সাতমূখী বাজারের ঐতিহ্য
নিজস্ব প্রতিনিধি ক্যানিং – সম্ভবত সাল টা ১৯৬২।এলাকায় কোথাও কোন বাজার হাট ছিল না।মাতলা নদীর সাথে সংযুক্ত একটি খালপাড়ের বট গাছের গোড়ায় একটি ঝুপড়ির মধ্যে এক পাগল ব্রাক্ষ্মণ বসবাস করতেন। পরে তিনি বট গাছের গোড়ায় তালপাতার ছাউনি দিয়ে একটি শনি মন্দির স্থাপন করেন।গ্রামের মানুষজন হাট বাজার করতে প্রায় ১০/১২ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে ধামা মাথায় নিয়ে যেতেন।
সন্ধ্যার আগে আবার হাটবাজার সেরে ধামা মাথায় নিয়ে সেঁটে হঁটে বাড়িতে ফিরতেন বাড়ির কর্তারা।তখন যানবাহন মানে দুঃস্বপ্নের ব্যাপার। এমনটাই হতো সপ্তাহে এক কিংবা দুইদিন।গ্রামের মানুষের দুর্দশা ঘোচানোর জন্য একটি বাজার বসানোর সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন ভুঁটীরাম সরদার,লালমোহন নস্কর,মদনমোহন নস্কর,রতন নস্কর সহ কয়েকজন মোড়ল মাতব্বর।মাতলা নদীর সাথে যুক্ত একটি বড় খালের পাড়ে বাজার বসানোর জন্য শুরু হয় প্রক্রিয়া।প্রথম দিকে দু-তিনজন দোকানে পরসা সাজিয়ে কেনাবেচা শুরু করেন।বাজারের নাম কি হবে সে ব্যাপার নিয়েও চাপানউতোর শুরু হয়। কারণ গ্রামের মোড়ল মাতব্বররা যা কিছুই করতো সমস্তটাই নিজেদের নাম যুক্ত রাখতেন। খাল পাড়ে গড়ে ওঠা বাজার এবং লক্ষ্য করা যায় বাজারের চারপাশে সাতটি রাস্তা রয়েছে।
ডাবু,মৌখালি,ক্যানিং,হেড়োভাঙ্গা,বেলেখালি,জয়রামখালি,হাতামারী যাওয়ার রাস্তা। এই সাতটি রাস্তা নিয়ে মোড়ল মাতব্বরা বাজারের নাম করণ করেন সাতমুখী বাজার।বর্তমানে ক্যানিং থানা এলাকার মধ্যে বৃহত্তম বাজার বলা যায়। এখানে সপ্তাহে প্রতি সোমবার আর বৃহষ্পতিবার বিশেষ বাজার বসে। এছাড়াও প্রতিদিন সকাল বিকাল বাজার সরগম থাকে। এখানে মাছ,সবজি,ধান,গরু,হাঁস-মুরগীর জন্য পৃথক পৃথক বাজার রয়েছে।বর্তমানে এই সাতমূখী বাজারে ছোট-বড় মিলিয়ে কয়েক হাজার ব্যবসায়ীর দোকান রয়েছে।
এই বাজারে একটি বিশেষ ঐতিহ্য রয়েছে। যা জেলার অন্যান্য কোন বাজারে লক্ষ্য করা যায় না। বাজারের চালা ঘরের মধ্যে আঁকা রয়েছে বিভিন্ন মহামানবের ছবি।লেখা রয়েছে উপদেশ এবং সচেতনতার বার্তা।যে কোন ক্রেতা দোকানে কিছু কেনার সময় তাদের নজর আটকে পড়ছে উপদেশ এবং সচেতনতার লেখার উপর।
কেন এমন উদ্যোগ সে প্রসঙ্গে সাতমূখী বাজারের এক প্রবীণ ব্যবসায়ী ফকির সাউ বলেন “আমি অনেক ছোট বেলায় উড়িষ্যা থেকে এই সাতমূখী বাজারে চলে এসেছিলাম বাবার হাত ধরে। সেই সময় চায়ের দাম ছিল মাত্র ছয় পয়সা। বাজারে তেমন একটা দোকানপাট ছিল না। দুপুর কিংবা সন্ধ্যার সময় লোকজনের ভীড় থাকতো না। আজ সেই বাজারে প্রায় সমস্তক্ষণ লোকজনের সরগম রয়েছে। বেড়েছে ব্যবসায়ীর সংখ্যাও। তবে অন্যান্য বাজারের তুলনায় সাতমূখী বাজার একটু ভিন্ন ধরনের। বাজারের চালা ঘরের দেওয়ালে মহাপুরুষদের ছবি আঁকা রয়েছে। রয়েছে মূল্যবান উপদেশ এবং সচেতনতার বার্তা।এলাকার অন্যান্য বাজারের তুলনায় সাতমূখী বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে এটাই ঐতিহ্য।”