শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে : খালেদা জিয়া

News Sundarban.com :
নভেম্বর ১৩, ২০১৭
news-image

এম এ আহাদ শাহীন :

বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

রোববার ঢাকার এক সমাবেশে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আরও অভিযোগ করে বলেন, এজেন্সির লোক পাঠিয়ে প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে এবং তাকে দেশে ফিরতে না দেওয়া হয়নি।

এছাড়া বেগম খালেদা জিয়া নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচন, বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচনকালীন সেনাবাহিনী মোতায়েন, শেখ হাসিনার অধিনে ও ইভিএম দিয়ে নির্বাচন নয়, দেশে সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে গণতন্ত্র, সুশাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠাসহ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সকল প্রকার মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, তার দল ক্ষমতায় এলে বেকার ভাতা চালু, সকল ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্নাতক পর্যন্ত বিনামুল্যে পড়ালেখার সুযোগ। মেয়েদের উপবৃত্তি, বিনামুল্যে চিকিৎসা, সবার জন্য স্বাস্থ্য বীমা, চাকরির ব্যবস্থা, কৃষকদের কৃষি উপকরণ ভর্তুকি, গ্রামে কর্মসংস্থানে ব্যবস্থা করা হবে।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর দল বিএনপি আয়োজিত জনসভা বেলা পৌনে ২টায় শুরু হয়। জনসভায় বেলা ৪টা ১০ মিনিটে বক্তব্য শুরু করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

এর আগে বেলা ২ টা ১৫ মিনিটে গুলশানের বাসা ফিরোজা থেকে জনসভায় যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে বের হন। বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে খালেদা জিয়া জনসভামঞ্চে উঠেন। এ সময় দলের নেতাকর্মীরা মুর্হুমুহু শ্লোগান এবং করতালির মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান। তিনি হাত উঁচিয়ে নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছার জবাব দেন।

প্রধান বিচারপতির পদত্যাগে বাধ্য করা :
প্রধান বিচারপতিকে পর্যন্ত জোর করে অসুস্থ বানিয়ে, তাকে জোর করে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিদেশে এজেন্সির লোক পাঠিয়ে তাকে চাপ দিয়ে পদত্যাগ পত্র নিয়ে আসা হয়। তিনি চেয়েছিলেন দেশে ফিরে আসতে। কিন্তু তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। তিনি কিছু সত্য কথা বলেছেন। তারা নিম্ন আদালতকে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, এখন উচ্চ আদালতকে নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়।

বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন :
বিএনপি জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে চায় জানিয়ে প্রাক্তন এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশনে আমাদের কিছু কথা ইসির সংষ্কারের জন্য দিয়ে এসেছি। বলেছি যদি সুষ্ঠু নিবাচন অবাধ করতে হয় তাহলে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। আজকে নির্বাচন কমিশনকে বলি, সেনা মোতায়েন করতে হবে, ইভিএম হবে না। ইসিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি সরকারের অন্যায় আদেশ মানতে পারেন না। নির্বাচন কমিশনারদের বলতে চাই, অবাধ নির্বাচন করার দায়িত্ব আপনাদের। ইভিএম বন্ধ করতে হবে। বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন করতে হবে। নির্দলীয় সরকারের ব্যবস্থা করতে হবে। পুলিশ বাহিনীও থাকতে এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

খালেদা জিয়া বলেন, হাসিনার গুন্ডা বাহিনীর হাতে অবৈধ অস্ত্র। তারা মানুষকে খুন করছে। সেনা না দিলে হাসিনার গুন্ডা বাহিনী কেন্দ্র দখল করে অত্যাচার চালাবে। এদেশের মানুষ ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে পরিবর্তনের জন্য ধানের শীষে ভোট দিয়ে দেখিয়ে দেবে যে জিয়াকে ভুলে নাই। তিনি আছেন মানুষের মনে।

সরকার ছোট মনের পরিচয় দিয়েছে:
সমাবেশে আসতে নেতাকর্মীদের সরকার বাধা দিয়েছে অভিযোগ করে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, জনসমাগম ঠেকাতে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকে সরকার পরিকল্পিতভাবে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। এর দ্বারা কৃত্রিম যান সংকট সৃষ্টি করে সমাবেশে আসতে বাধা দেয়া হয়েছে। শুধু কী তাই, আমিও যাতে আপনাদের সামনে পৌঁছুতে না পারি, আমার বাড়ির সামনে থেকে গুলশান পর্যন্ত বাস দিয়ে রাস্তা আটকে দেওয়া হয়েছে। বাসের ড্রাইভার নেই। এরা যে এতো ছোট মনের, সেটা আজকে প্রমাণ করে দিলো। এতো ছোট মন নিয়ে রাজনীতি করা যায় না।

