শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সুন্দরবনে অকাল বোধনী মনসা ভেলা পূজোয় মেতে ওঠেন গ্রামবাসীরা

News Sundarban.com :
সেপ্টেম্বর ৫, ২০২০
news-image

বিশ্লেষণ মজুমদার, ক্যানিং –

২০০১ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার প্রত্যন্ত সুন্দরবনের ক্যানিং ১ ব্লকের ইটখোলা পঞ্চায়েতের দক্ষিণ বুধোখালী গ্রামে ভ্রাদ্র মাসে ব্যাপক হারে সাপের উপদ্রপ দেখা দেয় এবং সেই সময় হিন্দু-মুসলিম পরিবারে সাপের কামড় পর পর বেশ কয়েকজন গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়। সেই সময়ের কুসংস্কার রীতিনীতি অনুযায়ী কলার ভেলায় করে মৃতদেহ গুলি মাতলা নদী বক্ষে ভাসিয়ে দেওয়া হতো। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস যদি মৃতদেহে পুনরায় জীবনের সঞ্চার হয়। সাপের কামড়ে মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় আতঙ্কে গ্রামবাসীরা পালিয়ে অন্য গ্রামে চলেও যান।তা স্বত্বেও আতঙ্কের পরিবেশ কমেনি বরং বেড়েছিল সাপের কামড়ে মৃতের সংখ্যা।বছরের পর বছর সাপের কামড়ে মড়ক লাগায় অবশেষে আজ থেকে প্রায় ১৯ বছর আগে পাড়ার মোড়লরা-মাতব্বররা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন “অকাল বোধনী মনসা পূজো দিয়ে মাতলা নদীতে কলার ভেলা(মান্দাস) ভাসিয়ে” দিয়ে মা মনসাকে সন্তুষ্টী করে গ্রামে বসবাস করা হবে।আশ্চর্য্যের বিষয় সেই অকাল বোধনী মনসা পূজো দিয়ে কলার ভেলা নদীতে ভাসানো শুরু হতেই বন্ধ হয় সাপের উপদ্রপ।এরপরই গ্রামের মানুষজন গ্রামেই ফিরেই বসবাস শুরু করেন। সেই ১৯ বছর আগের নিয়মনীতি অনুযায়ী আজ ও ইটখোলাগ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ বুধোখালি গ্রামের সকল হিন্দু পরিবার গুলি আশ্বিণ মাসে দেবী দশভূজার আগমনের আগেই অকাল বোধনী মনসা পুজোয় মেতে ওঠেন।

ক্যানিং ১ ব্লকের ইটখোলা পঞ্চায়েতের দক্ষিণ বুধোখালি আদি জয় মাকালি যুবক সংঘ অতিতের সেই সমস্ত নিয়ম মেনে ৫ সেপ্টেম্বর শনিবার শুরু করে ১৯ তম অকাল বোধনী মনসা পূজো এবং মাতলা নদীবক্ষে ভেলা ভাসানো অনুষ্ঠান হয়।গ্রামের সাধারণ গৃহবধুরা নদীবক্ষে সাজানো কলার ভেলায় নৈবেদ্য সাজিয়ে দুধ কলা সহযোগে ভক্তি সহকারে পুজো দিয়ে গ্রামের মঙ্গল কামনা করেন। পুজো শেষে গ্রামের যুবকরা নদীবক্ষে ভেলা ভাসিয়ে দেয়।এমই অনুষ্ঠান উপলক্ষে এলাকায় প্রচুর মানুষের জমায়েত হয় এমনকি ক্যানিং মহকুমার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাধারণ মানুষজন এমন ভেলা ভাসানো অনুষ্ঠান দেখতে আসেন।
ক্যানিং থেকে দিবাকর সরকার,ফারুক আহমেদ সরদার,তন্ময় হালদার,শাহরুখ লস্কর বলেন “দীর্ঘদিন ধরে এমন লৌকিক কলার ভেলা ভাসানো অনুষ্ঠানের কথা বাড়িতে বাবা-মায়ের কাছে শুনতাম। আজ তা স্বচক্ষে দেখে উপলব্ধি করলাম।”