মঙ্গলবার, ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সুন্দরবনের নদীখাঁড়িতে বাঘের আক্রমণে মৃত্যু মৎস্যজীবীর

News Sundarban.com :
ডিসেম্বর ১৩, ২০২০
news-image

নিউজ সুন্দরবন ডেস্ক:  সুন্দরবন জঙ্গলে বাঘের আক্রমণে মৃত্যু হল এক মৎস্যজীবী। মৃত মৎস্যজীবীর নাম বাদল বৈরাগী(৩২)। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার দুপুরে সুন্দরবনের সুধন্যখালি জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায়। স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে অভাবের তাড়নায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী বছর ৩২ বয়সের বাদল বৈরাগী সুন্দরবনের নদী খাঁড়িতে মাছ কাঁকড়া ধরার কাজ করে জীবীকা নির্বাহ করতেন। করোনার তান্ডবে লকডাউন চলায় সুন্দরবনের নদীখাঁড়িতে মাছ কাঁকড়া ধরা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। সংসার চালানোর জন্য বিপাকে পড়ে যায় এই মৎস্যজীবী। স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে সংসার।এই মৎস্যজীবী অভাবের তাড়নায় চরম সমস্যায় পড়ে গেলে শেষ পর্যন্ত সন্তানদের ফেলে রেখে অন্যত্র চলে যায় তাঁর স্ত্রী।

দুই মেয়ে ও এক ছেলে স্কুলে পড়াশোনা করছে। গোসাবা ব্লকের বালি বিজয়নগর কলোনি পাড়ার নদীর তীরবর্তী কুঁড়ে ঘরে ছেলেমেয়েদের নিয়ে বসবাস করতেন এই মৎস্যজীবী। কুঁড়ে ঘরে তিন সন্তান কে রেখে উপার্জনের তাগিদে গত রবিবার তিন সঙ্গীসাথী কে নিয়ে সুন্দরবন জঙ্গলের নদীখাড়িতে মাছ কাঁকড়া ধরতে বেরিয়ে পড়েন তিনি। রবিবার সকালে তিনকে নিয়ে সুন্দরবনের সুধন্যখালির গভীর জঙ্গলের খাড়িতে তে মাছ কাঁকড়া ধরার সময় দুপরে হঠাৎই বাদলের উপর আচমকা ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঘ । সাথে সাথেই তার সহকর্মীরা বাঁচানোর চেষ্টা করলেও বাদলকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি ।

এরপর বাদলকে টানতে টানতে গভীর জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যায় বাঘ। দেহটিকে উদ্ধার করতে পারেনি সঙ্গীসাথীরা।এরপর নৌকাতে থাকা অন্যান্য মৎস্যজীবীরা ফিরে এসে বিদ্যা রেঞ্জ অফিসে ঘটনাটি জানায়। সেখান থেকে একটা অনুসন্ধানকারী দল পাঠায় বনদপ্তর। তবে সূত্রের খবর এখনও পর্যন্ত দেহটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। মৎস্যজীবীদের মাছ ধরার কোন ও অনুমতি পত্র ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখছে বন দফতর।

অন্যদিকে বাঘের আক্রমণে মৎস্যজীবীর মৃত্যুর ঘটনা প্রসঙ্গে শোক প্রকাশ করে সুন্দরবন মৎস্যজীবী রক্ষা কমিটির ক্যানিং মহকুমার সভাপতি শম্ভু সাহা  বলেন “ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক।সুন্দরবন জঙ্গলে প্রতিনিয়ত বাঘের আক্রমণে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।দরিদ্র মৎস্যজীবীরা জীবন জীবীকার তাগিদে জীবন বিপন্ন করে সুন্দরবনের নদীখাঁড়িতে মাছ কাঁকড়া ধরতে না যায় এবং বিকল্প রোজগারের সন্ধান পায় সে বিষয়ে সরকার মূখ্য ভূমিকা নিলে বাঘের আক্রমণে মৃত্যুর মিছিল কমতে বাধ্য হবে। উদ্যোগ এবং অসচেতনতার অভাবেই সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।”

অন্যদিকে সুন্দরবন এলাকায় ব্যাঘ্র বিধবাদের নিয়ে কাজ করা শিবগঞ্জ চম্পা মহিলা সোসাইটির কর্ণধার তথা বিশিষ্ট সমাজসেবী শিক্ষক অমল নায়েক বলেন “সুন্দরবন জঙ্গলে বাঘের আক্রমণে প্রতিনিয়ত মৃত্যু মিছিল বেড়ে চলেছে। স্বামী হারিয়ে বিধবা হচ্ছে অসংখ্য মায়েরা।সুন্দরবনে দরিদ্র মৎস্যজীবীদের জন্য  সরকার অবিলম্বে বিকল্প আয়ের সংস্থা না করলে সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে মৃত্যু মিছিল কমবে না”।