সরকারি চাকুরিজীবীদের উদ্দেশ্যে :
খালেদা বলেন, এই সরকার হয়তো আপনাদের বলে বিএনপি ক্ষমতায় এলে আপনাদের চাকরি যাবে মামলা হয়রানি শিকার হতে হবে। কিন্তু না। আমরা আগেই বলেছি আমার হিংসাত্মক রাজনীতি করি না। সরকারি আদেশ নিষেধ মেনে চলাই আপনাদের দায়িত্ব। আমরা দেখবো সরকারি চাকরিতে কে কতটা যোগ্য। সেখানে বিএনপি বা আওয়ামী লীগ বলতে কিছু নেই। যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতের তাদের চাকরির পদোন্নতি হবে। আপনারা নির্ধিদ্বায় কাজ করতে পারেন।

তাদের ক্ষমা করা হবে :
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। এ জন্য বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের ছেলেদের প্রতিনিয়ত সরকার জেলে পুড়ছে। গত দশটি বছর ধরে কতো জুলুম অত্যাচার করেছে তার হিসাব নাই। আমি বলেছি তাদের ক্ষমা করে দেবো।

১০ টাকার কেজি চাল ৭০টাকা :
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সরকার এই দেশকে শেষ করে দিয়েছে। ২০০৮ সালে কথা দিয়েছিলো ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে। আজ ৭০ টাকা মানুষ চাল খাচ্ছে কেন? জনগণে জবাব চায়, জানতে চায়। প্রতিটি সবজি তরিতরকারির দাম ৭০-৮০ টাকার নিচে নয়। পিয়াজ ১’শ টাকা। জিনিসপত্রের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এই অবস্থায় আবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে।

জাতীয় ঐক্যের রাজনীতি চাই :
দেশের মানুষের জন্য কিছু কাজ করতে চাই। সংঘর্ষের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আমরা রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে চাই। জাতীয় ঐক্যে রাজনীতি করতে চাই। আলাপ আলোচনা ছাড়া তা সম্ভব নয়। আমরা জবাবদিহিতামুলক সংসদ দেখতে চাই। সরকারি দল ও বিরোধী দল মিলে আলোচনা করে কোনো সমস্যা হলে সমাধান করবে। এজন্য অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তা সম্ভব। একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে তা হতে পারে। আামি আপনাদের কাছে জিজ্ঞেসা করতে চাই হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। আপনারা ভোট দিতে পারবেন ? এ সময় সমস্বরে উপস্থিত মানুষ না বলে সায় দেন।

রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে হবে:
দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা রোহিঙ্গা সমস্যা। এটি শুধু অবৈধ ভোটারবিহীন সরকারের সমস্যা নয়। তাই একসাথে বসে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।

ক্ষমতায় এলে শুদ্ধি অভিযান :
বিএনপি ক্ষমতায় আসলে অনেক মানুষ মেরে ফেলবে বলে ক্ষমতাসীনদের বক্তব্যে জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির মানুষ মারার রাজনীতি করে না। বরং ক্ষমতায় এলে দেশে শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে। আওয়ামী লীগের নেতাদের ভালো করবো।

জনসভার জন্য উদ্যানে ৬০ ফুট লম্বা ও ৩০ ফুট প্রশস্ত মঞ্চ নির্মাণ
করে বিএনপি। মঞ্চের চারপাশে বসানো হয় সিসি টিভি ক্যামেরা। বেলা ২টায় সমাবেশ শুরু হবার আগেই সকাল থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঢল নামে। এসময় জাতীয়তাবাদী সাস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) উদ্দোগে বিএনপি, জিয়াউর রহমান এবং তারেক রহমান নিয়ে তৈরি করা বিভিন্ন গান, নাটক, কবিতা পরিবেশন করা হয়। পুরো জনসভা সুশৃঙ্খল রাখতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলের দুই হাজারের বেশি নেতাকর্মীদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করা হয়।