সর্পদংশনে মৃত্যু কমাতে ওঝা-গুণীনদের নিয়ে কর্মশালা

বিশ্লেষণ মজুমদার, ক্যানিং – চলতি বছরের বর্ষার শুরু থেকে বেড়েছে বিষধর সাপের উপদ্রব। সাপের কামড়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে সমগ্র রাজ্যজুড়ে।ইতিমধ্যে ক্যানিং মহকুমা এলাকায় গত তিন মাসে প্রায় ১০ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে সাপের কামড়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ওঝা-গুণীন এবং গ্রামীণ চিকিৎসকদের জন্য মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ।
এমন পরিস্থিতিতে যাতে করে সাপের কামড়ে আর একটিও মৃত্যু না হয় তারজন্য গ্রামীণ চিকিৎসক ও ওঝা-গুণীনদের নিয়ে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের স্নেক বাইট ট্রেনিং সেন্টারে দুইদিনের এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হল শনি ও রবিবার।কর্মশালায় রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ত্রিশজন ওঝা-গুণীন ও গ্রামীণ চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন।
ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের সুপার ডাঃ অপূর্বলাল সরকারের উদ্যোগে ও সর্পবিশেষঞ্জ চিকিৎসক সমরেন্দ্র নাথ রায়ের উপস্থিতিতে এবং ক্যানিং যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার আহ্বানে দুই দিনের কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।উপস্থিত ছিলেন ডাঃ দয়ালবন্ধু মজুমদার,বিজন ভট্টাচার্য্য,দেবাশীষ দত্ত সহ অন্যান্যরা।
প্রতিনিয়ত একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ আছড়ে পড়ছে সুন্দরবন সহ সমগ্র রাজ্যে। অতিসম্প্রতি জলোচ্ছ্বাস ও ইয়াসের দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সমগ্র সুন্দরবন।এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের আশ্রয় হারিয়েছে বিভিন্ন প্রাণী।তেমনই সাপ ও তার নিজের বাসস্থান হারিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে মানুষের সাথে সামনা সামনি হতে হচ্ছে।আর সেই কারণের সাপের কামড়ের সংখ্যা বাড়ছে।
পাশাপাশি সাপের কামড় খেয়ে ওঝা-গুণীনের দ্বারস্থ হওয়া মানুষজন কে প্রাণ হারাতে হচ্ছে।ফলে ওঝা-গুণীনদের হাত ধরে সাপে কামড়ানো রোগী যাতে করে দ্রূততার সাথে হাসপাতাল পৌঁছায় তার জন্য এমন উদ্যোগ। এছাড়াও সাপে কামড়ানো রোগী এলে প্রাথমিক ভাবে কি করণীয়, কি উপসর্গ দেখে বােঝা যাবে?কোন ধরনের সাপ কামড়েছে?
যদি বিষধর সাপ হয় তা হলে কোন প্রজাতির বিষধর সাপ কামড়েছে?প্রাথমিক ভাবে এগুলি শনাক্ত করে
প্রয়ােজনীয় চিকিৎসার জন্য যাতে করে দ্রুত সরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয় সেই সব বিষয় নিয়েই প্রশিক্ষণ হয়েছে
ওঝা-গুনীণ ও গ্রামীণ চিকিৎসকদের।হাসপাতাল সুপার বলেন,“রাজ্যের মধ্যে সাপেকাটা রােগীদের চিকিৎসাযর জন্য ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল রোগীদের কাছে অত্যন্ত ভরসার জায়গা। সম্প্রতি একজন রােগীর মৃত্যু হয়েছে আমাদের হাসপাতালে। সে কারণে
আমরা সকলেই মর্মাহত। যাতে আরএকটিও সাপে কাটা রােগীর মৃত্যু না
হয় আমাদের হাসপাতাল কিংবা অন্য কোথাও। সে কারণে আমরা সমস্ত রকমের ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা চালাচ্ছি।”ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের সর্পবিশেষঞ্জ চিকিৎসক সমরেন্দ্র নাথ রায় বলেন, ‘শুধু ক্যানিং মহকুমা নয়, বারুইপুর মহকুমা সহ
রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এই হাসপাতালে আসেন সাপের কামড়ের চিকিৎসা করাতে। এই কর্মশালায়
একদিকে যেমন ওঝা-গুনীণ কিংবা গ্রামীণ চিকিৎসকরা সচেতন হবেন এবং সরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সাপেকাটা
রোগীর চিকিৎসা করতে আরও বেশি করে উৎসাহিত হবেন। ফলে ওঝা গুনীণদের হাত থেকে রােগীর প্রাণ বাঁচার সম্ভাবনা আরও বাড়বে।”
অন্যদিকে অপর আর এক বিশেষঞ্জ চিকিৎসক ডাঃ দয়ালবন্ধু মজুমদার বলেন “সাপে কামড় দিলে অধিকাংশ মানুষ আগে ওঝা-গুনীণদের দ্বারস্থ হয়। ফলে ওঝা গুনীণদের কে একদিনে বশে আনা সম্ভব নয়।তাদের দাপট ধীরে ধীরে কমবে যখন সাধারণ মানুষ সচেতন হবেন।
তাছাড়া ওঝা গুনীণদের সচেতন করে কাজে লাগানোর জন্য এই প্রশিক্ষণ শিবির। ওঝা গুনীণরা প্রশিক্ষনের পর সাধারণত সাপের কামড়ের রোগীদের কে আর চিকিৎসা না করে সরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠাবেন। ফলে সচেতনতা বাড়লে সাপের কামড়ে মৃত্যু আটকানো সম্ভব। যার জন্য এই কর্মশালার আয়োজন।