শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

 অসহায় মরণাপন্ন হিন্দু নাবালিকার চিকিৎসার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলেন মুসলিম যুবক

News Sundarban.com :
অক্টোবর ১৪, ২০২০
news-image

নিউজ সুন্দরবন ডেস্ক: যতই জ্বলে উঠুক হিংসার রাজনীতি,যতই হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ কিংবা জাতিদাঙ্গা হোক!সেটা সাময়িক এবং স্বার্থের জন্য। ধর্মের ভেদাভেদ কে দূরে ঠেলে ফেলে মানবতা দৃঢ় বন্ধন আজও যে অটুট। তারই নিদর্শন বিদ্যমান। ধর্মের নামে কুসংস্কার এবং রাজনৈতিক দহনে কালিমা লিপ্ত বাসন্তী ব্লকের প্রত্যন্ত ফুলমালঞ্চ গ্রাম।
তারপর সুন্দরবনে আছড়ে পড়েছিল আম্ফান সাইক্লোন। জর্জরিত সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে আরো বেশী করে জর্জরিত করে তুলেছে মারণ করোনা মহামারী ভাইরাস।লকডাউনে অসহায় হয়ে পড়েছেন দরিদ্র অসহায় পরিবার গুলো।

এমত অবস্থায় গ্রামেরই এক বছর দশেক বয়সের দরিদ্র হিন্দু নাবালিকা কন্যা দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মরণাপন্ন।চিকিৎসার যাবতীয় খরচ করে হিন্দু বোন কে বাঁচানোর উদ্যোগ নিলেন গ্রামেরই এক সহৃদয় মুসলিম যুবক।আর এমনই দৃঢ় মানব বন্ধনে সাক্ষী থাকলো দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার প্রত্যন্ত সুন্দরবনের অনুন্নত পিছিয়ে পড়া বাসন্তী ব্লকের নির্দেশখালি গ্রাম।
গ্রামেরই দীনমজুর রঘু দাস।স্ত্রী প্রতিমা দাস আর চার কন্যা নিয়ে দরিদ্র এই দীনমজুরের সংসার।দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের হাল ফেরাতে সংসারের দায়িত্ব সামলে স্বামীর সাথে দীনমজুরের কাজে হাত লাগায় প্রতিমা।চার মেয়েকে নিয়ে দিব্যি চলছিল দরিদ্র এই দীনমজুরের পরিবারের সুখের সংসার।দুই মেয়ে কে বিয়েও দিয়ে দেয় দরিদ্র পরিবারটি। অগত্যা গত সাত বছর আগেই ২০১৩ সালে দরিদ্র এই পরিবারে নেমে আসে মহাবিপর্যয়।

আচমকা মৃত্যু হয় পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী রঘু দাসের।দুই নাবালিকা কন্যা কে নিয়ে আরো অসহায় হয়ে পড়েন প্রতিমা।এলাকার বাবুদের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে কোন রকমে দুই মেয়ে কে মানুষ করার চেষ্টা চালাতে থাকেন।মেয়েদের কে স্কুলেও ভর্তি করেন। সেজো মেয়ে সাগরিকা দাস পড়াশোনা অত্যন্ত মেধাবী।টাকার অভাবে হাইস্কুলে ভর্তি করা হয়ে ওঠেনি।
ইতিমধ্যে একটু বেশি পয়সার কাজ পেয়ে যায় প্রতিমা। স্থানীয় নির্দেশখালি পুলিশ ফাঁড়িতে রান্না করার কাজ করেন। সেই সুবাদে সেজো মেয়েকে গ্রামেরই ঋতুভকত উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেনীতে ভর্তি করেন।ইতিমধ্যে সেজো মেয়ে সাগরিকার দাঁতের রোগের সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসা করাতে গিয়ে অর্থনৈতিক অবস্থা করুণ হওয়ায় হিমশীম খেতে হয়। যতটুকু সঞ্চয় ছিল সবই শেষ।কখনও অর্ধাহারে কখনও বা অনাহারে দিন কাটালেও মেয়ের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন জায়গায় দরবার করেন প্রতিমা। কোথাও কোন প্রকার সাহায্য না মেলায় হতাশ হয়ে পড়েন প্রতিমা ও তাঁর দুই নাবালিকা কন্যা।ফলে এক প্রকার প্রায় বিনা চিকিৎসায় মরণাপন্ন হয়ে পড়ে সাগরিকা।সাক্ষাৎ মৃত্যু যেন বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে।

নির্দেশখালি গ্রামের দাস পরিবারের এমন করুণ অসহায় পরিস্থিতির কথা জানতে পারেন স্থানীয় যুবক মেহেদি হাসান সেখ।তিনি এই দরিদ্র হিন্দু পরিবারের সাথে কথা বলেন।পাশাপাশি দরিদ্র পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে সমস্ত চিকিৎসা খরচ বহন করতে রাজী হন এবং অসহায় দাস পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে দুই কন্যা কে আগামী দিনে পড়াশোনার সমস্ত দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।


এমত অবস্থায় হাসি ফোটে দাস পরিবারের মুখে।মেহেদি হাসানের উদ্যোগে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে শুরু হয় চিকিৎসা।দরিদ্র পরিবারের অসহায়তার কথা জানতে পেরে সম্পূর্ণ বিনা ব্যয়ে চিকিৎসা করতে রাজী হয়ে যায় স্থানীয় পানিখালি বাজারের “আশীর্বাদ” নার্সিং হোমের দন্ত বিশেষঞ্জ চিকিৎসক ওবায়দুর রহমান সেখ।অন্যদিকে স্থানীয় যুবক মেহেদি হাসান সেখ দরিদ্র এই পরিবার কে ওষুধপত্র কিনে দেওয়া সহ অন্যান্য আনুসাঙ্গিক খরচ হিসাবে প্রায় ৭ হাজার টাকা খরচ করেন।

আশীর্বাদ নার্সিংহোমের দন্ত বিশেষঞ্জ চিকিৎসক ওবায়দুর রহমান সেখ জানিয়েছেন “সাগরিকার মুখ গহ্বরে দাঁতের মারাত্মক সমস্যা ছিল দীর্ঘ দিনের। প্রতিনিয়ত যন্ত্রনায় ছটফট করতো।চিকিৎসা করাতে আরো দেরী হলে এই নাবালিকাকে তার সমস্ত দাঁত গুলো হারাতে হতো। জরুরী চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল। চিকিৎসা করার সামর্থ না থাকা অসহায় হয়ে পড়েছিলেন দরিদ্র এই পরিবারটি।অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পেরে চিকিৎসক হিসাবে নিজেকে ধন্য মনে হয়েছে।”
অন্যদিকে প্রতিমা দেবী জানিয়েছেন ”মেহেদি বাবুর মতো লোক আমাদের মতো দরিদ্র পরিবারের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দিলে কি যে হতো তা একমাত্র ঈশ্বরই জানেন।মেহেদি বাবু ও চিকিৎসক ওবায়দুর রহমান কে অসংখ্য ধন্যবাদ।”