শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আজ মহম্মদ রফির ৪১ তম মৃত্যু বর্ষে তাঁর প্রতি জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলি

News Sundarban.com :
জুলাই ৩১, ২০২০
news-image

সুভাষ চন্দ্র দাশ, ক্যানিং : 

১৯৮০ সালের ৩১জুলাই বিকাল সাড়ে চারটে।এই বিশেষ তারিখ টা বড়ই দুঃখময় বেদনা দায়ক। এই দিনটা সমগ্র ভারতীয় সঙ্গীত জগতের এক করুণ ও শোকের দিন। এই দিনটায় এশিয়া মহাদেশের  ও ভারতের এই শতাব্দীর মহানতম  সঙ্গীত শিল্পী মহম্মদ রফির মৃত্যু দিন। যা ৪১ বছর পরে ও মনে হয় যেন এই তো মাত্র কয়েক বছরের ঘটনা।
মহম্মদ রফির জন্ম ১৯২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর। ছোটবেলা থেকেই রফি সাহেবের সঙ্গীতের প্রতি খুবই অদম্য ঝোঁক ছিল। একবার তৎকালীন গায়ক কে এল সায়গল(কুন্দন লাল সায়গল) সাহেব রফি সাহেবের গ্রামে একটি অনুষ্ঠানে এসেছিলেন।অনুষ্ঠান চলাকালীন আচমকা লোডশেডিং হয়ে অন্ধকার হয়ে যায়। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে ১৬ -১৭ বছরের রফি খালি গলায় উত্তেজিত জনতার সামনে গান গেয়ে সবার মন জয় করে নেন। তারপর শুরু হয় এক নতুন ইতিহাসের অধ্যায়। ১৯৪০ এ শ্যামসুন্দরের সঙ্গীতে প্রথম এক পাঞ্জাবী ছবি “গুলাবলোজ”  এ গেয়েছেন ‘সোনিয়ে হিরিয়ে জানিয়ে’ গানটি। তারপর ১৯৪৩ এ নওসাদের সঙ্গীতে কে এল সায়গলের সাথে ‘পহেলে আপ’ ছবিতে প্রথম প্লে ব্যাক করেন। ‘হিন্দুস্থান কে হ্যাম হ্যায়’ ও ১৯৪৬ এর মে মাসে ‘মেরে স্বপ্নো কি রানি’ তে ‘রাই রাই’ গানটি গেয়ে তিনি আলোড়ন ফেলে দেন। তারপর একের পর এক কালজয়ী গান গেয়েছেন। মহম্মদ রফির কালজয়ী গানের জন্য যেসব অভিনেতাদের কথা প্রথমে বলতে হয় তাঁরা হলেন শাম্মী কাপুর,রাজেন্দ্র কুমার,দিলীপ কুমার,দেবআনন্দ,রাজকুমার । এমন কি রাজ কাপুরের জন্যও অনেক ছবিতে ও গান গেয়েছেন তিনি। মাত্র ৫৬ বছর বয়সে কয়েক হাজার ছায়াছবি ও বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় ২৬ হাজারের ও বেশি গান তিনি গেয়েছেন। তাঁর গাওয়া গানের উল্লেখযোগ্য কিছু ছবির নাম—‘মাদার ইন্ডিয়া,কালাবাজার,কালাপানি,রাজকুমার,সরগম,কাশ্মীর কি কলি,কন্যাদান,আপ আয়ে বাহার আয়ে,বৈজুবাওরা,প্রফেসর,আই মিলন কি বেলা,গুমনাম,সুহাগ,নসীব,রাম আউর শ্যাম,সুরজ মেরে সনম,ধরতি,হকিকৎ,ফুলবনে অঙ্গারে‘মেরে হুজুর,লায়লা মজনু,ওয়ারিশ, প্রিন্স,জিনে