শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

অন্তরঙ্গ দৃশ্য, চুম্বন, দারুণ আপত্তি পেহলাজ নিহালিনির

News Sundarban.com :
সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৭
news-image

একজন ব্যক্তি যিনি একাধারে পরিচালক এবং প্রযোজক। তবে এ পরিচয়ে নয়, পেহলাজ নিহালিনি এখন বলিউড পরিচিত ভিন্ন কারণে। ভারতের কেন্দ্রীয় চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের প্রধান হয়ে তিনি গত দুই বছরে পুরো বলিউডের মাথা খারাপ করে গেছেন। তাঁর অতি ‘সংস্কারি’ মনোভাবের কারণে সেন্সর বোর্ডে গিয়ে অনেক ছবিতে নির্বিচারে চলেছে কাঁচি। গত আগস্টে বোর্ডপ্রধানের পদ থেকে পেহলাজ নিহালিনিকে অপসারণ করা হয়। তবে এরপরও খবরের শিরোনাম থেকে মুছে যায়নি তাঁর নাম। এবার নতুন এক কাণ্ড ঘটিয়ে ‘সংস্কারি’ এই ব্যক্তি আবারও আলোচিত বলিউডে। কী ঘটিয়েছেন তিনি? তা জানাতেই এই প্রতিবেদন—

অন্তরঙ্গ দৃশ্য, চুম্বন, স্বল্পবসন, মাদক, গালিগালাজ—এসবে এত দিন দারুণ আপত্তি ছিল পেহলাজ নিহালিনির। ২০১৫ সালে ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশনের (সিবিএফসি) প্রধান হওয়ার পর থেকে সংস্কারের পতাকা হাতে নিয়ে তিনি মাঠে নামেন। বোর্ডে জমা পড়া প্রতিটি ছবি থেকেই গণহারে চুমুর দৃশ্য, কটুবাক্য আর অন্তরঙ্গ দৃশ্য ছাঁটতে শুরু করেন, সেটা সিনেমার গল্পের যত গুরুত্বপূর্ণ অংশই হোক না কেন। নিহালিনি চাইলে সে দৃশ্য ছাঁটতেই হবে। বোর্ডপ্রধানের অ্যাজেন্ডা একটাই, ভারতের ছবিতে শুধু দেখা যাবে স্বচ্ছ, শালীন, মার্জিত দৃশ্য।

কিন্তু এই নিহালিনিই সেন্সর বোর্ডপ্রধানের পদ থেকে অপসারিত হওয়ার পর বদলে গেলেন পুরোপুরি। এ সপ্তাহের শুরুতেই দায়িত্ব ছাড়ার পর নিজের প্রযোজিত প্রথম ছবির ট্রেলার প্রকাশ করলেন, ছবির নাম জুলি টু। আর সেই ছবির ট্রেলারে সংস্কারের কোনো বালাই নেই!

যে পেহলাজ নিহালিনি সেন্সরে দম লাগাকে হাইসার মতো ছবি আটকে দিয়েছিলেন, শুধু একটি দৃশ্যে উন্মুক্ত অবস্থায় একটি অন্তর্বাস দেখা গিয়েছিল বলে; সেই নিহালিনির ছবিতে এখন দেখা গেছে প্রতি শটে নায়িকাকে অন্তর্বাস খুলতে!

