বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সু চির বক্তব্য অসত্যের মিশ্রণ ও ভুক্তভোগীদের দোষারপের: অ্যামনেস্টি

News Sundarban.com :
সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭
news-image

রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া মিয়ানমারের নেত্রী ও রাষ্ট্রীয় পরামর্শক অং সান সু চির ভাষণের সমালোচনা করেছে লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

দীর্ঘদিন নিরব থাকার পর মঙ্গলবার ওই ভাষণ দেন সু চি। এর পরপরই সংস্থাটির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়র আঞ্চিলক প্রধান জেমস গোমেজ এক বিবৃতিতে সু চির ভাষণের সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নিয়ে সু চির বক্তব্য শুনে বোঝা যাচ্ছে, তার দল ও তিনি এখনও বালুতে মুখ গুঁজে রয়েছেন। তার বক্তব্য অসত্যের মিশ্রণ ও ভুক্তভোগীদের দোষারপের।

জেমস গোমেজ বলেন, হত্যা ও বাস্তুচ্যূত করার মাধ্যমে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের দেশটির নিরাপত্তারক্ষীরা সেখান থেকে তাদের নির্মুল করছে; এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর সহিংসতা বন্ধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘন না করার আহ্বান জানান অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়র আঞ্চিলক প্রধান।

রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে মঙ্গলবার সকালে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক টেলিভিশনে ভাষণে আন্তর্জাতিক মহলের সতর্কবার্তায় মিয়ানমার সরকার ভীত নয় বলে জানিয়েছেন অং সান সু চি।

তিনি বলেন, আমরা সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বেআইনি সহিংসতার নিন্দা জানাই। রাখাইন রাজ্যজুড়ে আইনের শাসন, স্থিতিশীলতা ও শান্তি পুন:প্রতিষ্ঠায় আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেখানে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ রয়েছে। আমাদের সবার অভিযোগ শুনতে হবে। আমাদের পদক্ষেপ নেওয়ার আগে নিখাঁদ প্রমাণের ভিত্তিতে এসব অভিযোগের বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে- যোগ করেন সু চি।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিতর্কিত এই নোবেলজয়ী তার বক্তৃতায় আরো জানান, বার্মা একটি জটিল জাতি। বর্তমানে উদ্ভূত সমস্যা এর জটিলতা আরো ঘণীভূত করেছে। তবে যত দ্রুত সম্ভব সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সংকট সমাধানের প্রত্যাশা করে জনগণ।

রাখাইনে তার দেশের সেনাবাহিনীর নির্বাচারে রোহিঙ্গাদের হত্যা ও অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি সু চি। বরং তিনি বলেন, ৫ সেপ্টেম্বর থেকে সেখানে কোনো ‘সশস্ত্র সংঘর্ষ অথবা ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ হয়নি।

সু চি বলেন, রাখাইন থেকে মুসলমানদের পালিয়ে বাংলাদেশে যাওয়ার খবরে তারা উদ্বিগ্ন।

সু চির ভাষণ নিয়ে অনেকের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও, তা শোনার পর অনেকে হতাশ হয়েছেন। অং সান সু চি তার ভাষণে বলেন, চার লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান কেন বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে, সে সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না।

জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান যখন বলছে যে, রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ‘জাতিগতভাবে নির্মূল’ করা হচ্ছে, তখন রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সু চি অবগত না থাকা (?) বেশ হতবাক করে।

রাখাইন অঞ্চলে সেনাবাহিনীর নিপীড়ন নিয়ে কিছু না বলায় সু চির এই ভাষণের সমালোচনা হচ্ছে। তার ভাষণ শোনার পর বিবিসির মিয়ানমার সংবাদদাতা জোনা ফিশার বলেন, ‘অং সান সু চির হয়তো বাস্তবতার সাথে সম্পর্ক নেই, নতুবা তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে বাস্তবতা থেকে চোখ ফিরিয়ে রেখেছেন।’

প্রসঙ্গত, গত ২৪ আগস্ট রাখাইনে বেশ কয়েকটি তল্লাশিচৌকিতে কোনো এক বিদ্রোহী গোষ্ঠী হামলা চালায়। এতে নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্যসহ নিহত হন ৭০ জনের বেশি মানুষ। ওই হামলার জন্য দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে দায়ী করে তাদের ওপর নির্বাচারে নির্যাতন ও হত্যা শুরু করে।

এরপর থেকেই রাখাইন ও আরাকান রাজ্য থেকে কক্সবাজারের টেকনাফসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে নাফ নদী পার হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করে। সহিংসতায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছে প্রায় ৫ হাজার মানুষ।

 

জাতিসংঘের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংসতায় গত ২৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ ৯ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশ ঠাঁই নিয়েছে।