কি রাহ,দেশপ্রেমী,আন্দাজ,চা-চা-চা,বরসাত,গাইড,আদমি,আরাধনা,আবদুল্লা,ধরমবীর,ঊন্নিশ-বিশ,বারদাত,সিমা,জংলি,জানোয়ার,ইভনিং,ইন প্যারিস,লাভ অ্যান্ড গড,লাভ ইন টোকিও,পিয়াসা,সিআইডি,মধুমতি,বচপন,সংঘর্ষ,আদালত,জগনু ইত্যাদি। তিনি “জগনু” ছবিতে দিলীপ কুমারের সাথে অভিনয় ও করেন। সালটা ছিল ১৯৪৮। ছবিটির সুরকার ছিলেন ফিরোজ নাজমী। নওসাদের ছবিতে শেষ গান টি হল “ধরম কাঁটা” ছবির ‘দিলকে ধরম কাঁটে মে——————
সঙ্গে ছিলেন ভুপিন্দর সিং। কল্যাণজি-আনন্দজির সুরে প্রথম গান “সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত” ছবিতে ‘চাহে পাস হো চা হে দূর হো————’ ,সঙ্গে লতা মঙ্গেশকর । রাহুলদেব বর্মনের সুরে প্রথম মেহমুদের ছবি “ছোটে নবাবের” গান এলাহি সদাতু ———,শেষ গানটি ছিল “শান” ছবির “ইয়াম্মা ইয়াম্মা”————এই গানটি তাঁকে সঙ্গ দিয়েছিলেন বিখ্যাত সুরকার পঞ্চম ’দা তথা স্বয়ং রাহুলদেব বর্মন নিজেই। রাজকুমারের “বরসাত”১৯৪৭ এ শঙ্কর জয়কিশাণ এর সঙ্গীতে প্রথম গান “ম্যায় জিন্দেগী মে হরদম রোতাহি রাহা হুঁ” শেষ গানটি হল “রতন” ছবির “জমানা হ্যায় মগর হাম না হোঙ্গে”। লক্ষ্মীকান্ত প্যায়ারেলাল এর সুরে প্রথম গানটি গেয়েছিলেন “ছায়লাবাবু”র “তেরে প্যারনে মুঝে গম দিয়া” এবং শেষ শুধু শেষ নয় ,রফি সাহেবের ও জীবনের শেষ গান। যেটি রেকর্ডিং হয় তার মৃত্যুর মাত্র চারদিন আগে। ২৬ জুলাই ১৯৮০ এর “আসপাশ” ছবির জন্য সেই গানটি ছিল “তেরে আসে কী আম হ্যায় দোস্ত ,শ্যাম ফির কিঁউ উদাস হ্যায় দোস্ত, মেহেকি হারায়ে ক্যাহাতে হ্যায়,তু কহি অাসপাস হ্যায় দোস্ত ————তু কহি আসপাস হ্যায় দোস্ত।

১৯৮০ সালে রফি সাহেবের মৃত্যু হয় । কিন্তু মৃত্যুর পরেও মহম্মদ রফির কন্ঠে যে সব গান পরবর্তীকালে রিলিজ হয় , সেই গান গুলি ও সমান ভাবে জনপ্রিয় হয়। অনেকে বলেন যে ,১৯৬৪ সালে “গাইড” ছবি রিলিজ হওয়ার পর মহম্মদ রফির জীবনে ভাটা আসে। তবে তৎকালীন সময়ে রিলিজ ছবি “সুরাজ” এর “বাহারো ফুল বরসায়ো” ,“মেরা মেহেবুর আয়া হ্যায়” ১৯৬৬ সালে বিনাকা গীতমালার প্রথম স্থান পায় । এ থেকে বোঝা যায় ওই কথার কোন গুরুত্ব নেই। সাতের দশকে যখন সিনেমায় আসেন তখন রফি সাহেব আর কিশোর কুমার সমান ভাবেই জনপ্রিয় ছিলেন। একই সময় অমিতাভ বচ্চনও সিনেমা জগতে আসেন। “তেরে বিন্দিয়া রে” সুপার ডুপার হিট হয়। সাধারণত তখন অমিতাভ এর অভিনীত ছবি গুলোয় গানের জায়গা খুব