বুধবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

স্পিনবান্ধব উইকেটে এমন ব্যাটিং দেখে সবার ধারণা আহমেদাবাদের উইকেট বুঝি নিম্নমানের ছিল

News Sundarban.com :
মার্চ ১, ২০২১
news-image

আহমেদাবাদ টেস্টে অনেক কিছুই হয়েছে। বহু আগ্রহের দিবারাত্রির টেস্ট পৌনে দুই দিনে শেষ হয়েছে। স্পিনবান্ধব উইকেটে ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ৮১ রানে অলআউট হয়েছে ইংল্যান্ড। ভারতের বিপক্ষে নিজেদের সর্বনিম্ন রানে গুটিয়ে যাওয়ার লজ্জার সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রায় এক শ বছর পর দুই দিনে টেস্ট হারের লজ্জা। শুধু ইংল্যান্ড কেন, ভারতের ব্যাটসম্যানরাও যেভাবে খেলেছে প্রথম ইনিংসে, তাতে উইকেটকে রীতিমতো মাইনফিল্ড মনে হচ্ছিল।

স্পিনবান্ধব উইকেটে এমন ব্যাটিং দেখে সবার ধারণা হয়েছে, আহমেদাবাদের উইকেট বুঝি নিম্নমানের ছিল। ইংল্যান্ডের সাবেক খেলোয়াড়েরা তো আইসিসির কাছে বিচারও দিতে চাইছেন এ নিয়ে। তবে নাসের হুসেইনের মতো কেউ কেউ নিজেদের ব্যাটসম্যানদের ভুলটাই দেখছেন। তবে বিস্তারিত ব্যাখ্যা কেউ করেননি। সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক ও ক্রিকেট বিশ্লেষক ইয়ান চ্যাপেল সেটিই করেছেন। ক্রিকইনফোর কলামে ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের স্পিন সামলানোর পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। লিখেছেন স্পিন উইকেটে খেলার সেরা উপায় নিয়ে।

 

আহমেদাবাদের দিবারাত্রির তৃতীয় টেস্টকে বিরাট কোহলি ‘অদ্ভুত’ বলেছে, একই শব্দ ভারতীয় স্পিনারদের ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা যেভাবে সামলানোর চেষ্টা করেছে, তাতেও ব্যবহার করা যায়।

চেন্নাইয়ের কঠিন উইকেটে ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিংই তৃতীয় টেস্টে ভারতকে তিন স্পিনার নিতে উদ্বুদ্ধ করেছে। চেন্নাইয়ে জো রুট বাদে অন্য সবাই স্পিন খেলার অক্ষমতা দেখিয়ে দিয়েছে। ভারত ঠিকই বুঝেছিল এটা মানসিকভাবে দাগ রেখে দেবে এবং সেটিই তারা কাজে লাগিয়েছে।

যে মুহূর্তে অক্ষর প্যাটেল জনি বেয়ারস্টোকে একটা সোজা বল দিয়ে আউট করে দিল, তখন থেকেই ইংল্যান্ড ঘূর্ণিপাকে আটকা পড়ল। বল কি এখানে? না, ওখানে! যখন স্পিনের পরীক্ষা দিতে হলো, ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা নিজেদের রক্ষণ দক্ষতায় আস্থা রাখেনি, এর ফলেই আতঙ্ক ছড়াল। এবং তারা ভারতের স্পিনারদের আক্রমণ করতে গেল। উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে বোলারকে লেংথ বদলে দিতে বাধ্য না করে তারা যেভাবে রিভার্স সুইং করছিল, তাতেই সেটা বোঝা গেছে।

ভালো স্পিনারদের দ্বিধায় ফেলার পরীক্ষিত প্রক্রিয়ার চেয়ে আগ থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে শট খেলার সিদ্ধান্ত কীভাবে কম ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়?

অধিকাংশ ক্ষেত্রে সোজা বলেই বিভ্রান্ত হয়েছেন ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা।

ব্যাটিংয়ের মূল নিয়মগুলোর একটি হলো, বিশেষ করে যে উইকেটে স্পিন ধরে-নিয়ামকগুলো নিজের পক্ষে রাখা।

ভারতে হওয়া স্মরণীয় ২০০১–এর সিরিজ যেখানে ভিভিএস লক্ষণ কঠিন উইকেতে ২৮১ রান করেছিল, আমি শেন ওয়ার্নকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, সে কেমন পারফরম্যান্স করেছে বলে মনে করে। সে জবাব দিয়েছিল, ‘আমার মনে হয় না আমি খারাপ বল করেছি।’ আমিও বললাম, ‘তুমি খারাপ করোনি। যখনই একজন ব্যাটসম্যান তিন ধাপ এগিয়ে এসে তোমার লেংথ বদলাতে বাধ্য করে এবং সেই সঙ্গে দ্রুত পেছনের পায়ে খেলে। তুমি নিশ্চিতভাবেই পরের বলটা আরেকটু সামনে ও উঁচুতে ফেলবে, এটা বাজে বোলিং না। এটা অসাধারণ পায়ের কাজের নিদর্শন।’

