বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সুন্দরবনবাসীর স্বপ্নের রেলপথ তৈরীর আবেদন পত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেব : পূরবী রায় 

News Sundarban.com :
ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২১
news-image

সুভাষ চন্দ্র দাশ, ক্যানিং

ক্যানিং-ঝড়খালি ৪২ কিলোমিটর রেললাইন সম্প্রসারণ ও মাতলা রেল সেতুর কাজ সমাপ্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখলেন সুন্দরবনবাসীরা। আর সেই চিঠি সরাসরি প্রধানমন্ত্রী কাছে পৌঁছে দিয়ে সুন্দরবনবাসীর দুঃখ দুর্দশার কথা তুলে ধরবেন যাদবপুর বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক তথা বিশিষ্ট নেতাজী গবেষক ডঃ পূরবী রায়।

প্রত্যন্ত সুন্দরবনের বাসন্তী ব্লকের সোনাখালি বাজারে অনুষ্ঠিত এক নাগরিক কনভেনশন মঞ্চে বুধবার বিকালে এমনটাই জানালেন অধ্যাপক ডঃ পূরবী রায়।

সুন্দরবনবাসীর স্বপ্নের ক্যানিং ঝড়খালি রেলপথ সম্প্রসারণ ও অর্ধসমাপ্ত মাতলা রেলসেতুর কাজ সমাপ্ত করা।দীর্ঘ প্রায় এক যুগের অবসান হলেও সেই তিমীরেই রয়ে গেছেন সমগ্র সুন্দরবনের মানুষজন।বিশ্ব মানচিত্রে সুন্দরবন অন্যতম স্থানে থাকলেও,যোগাযোগ মাধ্যমে অত্যন্ত পিছিয়ে।

বারে বারে সুন্দরবন এমন ভাবে পিছিয়ে পড়ার জন্য মুলত দায়ী সরকারের গদীতে বসে থাকা রথী মহারথীরা,এমনটাই অভিযোগ সুন্দরবনে বসবাসকারী প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ মানুষের।

উল্লেখ্য বিশ্বের বিস্ময়কর পৃথিবীর সেরা বাদাবন সুন্দরবনের সিংহ দুয়ারে কেন্দ্র ও রাজ্যের দড়ি টানাটানিতে রেল যোগাযোগ কি অধরা থেকে যাবে? এ প্রশ্নে বাসন্তী ব্লকের সোনাখালীতে বুধবার বিকালে এক নাগরিক কনভেনশনে সর্বস্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন ক্যানিং মহকুমা এলাকার বাসিন্দারা।

রেল সম্প্রসারণ এর দাবি উঠেছিল বিগত ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। তৎকালীন লোকসভার অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় সুন্দরবন বাসন্তী ব্লকের কুলতলিতে কৃষ্টি মেলায় এসেছিলেন। সুন্দরবনবাসিদের পক্ষ থেকে দুলক্ষ মানুষের গণস্বাক্ষর সম্মিলিত একটি আবেদনপত্র তুলে দেওয়া হয়েছিল।তিনি দিল্লীতে ফিরে তৎকালীন রেলমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব কে সুন্দরবনের এই রেলপথের ব্যাপারে সুন্দরবনবাসির আবেদন পত্র সহ চিঠি তুলেদেন ২০০৯ সালের ২ জানুয়ারি। ইতিমধ্যে সরকার পরিবর্তন হয়ে যায়।পরবর্তী রেলমন্ত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০০৯ সালে ১৩ নভেম্বর রেলপথের সূচনা করেন।