কম থাকতো। তবু ও দেখা যায় “সুহাগ” , “নসীব”,দ্য গ্রেট গ্যাম্বলার” ,“পরওয়ানা” ,অমর আকবর অ্যান্টনী” ,“কালিয়া”,“মজবুর”,”জঞ্জীর” সহ অসংখ্য ছবির  গান হিট হয়। আমরা অনেকেই জানি না যে ,১৯৫৮ সালে মহানায়ক উত্তম কুমার অভিনিত বাংলা ছবি “ইন্দ্রানী”তে গান গেয়েছেন মহম্মদ রফি। আবার ১৯৬৭ সালে উত্তম কুমার অভিনীত প্রথম হিন্দী ছবি “ছোটি সি মুলাকাত” এর সব গান উত্তমকুমারের লিপে গেয়েছিলেন রফি সাহেব । রফির মৃত্যুর পর ১৯৯০ সালে রিলিজ হয় গোবিন্দা অভিনীত ছবি “ফর্জ কি জঙ্গ” ছবিতে আমরা শুনতে পাই শেষ গান “ফুল কা সাবাব কা”। ১৯৮০ সালের পর যেসব ছবি রিলিজ হয় তারমধ্যে মিঠুন চক্রবর্তী অভিনীত “উন্নিশ বিশ” এমন একটি  উল্লেখযোগ্য ছবি যে আজকের উদিত নারায়ণ রফি সাহেবের সঙ্গে প্রথম হিন্দী গান গেয়েছেন।  “চলোরে ডোলি উঠাও কাহার,তেরে হাতোমে পহেনকে চুড়িয়া লোগোসে,আশাওকে শাওন মে,হাম তো চলে পরদেশ” । “পরবত কি উসপার,কোয়েল বোলি দুনিয়া জেলি,কাঁহা তেরা ইনসাফ হ্যায় , মুঝে মত রোকো রামজিকে নিকলি সবারী(সরগম) ” সহ কাতিলোকে কাতিল ,জমানেকোদিখানা হ্যায়,আপকে দিবানে আপতো অ্যায়সে মানে ,রাখওয়ালা,দোস্তানা,তকদির কা বাদশা,ওয়ার্দাত,হিরো কা চোর,মেরা ধরম মেরা করম,ধরমবীর,আতিশ,মিঃ নটবরলাল,গঙ্গা কি সৌগন্ধ, আসপাস,কালাপাথর, দেবতা, সুরক্ষা, বিন ফেরে হাম তেরে, সাজন কি সহেলী সহ  একাধিক ছবির হিট গান গেয়েছেন মহম্মদ রফি সাহেব। দেশপ্রেমীতে নফরত কি লাঠি তোরে,ডিসকে লিয়ে সবকো ছোড়া, ও মেরে মেহেবুবা,চল মুসাফির তরা কদম,ভিগি ভিগি রুক হ্যায়,কোন কিসকো বাঁধ সাকা হ্যায়,মেরে দোস্ত কিসস্যা এ কেয়া হো গ্যায়া, তু ইস তারা সে মেরে জিন্দেগিমে সামিল হ্যায়,মেরে মোরনি মেরে চোরনি,পুছো না ইয়ার কেয়া হুয়া,কোই চল দিয়া আকেলা,তু মেরে স্বপ্নো কি রানি বানেগি,তেরে গলিওমে না রাখেঙ্গে কদম,আদমি মুসাফির  হ্যায়,তুম জো মিল গ্যায়ে হো,পত্তা পত্তা বুটা বুটা,দর্দে দিল জিগর  সহ অসংখ্য হিট গান অাছে তাঁ কন্ঠে। আজকের রিমেক্সের যুগে নতুন প্রজন্মও সেই পুরনো গান ——ও দুনিয়াকে রাখওয়ালে,ওদুরকে মুসাফির  বা  সুহানী রাত ঢল চুকি গান শুনে এখনও মনে হয় ,তখন যদি এতৌ উন্নত সাঊন্ড থাকতো তাহলে ঐ সব ইতিহাস গড়া গান আরো ভালো ও সুন্দর হতো।
“আজ মহম্মদ রফির ৪১ তম মৃত্যু বর্ষে তাঁর প্রতি জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলি”।