বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ফুটপাথে পড়ে থাকা অসহায় বৃদ্ধ ফিরে পাবে পরিবার পরিজন  

News Sundarban.com :
ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১
news-image

নিউজ সুন্দরবন ডেস্ক:গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ফুটপাথে পড়ে থাকা ভিন জেলার সত্তর উর্দ্ধ এক বৃদ্ধ ফিরে পেতে চলছেন তাঁর আত্মীয় পরিজনদের।আর এই বৃদ্ধ কে বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ক্যানিং ১ ব্লকের দক্ষিণ তালদির এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

স্থানীয় সুত্রে জানাগেছে দিনটি ২০২০ সালের ২৫ ডিসেম্বর দুপুর বেলা।শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ক্যানিং লাইনের ঘুঁটিয়ারীশরীফ ষ্টেশন।ষ্টেশনের ১ নম্বর প্লাটফর্মে এক বৃদ্ধ গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় যন্ত্রণায় কাৎরতে কাৎরাতে চিৎকার করছে।করোনা সংক্রমণের ভয়ে কেউ কাছে যেতে চাইছে না। অগত্যা ষ্টেশনের নিত্যযাত্রীরা ওই বৃদ্ধের শারীরিক যন্ত্রণা এবং অসহায় করুণ দৃশ্য দেখে কেউই এগিয়ে আসেনি।নির্মমতার এমন খবর পায় স্থানীয় দক্ষিণ তালদি এলাকার এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ‘ছায়া তট’ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা করোনা সংক্রমণ ভয় উপেক্ষা করে ঘুঁটিয়ারী শরীফ ষ্টেশন থেকে উদ্ধার করে অসহায় বৃদ্ধকে।

চিকিৎসার জন্য তাঁকে স্থানীয় ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়।অপরিচিত এবং অচৈতন্য অবস্থায় ওই বৃদ্ধ কে প্রথমে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে ভর্তি নিতে অস্বীকার করেন চিকিৎসকরা। পরে ছায়াতটের সদস্যরা চিকিৎসকদের কাছে অনুনয় বিনয় করে বৃদ্ধ কে ভর্তি করেন। দীর্ঘ প্রায় একমাস চিকিৎসার পর বৃদ্ধ ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকেন। কথাও বলেন।তিনি তাঁর নাম ঠিকানা এবং করুণ দুর্দশার কথা ছায়াতটের সকল সদস্যদের কে জানায়।বৃদ্ধের নাম গৌর চন্দ্র কুন্ডু। সুদূর কোচবিহার জেলার পুন্ডিবাড়ির মরিচবাড়ি গ্রামে বসবাস।বিগত প্রায় ১০ বছর আগে বৃদ্ধের স্ত্রী মারা যায়।

দুই মেয়ে কে বিয়েও দিয়ে দেয়। বর্তমানে বৃদ্ধ একা একা থাকতেন। কখনও বা মেয়ের বাড়িতে থাকতেন। বার্ধক্যজনিত করাণে মেয়েদের বাড়িতে গেলে সেভাবে দেখাশোনা করে না দুই মেয়ে সবিতা কার্যী ও স্বপ্ন সরকাররা।অগত্যা বৃদ্ধ শারীরিক অবসাদ ও যন্ত্রণা নিয়ে কোচবিহার থেকে বেরিয়ে পড়েন ২০২০ র নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে।এখানে ওখানে ফুটপাথে দিন কাটাতে কাটতে এক সময় ২৫ ডিসেম্বর মৃতপ্রায় অবস্থায় ঘুঁটিয়ারী শরীফ ষ্টেশনে চলে আসেন।

ছায়াতটের সদস্য রাম দেবনাথ,সৌমেন মন্ডল,বিশ্বজিৎ বায়েন,সুজিত নস্কর,সংগ্রামজিৎ বিশ্বাস সহ অন্যান্যরা পিতৃস্নেহে বৃদ্ধ কে সেবাশ্রুশ্রুষা করে সুস্থ কোরে তোলেন। বৃদ্ধের চুল,দাড়ি,নখ কেটে দেওয়া থেকে শুরু করে স্নান করানো, খাওয়ানো,বিছানা করে দেওয়া , শৌচালয়ে নিয়ে যাওয়া এমন কি শারীরিক যন্ত্রনার অনুভব হলে বৃদ্ধের শরীর মেসেজ করা থেকে সমস্ত দিক দেখাশোনা করে চলেছে এই পাঁচ যুবক।আগামী মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বৃদ্ধকে তাঁর কোচবিহার জেলার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু করেছে ছায়াতট নামক ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা।ছায়াতটের সভাপতি রাম দেবনাথ জানিয়েছেন ‘আমরা স্বাস্থ্য,শিক্ষা,অন্নবস্ত্র এবং বাসস্থান নিয়ে স্বেচ্ছামূলক কর্মযঞ্জ শুরু করি ২০১৯ এ।সেই পরিস্থিতিতে আমরা মনে করি এমন সব অসহায় বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের পাশে দাঁড়ানো জরুরী। সেই কর্মপ্রচেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি’।

ঘুঁটিয়ারী শরীফ ব্লক হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বৃদ্ধ গৌর চন্দ্র কুন্ডু জানিয়েছে ‘ছায়াতটের ছেলের আমাকে পিতৃতুল্য ভাবে সেবাযত্ন করে সুস্থ করে তুলছে। ওদের কোন তুলনা হয়না। রাম ভগবানের নাম। আর আমাকে সেই ভগবানের দূত রাম দেবনাথের ও তার সাঙ্গপাঙ্গোদের কাছে না পাঠালে অনেকদিন আগেই হয়তেো কোন রাস্তার কোন এক ফুটপাথে মারা যেতাম।ওদের দয়ায় বাড়িতে ফিরতে পারবো। খুব খুশি মনে হচ্ছে। ওদের আশীর্বাদ করি ওরা আরো বড় হোক,আমার মতো দুঃস্থ অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সমাজের প্রতি কাজ করবে।।