মঙ্গলবার, ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আনন্দ পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, অবদানে নিজের নাম জড়িয়ে থাকায় গর্বই হয় সূর্যশেখরের

News Sundarban.com :
মার্চ ২৮, ২০২১
news-image

টেলিভিশনে রামায়ণের সিরিয়াল দেখে তির-ধনুক বানাতেন। এরপর সেই খেলনা তির ছুড়ে মারতেন মানুষের গায়ে। ছোট্ট সূর্যশেখর গাঙ্গুলিকে এই দুষ্টুমি থেকে সরিয়ে আনতে দাদু অনিল বসুমল্লিক নাতির হাতে দাবার বোর্ড ধরিয়ে দেন। দাদুর ধরিয়ে দেওয়া সেই নেশায় বুঁদ হয়েই সূর্যশেখর আজ ভারতের অন্যতম গ্র্যান্ডমাস্টারদের একজন।

ভারতের গ্র্যান্ডমাস্টার বিশ্বনাথন আনন্দ পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। এর তিনবারই বড় অবদান ছিল সূর্যশেখরের। ২০০৮, ২০১০ ও ২০১২ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ভ্লাদিমির ক্রামনিক, বুলগেরিয়ান গ্র্যান্ডমাস্টার ভেসেলিন তোপালভ, ইসরায়েলের বরিস গেলফান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে আনন্দের সহকারী হিসেবে কাজ করেন সূর্যশেখর। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে খেলোয়াড়দের সঙ্গে চারজনের একটা দল কাজ করে, এটাকে বলা হয় ‘টিম অব সেকেন্ডস’। আনন্দের ওই দলে ছিলেন সূর্যশেখর। ঢাকায় প্রিমিয়ার দাবা লিগে খেলতে এসে ৩৯ বছর বয়সী কলকাতার গ্র্যান্ডমাস্টার বলছিলেন সেই অভিজ্ঞতার কথা, ‘আমি আনন্দের সহকারী এবং কোচের মাঝামাঝি একটা ভূমিকায় কাজ করেছি। ২০০৮ সাল থেকে যতবার তার সহকারী ছিলাম ততবারই আনন্দ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আনন্দের সঙ্গে কাটানো সময়গুলো ছিল চমৎকার।’

আনন্দকেই বরাবর আদর্শ মানেন ৩৯ বছর বয়সী কলকাতার এই দাবাড়ু। সেই আনন্দের কাছ থেকেই সহকারী হওয়ার প্রস্তাব পেয়ে প্রথমে বিশ্বাসই হচ্ছিল না তাঁর, ‘আনন্দ একদিন ফোন করে বলেন, দাবার কিছু নির্দিষ্ট ওপেনিং নিয়ে তিনি আমার সঙ্গে কাজ করতে চান। বললেন, ২০০৮ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ক্রামনিকের বিপক্ষে ম্যাচে তাঁকে সাহায্য করতে পারব কি না? আমার জন্য প্রস্তাবটা অবিশ্বাস্যই ছিল। আমার মনেই হয়নি যে আমি ওঁর সঙ্গে কাজ করার মতো তেমন উপযুক্ত হয়েছি। প্রস্তাব পেয়ে তাই সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যাই।’

আনন্দের অর্জনে নিজের নাম জড়িয়ে থাকায় গর্বই হয় সূর্যশেখরের, ‘খুবই দায়িত্বশীল কাজ ছিল সেটা। আমার একটা পরিকল্পনায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচে খেলা হচ্ছে, এটা অনেক ভালো লাগার মতো ব্যাপার।’

আনন্দের সঙ্গে থাকার পাশাপাশি সূর্যশেখর নিজেও খেলেছেন বিশ্বের সেরা দাবাড়ুদের বিপক্ষে। তিনি বলছিলেন সে অভিজ্ঞতার কথাও, ‘কার্লসেন, আনন্দ, অ্যারোনিয়ান, জিভলারদের মতো বিশ্বসেরাদের সঙ্গে খেলে অনেক কিছু শেখা যায়। যা শিখেছি তা পরে নিজের খেলায় কাজে লাগিয়েছি।’

ভারতের ছয়বারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন সূর্যশেখর ঘরোয়া, আন্তর্জাতিক মিলিয়ে জিতেছেন ৪০টি সোনার পদক। ২০১৯ সালে কাজাখস্তানে বিশ্ব দলগত চ্যাম্পিয়নশিপে এককে জেতেন সোনা। ব্যাংকক ওপেন, হুনান ওপেন, ক্যানবেরা ওপেনেও জিতেছেন সোনা। তবে এই সব অর্জনের মধ্যে তিনি সবার ওপরে রাখেন ভারতের ক্রীড়াঙ্গনের অন্যতম স্বীকৃতি অর্জুন পুরস্কারকে। ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামের হাত থেকে পুরস্কার নেওয়ার স্মৃতিটা কখনো ভুলবেন না সূর্যশেখর, ‘অর্জুন পুরস্কার ছিল আমার জন্য খুবই অনুপ্রেরণাদায়ক। এটা এমন একজনের কাছ থেকে পেয়েছি, স্যার এ পি জে আবদুল কালাম! ওই স্মৃতি কখনোই ভুলব না।’