শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মিয়ানমারে কেন বারবার সামরিক অভ্যুত্থান

News Sundarban.com :
ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২১
news-image

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি সময় ধরে সামরিক বাহিনীর শাসন চলা দেশটি হচ্ছে মিয়ানমার। ব্রিটেনের কাছ থেকে ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভ করে মিয়ানমার নামে পরিচিত দেশটি। এরপর থেকে মিয়ানমারের গত ৭৩ বছরের ইতিহাসে সরাসরি সামরিক শাসন চলেছে ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে।

মিয়ানমারবিষয়ক পর্যবেক্ষকদের মতে, দেশটির রাজনীতি, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর যে বিশাল প্রভাব রয়েছে, সেটি বেশ অভাবনীয়। মিয়ানমারের স্বাধীনতার জন্য ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জেনারেল অং সান, যাকে দেশটির সামরিক বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা ও জাতির জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। স্বাধীনতা লাভের ছয় মাস আগে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হন অং সান। তবে স্বাধীনতার পর থেকেই বার্মার জনগণ সেনাবাহিনীকে শ্রদ্ধার চোখে দেখত, তাদের মনে করা হতো দেশের রক্ষাকারী হিসেবে।

অন্যদিকে, স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই মিয়ানামারের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দাবি করে থাকে, দেশটিকে ঐক্যবদ্ধভাবে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনী ভূমিকা রেখেছে। তা না করলে মিয়ানমার ভেঙ্গে খণ্ড খণ্ড হয়ে যেত।

স্বাধীনতা লাভের পর মিয়ানমারে উ নুর নেতৃত্বে সাংবিধানিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু সেই সরকার শুরু থেকেই জাতিগত সংঘাত, বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন, দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত হয়ে পড়ে। দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে বারবার ফিরেছে সেনা শাসন। সংবিধান অনুযায়ী, দেশটির সেনাপ্রধান নিজেই নিজের বস। তিনি কারও কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নন।

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির লোয়ি ইনস্টিটিউটের পূর্ব এশিয়াবিষয়ক গবেষক অ্যারন কনেলি বলেছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে যদি বলা হয়, দেশের ভেতরে নিয়ন্ত্রণ নাকি আন্তর্জাতিক সম্মান- তোমরা কোনটি চাও? তারা দেশ নিয়ন্ত্রণকেই বেছে নেবে। অন্যদিকে, বর্তমানে যে সংবিধান রয়েছে সেটি বেসামরিক সরকারের ওপর সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে।

জার্মানির গিগা ইনস্টিটিউট অব এশিয়ান স্টাডিজের গবেষক ম্যাক্রো বুন্তা বলেছেন, একটি দেশে বেসামরিক সরকার যখন কার্যকরভাবে দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ হয়, তখন সেখানে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ ঘটে। স্বাধীনতার পরে দেশের ভেতরে জাতিগত সংঘাত মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর শক্তি বাড়ানো হয়। ফলে একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী ধীরে ধীরে রাজনীতিতে নিয়ন্ত্রণ দৃঢ় করতে শুরু করে। যার ফলে বারবার ফিরেছে সেনা শাসন।