শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সুন্দরবনের বাঘ গণনা : ৫ ডিসেম্বর থেকে ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায় ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু হবে

News Sundarban.com :
নভেম্বর ২৯, ২০২১
news-image

বিশ্লেষণ মজুমদার,ক্যানিং 

বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ সুন্দরবন। উত্তর ২৪ পরগনার ৬ টি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ১৩ টি ব্লক নিয়ে গঠিত ভারতীয় ভূখন্ডের সুন্দরবন। ১০২ টি ছোট বড় দ্বীপ সহ বিভিন্ন নদী,খাড়ি,পশু,পাখি এবং পৃথিবী খ্যাত রয়্যাল বেঙ্গলের বাসভূমি নামে পরিচিত সুন্দরবন। সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা জানার জন্যই প্রতিবছরই সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প বাঘ শুমারি করে থাকে। একই ভাবে করা হয় দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা বনবিভাগের এলাকায়ও। এবার চার বছর পর দেশজুড়ে বাঘ শুমারির সাথে বাঘের খাদ্যের মূল্যায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটি (এনটিসিএ)।

আর সেই কারণে মঙ্গলবার থেকেই পূর্বাঞ্চলীয় কেন্দ্র হিসাবে সুন্দরবনের সজনেখালিতে তিনদিনের বিশেষ প্রশিক্ষণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রশিক্ষণ চলবে বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত। যেখানে বনদফতরের উচ্চপদস্থ আধিকারিক থেকে একেবারে নিচুস্তরের বনকর্মীরা যাঁরা ম্যানগ্রোভের জঙ্গলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও বাঘ শুমারি কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বেন।মূলত বিশ্বের বৃহত্তম বাদাবন বলেই খ্যাত সুন্দরবন। ম্যানগ্রোভ বাদাবনের দেশে সঠিক বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করা অত্যন্ত কঠিনতম কাজ বনদপ্তরের।

ভৌগলিক দিক থেকে বিচ্ছিন্ন এই সুন্দরবন এলাকায় জলে জঙ্গলে নানাবিধ সমস্যার মধ্যেও বনকর্মীরা বাঘের সংখ্যা নির্ধারণের জন্য বিশেষ প্রযুক্তির ক্যামেরা লাগিয়ে আসবেন।পরবর্তী ক্ষেত্রে সেই ক্যামেরাবন্দি বাঘের ছবি দেখেই এবং তার পরেই নির্ধারণ করা হবে ভারতীয় সুন্দরবনের প্রকৃত বাঘের সংখ্যা। অতীতে বাঘের পায়ের ছাপ ও মল সংগ্রহ করেই বাঘের সংখ্যা নির্ধারন করা হতো।পরবর্তী সময়ে সেই পদ্ধতি বাতিল করে ক্যামেরা বসানো হতে থাকে। এক একটি জায়গায় দু’টি করে ক্যামেরা বসাতে হয় যাতে একটি বাঘের দুই দিকের ছবি ক্যামেরাবন্দি হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা সেই বাঘের গায়ে ডোরাকাটা দাগ যা প্রতিটি বাঘের ক্ষেত্রে আলাদা হয় সেগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খ বিজ্ঞানসম্মতভাবে মূল্যায়ন করা হবে।

উল্লেখ্য সুন্দরবনে বিগত বাঘ সুমারিতে বাঘের সংখ্যা উঠে এসেছিল মাত্র ৯৬ টি। এবারের এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত বসিরহাট রেঞ্জ, সজনেখালি ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি রেঞ্জ, ন্যাশনাল পার্ক ইস্ট রেঞ্জ ও ন্যাশনাল পার্ক ওয়েস্ট রেঞ্জের বনকর্মীদের সাথে দক্ষিণ ২৪ পরগনা বন বিভাগের অন্তর্ভুক্ত মাতলা রেঞ্জ,রায়দিঘি রেঞ্জ ও রামগঙ্গা রেঞ্জের বনকর্মীরা অংশ নিয়েছে।

তবে দেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবন আর সেই কারণে ওড়িষ্যার ম্যানগ্রোভ ডিভিশনের পাঁচজন দক্ষ বনকর্মী যুক্ত হয়েছেন এই কাজে। যাঁরা আবার ওখানে বাঘ শুমারিতে অংশ নেবেন। ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কিভাবে জঙ্গলে ক্যামেরা বসানো হবে এবং তা হাতে-কলমে এদিন প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়। সেই সাথে বাঘের খাদ্য অর্থাৎ হরিণ শুকর,বানর সহ অন্যান্য জীবজন্তুর ছবি ও উঠবে ক্যামেরায়। সেই ছবি দেখেও বাঘের খাদ্যের সমস্যা রয়েছে কি না, কিংবা জঙ্গল বাড়ছে না কমছে সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয়গুলো এবার এই ক্যামেরায় ওঠা ছবির মাধ্যমেই তা পর্যালোচনা করা হবে।

আগামী ৫ ডিসেম্বর থেকে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায় প্রথম ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু হবে যা ৩৫ দিনের মধ্যেই সম্পন্ন করা হবে। এর জন্য দশটি বিশেষ দল তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি দলে ১২ থেকে ১৪ জন করে সদস্য থাকবেন। জিপিএস প্রযুক্তি ছাড়াও আত্মরক্ষার্থে থাকবে বন্দুক। ড্রোন ব্যবহার করা হবে। এছাড়া এবার একটি নতুন আপ ব্যবহার করা হবে। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকা তে মোট ১১৬২ টি ক্যামেরা এই বিশেষ ধরনের ক্যামেরা বসানো হবে। যার মধ্যে ৮০০ টি ক্যামেরাই আবার সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের নিজস্ব। বাকি ৪০০ টি ক্যামেরা দিয়ে সাহায্য করছে ডাবলু ডাবলু এফ।

পরবর্তী পর্যায়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা বিভাগীয় বনাধিকারিক এর আওতাধীন সুন্দরবন অঞ্চল রয়েছে সেখানেও একইভাবে ১৩৬ টি জায়গায় এই ক্যামেরা বসানো হবে। সেই ক্যামেরা বসানোর কাজ শেষ হবে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ।

ফলে আগামী কয়েক মাস পরেই নির্ধারণ হয়ে যাবে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা আগের থেকে বাড়ল কিনা। সেই সাথে সুন্দরবন জঙ্গলে বাঘের খাদ্যের ঘাটতি রয়েছে কিনা সে বিষয়টিও পরিষ্কার হয়ে যাবে এই বিশেষ মূল্যায়নের মাধ্যমে।