জুলি টু ছবিকে বলা হচ্ছে ‘ইরোটিক থ্রিলার’। এ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বলিউডে নাম লেখাচ্ছেন নবাগতা রাই লক্ষ্মী। এক উঠতি বলিউড অভিনেত্রীর বাজারে টিকে থাকার লড়াই দেখানো হয়েছে এ ছবিতে। বলিউডে কিছু অসাধু পরিচালক-প্রযোজক কীভাবে তরুণীদের ব্যবহার করেন ট্রেলারে এর ইঙ্গিত স্পষ্ট। তবে ‘সংস্কারি’ নিহালিনি যে এভাবে এই অসংগতিগুলো তুলে ধরবেন, তা এখন বলিউডের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত। ছবির ট্রেলারে থাকা একটি সংলাপ বলি, ‘এই ইন্ডাস্ট্রি শরীর চায়, গরম-গরম শরীর!’ অথচ প্রযোজক নিহালিনি সেন্সর বোর্ডপ্রধান থাকার সময় এসব কথা তরুণসমাজকে শুনতেই দিতে চাননি। তিনি তো হলিউড ছবি ট্রিপল এক্স: রিটার্ন অব জেন্ডার কেইজ থেকে একটা সামান্য জুস খাওয়ার দৃশ্যও ছেঁটে ফেলেছিলেন। কারণ রঙিন পানীয় পান করতে দেখলে তরুণেরা যদি একে মদ ভাবে, এই ভয়ে!

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোয় এখন পেহলাজ নিহালিনি এক কৌতুকের আখর হয়ে উঠেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতেও তাঁকে ঘিরে হাসির রোল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একনিষ্ঠ ভক্ত নিহালিনি তাঁর এই অবস্থানে এক রাতের মধ্যেই পৌঁছাননি। সেন্সর বোর্ডের প্রধান হওয়ার দিন কয়েক পর থেকেই তিনি বলিউডে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠেন। বোর্ডপ্রধান হিসেবে দেওয়া গণমাধ্যমে প্রথম সাক্ষাৎকারেই তিনি বলেন, মোদি তাঁর আদর্শ ব্যক্তিত্ব। এটুকু বললেও হতো। তবে তোষামুদে নিহালিনি নিজের মোদিপ্রীতি প্রদর্শন থামিয়ে দেননি। সালমান খানের প্রেম রতন ধন পায়ো ছবি সেন্সরের সময় তিনি শর্ত জুড়ে দেন যে ছবির বিরতিতে প্রতি হলে ‘মেরা দেশ হ্যায় মহান’ নামে বিজেপি সরকারের প্রশংসাসূচক একটি গানের ভিডিও বাজাতে হবে।। তা ছাড়া পদ গ্রহণ করেই সাবেক সেন্সর বোর্ডপ্রধান শর্মিলা ঠাকুরকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেও এই ‘সংস্কারি’ সেন্সর বোর্ডকর্তা হন সমালোচিত।

তবে এসবে দমে যাননি পেহলাজ নিহালিনি। একের পর এক কাণ্ড তিনি ঘটাতেই থাকেন। হলিউডের জেমস বন্ড সিরিজের ছবি স্পেকটর থেকে বন্ডের চুমু ছেঁটে ফেলার নির্দেশ দেন, এক বছর আটকে রাখেন অনুরাগ কাশ্যপ প্রযোজিত ছবি হারামখোর, অনুরাগের আরেক ছবি উড়তা পাঞ্জাব-এর ৮৯টি দৃশ্য কাটার নির্দেশ দেন, উড়তা পাঞ্জাব থেকে ছেঁটে ফেলতে বলেন পাঞ্জাব প্রদেশের নাম, নারীবাদী ছবি হওয়ায় লিপস্টিক আন্ডার বোরকাকে সেন্সর দিতে গড়িমসি করেন—এমন আরও কত শত কাণ্ড যে ঘটিয়েছেন এই নিহালিনি। তবে গত ১১ আগস্ট থেকে আর বোর্ডপ্রধানের দায়িত্বে নেই তিনি। গীতিকার ও লেখক প্রসুন জোশিকে পদ দিয়ে তিনি ফিরেছেন তাঁর পুরোনো পরিচয়ে। কিন্তু সেখানে ফিরেই যে ‘সংস্কারি’ নিহালিনি তাঁর খোলস পাল্টে ফেলবেন, তা ভাবেননি অনেকেই। তাই তো এখন বলিউডে এখন তাঁকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশার অন্ত নেই। জুলি ২ দিয়ে তিনি ক্ষমতা হারিয়েও আলোচনার শীর্ষে থাকার অভ্যাস থেকে সরে আসেননি।

আদর রহমান