শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

 ১ লক্ষ বৃক্ষ রোপণ করে সবুজায়ন করার উদ্যোগ সুন্দরবনের প্রতিবন্ধী যুককের

News Sundarban.com :
সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২০
news-image

বিশ্লেষণ মজুমদার, সুন্দরবন

যত্রতত্র গাছ কেটে মুনাফা লোটার চেষ্টা করছেন বেশ কিছু অসাধু মানুষজন। তারপর করোনা তান্ডবে দীর্ঘ লকডাউন চলায় সবুজ পরিবেশে দূষণের মাত্রা অনেকাংশে কমে যায়।ঝলমলিয়ে ওঠে সুন্দরবনের সবুজ পরিবেশ। আর এরই মধ্যে গত ২০ মে আম্ফান সাইক্লোন ঝড় সুন্দরবনের বুকে আছড়ে পড়ায় প্রচুর সংখ্যক গাছপালা ভেঙে পড়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।তছনছ করে দেয় গোটা সুন্দরবন। ক্ষতি হয় সবুজ পরিবেশ,নদীবাঁধও।আম্ফানের আগেও দাপট দেখিয়ে সুন্দরবন কে ধ্বংস করার জন্য উদগ্রীব হয়েছিল আয়লা,ফণী কিংবা বুলবুলের মতো ভয়ানক প্রাকৃতিক ঝড়। কিন্তু সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ জঙ্গল অরণ্য তা হতে দেয়নি।বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকমের প্রকৃতিক দুর্যোগ সুন্দরবনের বুকে আছড়ে পড়ায় প্রায়ই ভয়াবহ ক্ষতির সম্মূখীন হতে হয় সুন্দরবন কে।একমাত্র সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য জঙ্গলের জন্য পঞ্চাশ লক্ষ সুন্দরবনবাসী প্রাণে বেঁচে রয়েছেন। এমনকি কলকাতাও। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য না থাকলে কলকাতাও অনেক আগেই বিলীন হয়ে যেত পৃথিবীর মানচিত্র থেকে। ভয়াবহ ক্ষতির হাত থেকে সুন্দরবন কে সবুজে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ গ্রহণ করে রাজ্য সরকার।পাঁচ কোটি ম্যানগ্রোভ রোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

সেইমতো সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে ম্যানগ্রোভ রোপণের কাজ শুরু হয়।বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় “১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইতিমধ্যে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় দুকোটি ম্যানগ্রোভ রোপণের কাজ শেষ হয়েছে।আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত আরো তিনকোটি ম্যানগ্রোভ রোপণের কাজ শেষ হবে।”
সুন্দরবন কে সবুজান করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে যখন রাজ্য সরকার দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে,ঠিক সেই মুহূর্তে সুন্দরবনের বিভিন্ন রাস্তা গুলির পাশে সবুজায়ন করার উদ্যোগ নিলেন প্রতিবন্ধী এক যুবক। বছর পঁয়ত্রিশ বয়সের প্রতিবন্ধী যুবক খোকন মন্ডলের উদ্যোগে ইতিমধ্যে গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে বাসন্তী হাইওয়ে রাস্তার পাশে বৃক্ষরোপণের কাজ শুরু হয়েছে।এছাড়া ক্যানিংয়ের দিঘীরপাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের ইটখোলার মাঝেরপাড়া,তালদির বাইশসোন-চাঁদখালি,ক্যানিংয়ের মাতলা ব্রীজ সংলগ্ন বৈতরণী শশ্মান ঘাট রাস্তার পাশে ইতিমধ্যে কয়েক হাজার বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে।শুধুমাত্র বৃক্ষরোপণ করে সবুজায়ন করার লক্ষ্য তা নয়। প্রতিবন্ধী খোকন আম্ফান পরবর্তী সময়ে দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে গিয়ে পানীয় জল,খাদ্যসামগ্রী,ত্রিপল,বেবীফুড,পোশাক এমন কি নগদ অর্থও প্রদান করেছেন প্রায় সাড়ে ছয় হাজার অসহায় দরিদ্র মানুজন কে।

প্রতিবন্ধী খোকন জানিয়ে “মানুষ কে শুধুমাত্র ত্রাণ দিলে তো আর হবে না।সাধারণ মানুষজন যাতে করে প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে বিশুদ্ধ অক্সিজেন পায়,মনোরম পরিবেশে বাঁচতে পারে,তারজন্য বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ নিয়েছি।আগামী দুবছরের মধ্যে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন রাস্তার পাশে এক লক্ষ বৃক্ষরোপণের পরিকল্পনা রয়েছে। রাস্তার পাশে বৃক্ষ রোপণের ফলে একদিকে রাস্তার ক্ষয় কম হবে,সাধারণ মানুষও গ্রীষ্মেকালে রাস্তার পাশে গাছের ছায়ায় বসতে পারবেন। তাছাড়াও রাস্তার দুপাশে গাছ থাকলে একদিকে যেমন সৌন্দ্যর্য বাড়বে তেমনই প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা পাবে। অনেক সময় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও রোধ করতে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করবে এই সমস্ত বৃক্ষগুলি।কারণ প্রবাদে আছে একটি গাছ,একটি প্রাণ”।