নামখানা ব্লকের বিবেকানন্দ ওয়েলফেয়ার সোসাইটির ব্যবস্থাপনায় পালন হলো অরণ্য সপ্তাহ

ঝোটন রয়, নামখানা: প্রত্যন্ত সুন্দরবনের নামখানা ব্লকে পালিত হলো অরণ্য সপ্তাহ। দক্ষিণ চন্দনপিড়ি বিবেকানন্দ ওয়েলফেয়ার সোসাইটি এবং পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় ও বন দপ্তরের আয়োজনে দুইদিন ধরে অনুষ্ঠিত হয় অরণ্য সপ্তাহ। প্রথম দিন, শনিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভগবতপুর কুমির প্রকল্পের নদী বাউন্ডারী এরিয়ায় বৃক্ষরোপণ করা হয়। সখানে সুন্দরী, মেহেগিনী, আকাশপাণী, শিশু সহ বিভিন্ন প্রজাতির চারাগাছ লাগানো হয়। এর সঙ্গে ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ সংক্রান্ত আলোচনা হয়। উপস্থিত ছিলেন ভগবতপুরের রেঞ্জ অফিসার তন্ময় চট্টোপাধ্যায়, সঙ্গে ছিলেন বিবেকানন্দ ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সম্পাদক তথা পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ. শান্তনু বেরা সহ বনদফতরের কর্মীগণ।
সুন্দরবন এর আক্ষরিক অর্থ হল সুন্দর জঙ্গল। এই সুন্দরবনকে রক্ষা করার দায়িত্ব রয়েছে আমাদের প্রত্যেকে। প্রতিবছর হাজার হাজার গাছ লাগানো হয় সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা বিশেষ করে নদী বাউন্ডারি এরিয়াতে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বনাঞ্চল নষ্টও হয়ে যায়। তাই এই সুন্দরবনকে রক্ষা করার জন্যই বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করছে দক্ষিণ চন্দনপিড়ি বিবেকানন্দ ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। প্রতিবছরে তাদের বিভিন্ন শিবিরের সঙ্গে সঙ্গে এই সুন্দরবনকে কিভাবে টিকিয়ে রাখা যায় এবং কিভাবে সুন্দরবনের জনজাতিকে আরো বেশি স্বাবলম্বী করে তোলা যায় তার একটা প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে সোসাইটির সম্পাদক শান্তনু বেরা বলেন, সুন্দরবন বাসীদের লড়াই জলে কুমির, ডাঙ্গায় বাঘ, তারপর ঝড়ঝঞ্জা। এর বিপরীতে যেভাবে সুন্দরবনবাসী প্রতিনিয়ত লড়াই করে চলেছে। সেই লড়াইয়ের সাথী হয়েছে এই দক্ষিণ চন্দনপিড়ি বিবেকানন্দ ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। সুন্দরবনের মানুষের জীবন জীবিকা থেকে শুরু করে তাঁদের আশ্রয় এমনকি খাদ্য দিয়ে থাকি। আমরা কোভিড ১৯ থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ইয়াস, বুলবুলের দাপটে সুন্দরবনের মানুষ তখন দিশাহীন হয়ে পড়েছিল। এমত অবস্থায় আমরা ২৬ হাজার মানুষের মুখে খাবার তুলে দিয়েছিলাম। আমরা সুন্দরবন বাসীকে আমাদের ক্ষমতা অনুযায়ী আমরা সাহায্য করে থাকি। আমাদের এই সংগঠন প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে সুন্দরবন বাসির সুখ দুঃখের সাথী হতে। তাঁদের সুবিধা ও অসুবিধাতে তাদের পাশে দাঁড়াতে।
২০২৩ এই সোসাইটি একাধিক কর্মসূচির করেছেন। তার মধ্যে এই বছর এক গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি হল অরণ্য সপ্তাহ পালন এবং এন এস এস প্রোগ্রাম। এই দু দিনের প্রোগ্রামের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ রবিবারের সকাল থেকে নামখানা ব্লক জুড়ে ভ্রাম্যমান প্রাণী চিকিৎসা ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩০ জন ছাত্র-ছাত্রী এবং নামখানা ব্লকের কিছু ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে প্রাণী চিকিৎসা শিবির ও, বিনামূল্যে গরু, ছাগল থেকে শুরু করে হাস, মুরগির ঔষধ ও টিকা দেওয়া হয়। টিকাকরনের শেষে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে একটি প্রাণী সংক্রান্ত সেমিনারের আয়োজন হয়। এদিন প্রায় দুই শতাধিক বিভিন্ন ধরনের ফলের চারা লাগানো হয়। অনুষ্ঠানের শেষে বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রীদের স্কলারশিপ প্রদান করা হয়। দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, ভগবতপুর ফরেস্টের রেঞ্জ অফিসার তন্ময় চট্টোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ. শান্তনু বেরা, ডঃ স্বপন সুর, ডঃ অনির্বাণ গাঙ্গুলী, ডঃ বিনয় চন্দ্র করাক, ডক্টর কেশব চট্টোপাধ্যায়, এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নামখানা পঞ্চায়েত সমিতি প্রাক্তন মৎস্য ও প্রাণী কর্মাধ্যক্ষ অতনু কুমার দাস, বিশিষ্ট সমাজসেবী রবীন্দ্রনাথ বেরা, শিক্ষক কমল কৃষ্ণ মাইতি, বাঁশরী মোহন মন্ডল প্রমূখ ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।