও আমি পরামর্শ করছি।’

ইনস্টাগ্রামে আবেগাপ্লুত এই তারকা ওই মামলা সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা সবাই শিশুটির এমন পরিণতির জন্য দায়ী। আমি প্রার্থনা করছি, আপনাদের কারোই যেন কোন সন্তানই না হয়!’

জনপ্রিয় পপ তারকা রিহানাও কার্দাশিয়ানের সঙ্গে একমত হয়েছেন। সুপারমডেল কারা ডেলিভিঞ্জনে ইনস্টাগ্রামে তার চার কোটি ভক্তের উদ্দেশে কার্দাশিয়ানের পোস্টটি শেয়ার করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘বিচারব্যবস্থা এখনও পড়ে রয়েছে সেই আদিম যুগেই। এমন সিদ্ধান্ত নেয়া নেহায়েতই পাগলামি!’

ধারণা করা হচ্ছে, সাইন্টোনিয়ার জীবন নিয়ে চলচ্চিত্রনির্মাতা ড্যানিয়েল বিরমানের ‘মি ফেসিং লাইফ’—শিরোনামের প্রামাণ্যচিত্রটিই তারকাদের এমন সব পোস্ট দিতে উৎসাহিত করেছে। মেয়েটির গ্রেফতার থেকে শুরু করে হাজতবাস এবং দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর সাজা ঘোষণা পর্যন্ত পুরো ঘটনাই প্রামাণ্যচিত্রটিতে তুলে এনেছেন ড্যানিয়েল।

এদিকে, সাইন্টোনিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য আদালতে আইনি লড়াই চালানো সহকারী জেলা অ্যাটর্নি জেফ বার্কস বলেছেন, ‘মেয়েটি কোন মামুলি অপরাধ করেনি। সে একজন ভয়ঙ্কর খুনি। সে যা যা করেছে সবই স্বেচ্ছায় করেছে। সুতরাং তার অপরাধ ভুলে গেলে চলবে না।’

সাইন্টোনিয়া যদিও এখনও কারাগারে সাজা ভোগ করেছেন, কিন্তু মেয়েটির প্রতি যে জনসমর্থন গড়ে উঠছে তাতে তার অবস্থা বদলে যাবে বলে আশা করছেন তার সমর্থক-স্বজনরা। প্রেসিডেন্টের কাছে সিনথিয়ার অপরাধ মার্জনার জন্য অনলাইন পিটিশনে এরইমধ্যে ১ লাখ ৮৬ হাজার মানুষ সই করেছেন। সূত্র: বিবিসি