২০১৩ পর্যন্ত মাতলা রেলসেতুর জন্য মাতলা নদীর উপর ২১ টি পিলার তৈরী হয়ে কাজ প্রায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের প্রাক্তন সদস্য লোকমান মোল্লা পর্যায়ক্রমে রেলরাষ্ট্রমন্ত্রী অধীর চৌধুরী, রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু, রেলরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজেন গইন, রেলরাষ্ট্রমন্ত্রী মনোজ সিনহার সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করে রেল পথের দাবীপত্র তুলে দেন। সবশেষে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি দেওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নির্দেশে ডেপুটি চীফ ইঞ্জিনিয়ার এ.কে.ভৌমিক লোকমান মোল্লা কে চিঠি দিয়ে জানান “ক্যানিং- ঝড়খালি রেলপথের জন্য ফাইনাল লোকেশন সার্ভে সম্পন্ন হয়েছে । ব্যক্তিগত জমি অধিগ্রহণের জন্য অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি অধিগ্রহণ), দক্ষিণ ২৪ পরগনা- কে কমপিটেন্ট অথরিটি করা হয়েছে এবং মাতলা নদীর উপর ব্রিজের কাজ চলছে।”

অথচ সুনদরবনবাসীর চোখের সামনে ২০১৩ সালের পর থেকে আজ অবধি রেলসেতু তৈরীর কাজ বন্ধ রয়েছে।এছাড়াও যে সুন্দরবন তার সৌন্দার্য্যের জন্য বিশ্ব মানচিত্র সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে সমাদৃত। সেই ঐতিহ্যবাহী গৌরব কে অবলীলাক্রমে কালিমালিপ্ত করে বর্তমান রেল বাজেটে ৪২ কিলোমিটার রেলপথ তৈরীর জন্য মাত্র ১ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

যা দেশ তথা বিশ্ব ইতিহাসে এক বিরল হাস্যকর অনন্য দৃষ্টান্ত।আর সেই কারনে প্রতিবাদ জানিয়ে সুন্দরবনের ভূমিপত্র লোকমান মোল্লার আহবানে নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে সুন্দরবনের সিংহদুয়ার সোনাখালিতে নাগরিক কনভেনশনে হাজার হাজার সুন্দরবনবাসি তাঁদের দাবী নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন।

এবিষয়ে ডঃ পূরবী রায় বলেন, ‘বিশ্বের ঐতিহ্যমন্ডিত স্থানে রেল যোগাযোগ গড়ে ওঠা আবশ্যক। আমি সুন্দরবন বাসীদের দাবি পূর্ণ সমর্থন করছি।বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিতে আনার চেষ্টা করব।’

লোকমান মোল্লা বলেন ’স্বাধীনত্তোর যুগ থেকে প্রতি ধাপে সুন্দরবনবাসি শোষণ, বঞ্চনার শিকার হয়েছে।সেই ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে।৪২ কিমি রেলপথ সম্প্রসারনে কেবলমাত্র ১ টাকা বরাদ্দ সেই প্হসনের অন্যতম দৃষ্টান্ত বিরল নজীর।১ টাকা বরাদ্দ করে রেল মন্ত্রক শতাব্দীর সেরা প্রহসন উপহার দিল সুন্দরবনবাসিদের।আগামী দিনে এর প্রতিবাদে দক্ষিণ সুন্দরবনবাসী আরো বৃহত্তর আন্দোলনের পথে নামবে।’

প্রাক্তন সুন্দরবন বিষয়ক দপ্তরের মন্ত্রী কান্তি গাঙ্গুলি বলেন ‘সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মতো আক্রমণ করে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।এ দাবী লড়াই করে আদায় করতে হবে।’

অনদিকে প্রাক্তন সেচমন্ত্রী সুভাষ নস্কর বলেন, ’পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের স্বার্থে রেল মন্ত্রকের উচিত অবিলম্বে এই রেলপথ সম্প্রসারণ করা।’ অন্যান্যদের বিশিষ্টদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন পুলিশকর্তা অরিন্দম আচার্য্য,তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা আব্দুল মান্নান শেখ, সমাজসেবী তথা শিক্ষারত্ন প্রাপ্ত শিক্ষক অমল নায়েক সহ অন্যান্যরা।