বুদ্ধিদীপ্ত পায়ের কাজ শুধু স্পিন সামলাতেই কাজে দেয় না, একজন ব্যাটসম্যানকে যেদিকে ইচ্ছা সেদিকে বল পাঠানোর অবস্থানেও নিয়ে যায়। এর ফলে বোলার যা চাচ্ছে, নিজের ফিল্ডার সোজা ব্যাটসম্যানকে খেলতে বাধ্য করার পরিকল্পনাটা আর কাজে দেয় না। সত্যি বলতে, এই দক্ষতা ছোটবেলায় শিখতে হবে। আর এ কারণেই পরের প্রশ্নটা জাগে: কেন ইংল্যান্ডে এটা শেখানো হচ্ছে না, কেন সুইপ করাকে সাফল্যের সঙ্গে স্পিন খেলার উপায় বলে ভুল শেখানো হচ্ছে?

ভেতরে ঢোকা বলের ক্ষেত্রে আরেকটা খুব জনপ্রিয় উপায় হলো অফ স্টাম্পে ঠেকানো। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার ভুলটা হলো, এতে অন সাইডে রান করার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এ পদ্ধতির কাজই হলো রান তোলার সুযোগ সৃষ্টি না করে আউট হওয়ার পথ বন্ধ করা। এটা খুবই বাজে একটা উপায়। এর ফলে ব্যাটসম্যান লেগ স্লিপের দিকে খেলতে বাধ্য হয়। যেখানে একজন ফিল্ডার ক্যাচ ধরার জন্য বসে আছে, সেখানে ইচ্ছা করে কেন খেলবেন?

সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান ডগ ওয়াল্টার্সকে আমি একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘একজন অফ স্পিনার যখন বল করে, তখন তুমি লেগ স্লিপে কীভাবে আউট হও?’

সে জবাব দিয়েছিল, ‘তুমি আউট হতে পারো না।’

বিশ্বমানের অফ স্পিনের বিপক্ষে আমার দেখা সেরা ব্যাটসম্যান ওয়াল্টার্স। ল্যান্স গিবসের (ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কিংবদন্তি) বিপক্ষে কুইন্স পার্ক ওভালের কঠিন উইকেটে এক সেশনে সে সেঞ্চুরি করেছিল। এরাপাল্লি প্রসন্নর বিপক্ষে চিপকের এমন এক উইকেটে সেঞ্চুরি করছিল যেটা কয়েক দিন আগের ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচের উইকেটের মতোই কঠিন ছিল। দুই ম্যাচেই বিশ্বমানের অফ স্পিনারদের স্পিন সামলানোর জন্য এবং ফিল্ডিংয়ের ফাঁক খুঁজে নিতে পায়ের কাজের দুর্দান্ত ব্যবহার করেছিল।

ভারতের স্পিন আক্রমণের সামনে দাঁড়াতে পারেনি ইংল্যান্ড

আহমেদাবাদে ভারতীয় স্পিনারদের বিপক্ষে ওলি পোপ নিজের পা ব্যবহার করতে চেয়েছিল। ওর চিন্তাটা ঠিক ছিল কিন্তু প্রয়োগে ঝামেলা করেছে। প্রথমত, ক্রিজ থেকে ছন্দ মেনে না বের হয়ে লাফ দিয়ে বের হয়েছে। দ্বিতীয়ত, সে সামনের পা এগিয়েছে কিন্তু পেছনের পা আগের জায়গাতেই রয়ে গিয়েছিল, এর মানে সে নিজেকে ক্রিজের মধ্যে রেখে (পা এগিয়ে নিয়েও) নিরাপদ বোধ করতে চেয়েছিল।

ছোটবেলায় পায়ের কাজ সম্পর্কে আমাকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেখানো হয়েছিল। আমার কোচ বলতেন, ‘স্টাম্পড হলে তিন গজ বাইরে গিয়ে হও, তিন ইঞ্চির জন্য না। আর যখন ক্রিজ ছেড়ে এগিয়ে যাবে, কিপার নিয়ে ভেবো না।’

পোপ যখন ক্রিজ ছেড়ে বের হতে চাচ্ছিল, সে কিপার নিয়েও ভাবছিল। এর মানে সে ভয় পাচ্ছিল বলটা সে ব্যাটে লাগাতে পারবে না। এতে (মনের ভয়) পায়ের কাজ সাবলীল না হয়ে আরও খারাপ হয়।

কঠিন উইকেটে ভালো স্পিনারের বিপক্ষে খেলা সহজ না কখনোই, কিন্তু ভালো খেলা সম্ভব। ইংল্যান্ড যেভাবে খেলছে সেভাবে সম্ভব না।