ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নামে আজ সরদার প্যাটেল স্টেডিয়ামের নাম ঘোষণা করেছেন দেশটির রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ
উৎসবের আবহ ছিল। দেশের রাষ্ট্রপতি এলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর ক্রীড়ামন্ত্রী এলেন। ভারত ও ইংল্যান্ড সিরিজের তৃতীয় টেস্ট ঘিরে এত সাজ সাজ রব তো থাকবেই। এই টেস্ট দিয়েই যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দেখছে খেলাটির সবচেয়ে বড় স্টেডিয়ামকে! তবে কাল পর্যন্ত সেটি যে নামে পরিচিত ছিল, এক রাত পরই নাম বদলে গেল!
কেউ পুরো নাম সরদার প্যাটেল স্টেডিয়াম বলতেন, ভারতীয়দের কাছে সেটি আরও বেশি পরিচিত ছিল মোতেরা স্টেডিয়াম নামে। কিন্তু এখন থেকে সেটি নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নামে আজ স্টেডিয়ামের নাম ঘোষণা করেছেন দেশটির রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন এই স্টেডিয়ামের ভাবনা প্রথম তাঁর মাথায় এসেছিল। সে সময় গুজরাট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিও ছিলেন তিনি। আমরা দেশের প্রধানমন্ত্রীর নামে স্টেডিয়ামটির নামকরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটি ছিল মোদিজির (মোদি সাহেব) স্বপ্নের প্রকল্প’—স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করতে এসে বলেন রামনাথ কোবিন্দ। ঝাঁ চকচকে আধুনিক এই স্টেডিয়ামে বসে একসঙ্গে খেলা দেখতে পারবেন ১ লাখ ৩২ হাজার দর্শক! পাশাপাশি এই স্টেডিয়ামের আরেকটি বৈশিষ্ট্যও বয়ান করলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি, ‘স্টেডিয়ামটা পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের আরেকটা দৃষ্টান্ত।’
৬৩ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত এই স্টেডিয়াম বানাতে প্রায় ৮০০ কোটি রুপি খরচ হয়েছে বলে জানাচ্ছে ভারতের সংবাদমাধ্যম। ১ লাখ ৩২ হাজার দর্শক ধারণে সক্ষম এই স্টেডিয়াম ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি দর্শক ধারণক্ষম স্টেডিয়ামের ‘মুকুট’ কেড়ে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের (এমসিজি) কাছ থেকে। এমসিজির ধারণক্ষমতা ছিল ৯০ হাজার।
‘৩২টি অলিম্পিক প্রমাণ ফুটবল মাঠকে যোগ করলে যা হয়, (এই স্টেডিয়াম) ততটুকু জায়গার ওপর নির্মিত’—ভারতের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর তথ্য। এমসিজির রক্ষণাবেক্ষণ যে কোম্পানির দায়িত্বে, অস্ট্রেলিয়ার সেই নির্মাণ কোম্পানি পপুলাস নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছিল। লাল ও কালো মাটির তৈরি ১১টি পিচ আছে এখানে। মূল পিচ আর অনুশীলন পিচে একই মাটি ব্যবহার করা হয়েছে—বিশ্বে এমন সুবিধা দেখা প্রথম স্টেডিয়াম এটিই।
এই মাঠের পানি নিষ্কাশনব্যবস্থাও অত্যাধুনিক। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, বৃষ্টি থামার ৩০ মিনিটের মধ্যেই পানি শুকানো যাবে। দারুণ বদল আছে ফ্লাডলাইটের ব্যবস্থাতেও। সাধারণত উঁচু লম্বা টাওয়ারে ফ্লাডলাইট বসাতে দেখা যায় স্টেডিয়ামগুলোতে, কিন্তু এই স্টেডিয়ামে সেটি না করে স্টেডিয়ামের ছাদের চারপাশে এলইডি লাইট বসানো হয়েছে। যে কারণে খেলার সময় মাঠে ক্রিকেটারদের কোনো ছায়া পড়বে না—যে আয়োজন ভারতে প্রথম।
সাধারণত স্টেডিয়ামগুলোতে দুটি ড্রেসিংরুম থাকলেও বিশ্বে এটিই হচ্ছে প্রথম স্টেডিয়াম, যেখানে চারটি ভিন্ন ড্রেসিংরুম থাকছে, যাতে একই দিনে টানা দুটি ম্যাচ আয়োজনে সুবিধা হয়। মাঠের সঙ্গে লাগোয়া ক্রিকেট একাডেমি, ইনডোর অনুশীলন পিচ ও ছোট প্যাভিলিয়ন সংযুক্ত দুটি ভিন্ন অনুশীলন গ্রাউন্ড থাকছে।
‘ছোটবেলায় আমরা স্বপ্ন দেখতাম বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়ামটা ভারতের হবে। এখন ক্রীড়ামন্ত্রী হওয়ার পর সেই স্বপ্ন সত্যি হতে দেখে আমার খুশির কোনো সীমা নেই’—উচ্ছ্বাসটা এভাবে প্রকাশ করেছেন ভারতের ক্রীড়ামন্ত্রী কিরেন রিজিজু।
পুনর্নির্মাণের জন্য ২০১৫ সালে স্টেডিয়ামটি বন্ধ হয়ে যায়। ভারতীয় ক্রিকেটে অনেক ইতিহাসের সাক্ষী এই স্টেডিয়াম। ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে যে ম্যাচ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে ১০ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছিলেন ভারতীয় কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার, সেটি এই স্টেডিয়ামে হয়েছিল। ১৯৯৪ সালে কপিল দেব তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারের ৪৩২তম উইকেটটি নিয়ে স্যার রিচার্ড হ্যাডলিকে পেরিয়ে সে সময়ে টেস্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বনেছিলেন এই স্টেডিয়ামে।