শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ব্রীজ সংস্কারের কাজ চলছে শম্বুক গতিতে, চরম বিপদে পড়তে হচ্ছে রোগীদের 

News Sundarban.com :
আগস্ট ২৬, ২০২০
news-image

বিশ্লেষণ মজুমদার, ক্যানিং :

ব্রীজের কাজ চলছে শম্বুক গতিতে! আর ১৩ কিলোমিটার রাস্তায় যাতায়াত খরচ মাত্র ৮০ টাকা!অবিশ্বাস্য হলেও এটাই বাস্তব। খোদ পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী শহর কলকাতা থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে। ক্যানিং থেকে হেড়োভাঙ্গা পর্যন্ত মাত্র ১৩ কিলোমিটার রাস্তা যাতায়াত করতে সাধারণ দীনমজুর থেকে সরকারী কর্মচারীদের কে ৮০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। ৮০ টাকা খরচ হলেও শান্তি নেই! সন্ধ্যা ৭ টা বাজলেই ৮০ টাকার পরিবর্তে ৩০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়া করতে হয় যাতায়াতের জন্য। বিগত করোনার আগেই এই ক্যানিং-হেড়োভাঙ্গা রোডে যাতায়াত ভাড়া ছিল ৩৪ টাকা।করোনা তান্ডবের পর সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে যাত্রীদের নিয়ে অটোগুলি যাতায়াত করার কথা। আর সেই কারনে ৩৪ টাকা ভাড়ার পরিবর্তে একলাফে বেড়ে দাঁড়ায় ৬০ টাকা। সামাজিক দুরত্ব দূরঃঅস্ত!আইন কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এক একটি যাত্রীবাহী অটো ৬-৭ জন যাত্রী নিয়ে অবাধে যাতায়াত করছে পুলিশ প্রশাসনের নাকের ডগায়।অথচ গরীব মানুষের পকেট কেটে ভাড়া দ্বিগুণ হয়েছে।

অন্যদিকে এই রোডের উপর সাতমূখী এলাকায় একটি ব্রীজ সংস্কারের কাজ চলায় বর্তমানে ব্রীজটি তে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর এই ব্রীজ বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত টাকা খরচ করেও নাজেহাল হতে হচ্ছে সাধারন মানুষকে। পাশাপাশি চরম বিপদে পড়তে হচ্ছে পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া রোগীদের ক্ষেত্রেও। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে চরম সমস্যায় পড়েছেন স্থানীয় এলাকার গর্ভবতী মা থেকে সাপে কামড়ানো রোগী সহ অন্যান্য রোগীরা। ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য অতিরিক্ত ৬ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হচ্ছে।

আর এখানেও সুযোগ নিচ্ছে ক্যানিং-হেড়োভাঙ্গা রোডের অটোচালকরা। ক্যানিং সাতমুখী ৬ কিলোমিটার রাস্তায় অটো ভাড়া ২০ টাকা এবং সাতমূখী-হেড়োভাঙ্গা ৭ কিলোমিটারে ২০ টাকা ভাড়া। সর্বসাকুল্যে ১৩ কিলোমিটার রাস্তা যাতায়াত করতে একজন সাধারণ মানুষকে ৮০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে!
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অন্যতম তথা সুন্দরবনের সিংহ দূয়ার অথবা প্রবেশদ্বার নামে খ্যাত ক্যানিং শহর।আর এই ব্রিটিশ আমলের ক্যানিং শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হেড়োভাঙ্গা।খোদ শহর ক্যানিংয়ে যাতে করে সাধারণ মানুষের যাতায়াতের সুবিধা হয় তার জন্য ছয়ের দশকে এই রাস্তাটি তৈরী করেছিলেন তৎকালীন ক্যানিংয়ের জাতীয় কংগ্রেসের বিধায়ক আব্দুর শুক্কুর সাহেব। রাস্তাটির ও নাম করণ হয় শুক্কুর সাহেব রোড় নামে।প্রথম দিকে টেম্পূগাড়ি,হাফবাস,লরি চলাচল করতো। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়ে বাস,ম্যাজিক,অটো,টোটো সহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে।আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে শুক্কুর সাহেব রোডের নাম পরিবর্তন হয়ে ক্যানিং-হেড়োভাঙ্গা রোড হয়েছে। সব কিছুতেই আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও সন্ধ্যা নামলেই চরম বিপদে পড়তে হয় এই রোডের সাধারণ যাত্রীদের। যাতায়াতের কোন যানবাহনই চলাচল করে না। তবে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিলেই কিংবা গাড়ি রিজার্ভ করলেই তবেই মিলবে সুরাহা।অন্যদিকে এই রোডের সাতমুখী ব্রিজটি যানচলাচলের অযোগ্য হয়ে যায়। ব্রীজটি সংস্কারের জন্য ৩৫ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়।ব্রীজ সংস্কারের নামে কাজ চলছে শম্বুক গতিতে। যা সাধারণ মানুষ কে আরো বেশি করে বিপদের সম্মুখে ঠেলে ফেলে দিয়েছে। কবে এই ব্রীজ সংস্কারের কাজ শেষ হবে?কবেই বা যান চলাচলা স্বাভাবিক হবে?এমন সব প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষ রয়েছেন চরম হতাশায়।

এ বিষয়ে স্থানীয় ক্যানিং পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক শ্যামল মন্ডল বলেন “করোনা আর আম্ফানের দাপটে সাধারণ মানুষ সর্বশান্ত হয়ে গিয়েছেন। রয়েছেন চরম বিপদের মধ্যে।আয় নেই,তারপর অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।সাধারণ মানুষ চরম দুর্দশায় পড়বে এটা কখনও মেনে নেওয়া যায় না।সাতমুখী ব্রীজ দিয়ে সাধারণ যানবাহন যাতে আগামী সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে চলাচল করতে পারে তার জন্য দ্রুততার সাথে কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছি।”