শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের বিষয়ে সরকার ও বিরোধীদলের ভিন্নমত

News Sundarban.com :
জানুয়ারি ২, ২০২১
news-image

বাংলাদেশ প্রতিনিধি: ২০২০ সালের সাত মাসের সংখ্যালঘু নির্যাতনের তথ্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ৷ তাতে বলা হয় মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর এই সাত মাসে ৬০টি পরিবারকে গ্রাম ছাড়া করা হয়েছে। মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ২৩টি ঘটনা ঘটেছে। ওই সময়ে হত্যার শিকার হয়েছেন ১৭ জন সংখ্যালঘু। হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে ১১ জনকে। ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩০ জন। অপহরণের শিকার হয়েছেন ২৩ জন।

ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে মার্চ থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ২৭টি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। বসতভিটা, জমিজমা, শ্মশান থেকে উচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে ২৬ টি। সাতজনকে জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে, ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হয়েছে চারজনকে। বসত-ভিটা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে ৮৮টি। হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন ২৪৭ জন।

পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাণা দাশগুপ্ত জানান, ২০২০ সালের সাত মাসে সংখ্যালঘু নির্যাতনের যে তথ্য প্রকাশ করেছে তা গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর এবং মাইনরিটি ওয়াচ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নেয়া। তিনি বলেন, ‘তথ্যের যথার্থতা নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিটি ঘটনা ক্রস চেক করি। আমাদের জেলা উপজেলা পর্যায়ে কমিটি আছে, তাদের এই ক্রস চেকের দায়িত্ব দেই। নিশ্চিত না হয়ে আমরা কোনো তথ্য প্রকাশ করি না।’

অন্যদিকে বিএনপির এক নেত্রী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যাপকহারে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন।
আর সরকারি দল আওয়ামী লীগ বলছে, অভিযোগ মিথ্যা।

গত ২৫ ডিসেম্বর ঢাকায় বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ছাত্র ফোরামের এক অনুষ্ঠানে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেছেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও এমপিরা সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর-জমি দখল করছে।’ এটাকে অবশ্য হাস্যকর অভিযোগ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আল হানিফ।

এবিষয়ে বিএনপি নেতা শামা ওবায়েদ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে একটা পারসেপশন তৈরি করে যে, তারা যখন ক্ষমতায় থাকে তখন সংখ্যালঘুরা ভালো থাকে আর বিএনপি যখন রাষ্ট্রের দায়িত্বে থাকে তখন তারা ভালো থাকে না, তখন তাদের ওপর অত্যাচার হয়৷ তারা একেবারে ভুল পারসেপশন তৈরির চেষ্টা করছে।’

তিনি তার এলাকা বৃহত্তর ফরিদপুরের কথা উল্লেখ করে দাবি করেন, ‘ওই এলাকায় সংখ্যালঘু অনেকের জমিজমা, ঘরবাড়ি দখল করে নিচ্ছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। এমপিদের প্ররোচনায় স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বাররা এসব করছেন। কারণ, তারা ধরেই নেয় এরা আমাদের ছেড়ে যাবে কোথায়। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের রিপোর্টগুলোতেও তার প্রমাণ মিলবে।’

শামা ওবায়েদ আরো দাবি করেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সব ধর্মের মানুষের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করবে৷ সংখ্যালগুরা যাতে কোনো নির্যাতন, অন্যায় আচণের শিকার না হয় তারা ব্যবস্থা নেবেন দাবি করে শামা ওবায়েদ বলেন, ‘বিএনপি সাম্যে বিশ্বাস করে।’

প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আল হানিফ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এর চেয়ে আর কোনো হাস্যকর অভিযোগ নাই। বিএনপির আসলে কোনো আদর্শ নাই। বিশেষ করে তারেক জিয়া নেতৃত্বে আসার পর তারা হত্যার রাজনীতি শুরু করেছে। ২০০১ সালে তারা আওয়ামী লীগের ২৫ হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। ২০০৪ সালের ২১ আগষ্টসহ একাধিকবার তারা শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। এখন তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে উদ্ভট কথা বলছে।’

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রসঙ্গে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘বিচ্ছিন্নভাবে ঘটছে। সামাজিক, পারিবারিক ও স্থানীয় কারণেও হচ্ছে। কিন্তু সরকার যখনই ঘটনা ঘটছে, তখনই ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করছে। শুধু সংখ্যালঘু কেন, দেশের সব নাগরিকের সুরক্ষার দিকেই সরকারের নজর আছে।’