শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দাবানলে ১২০ কোটি বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হয়েছে,ডব্লিউ ডব্লিউ এফ-এর নতুন পরিসংখ্যান

News Sundarban.com :
জুলাই ৩০, ২০২০
news-image

অস্ট্রেলিয়ার বিধ্বংসী দাবানলে স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ এবং পাখিসহ কম পক্ষে ৩ শ’ কোটি প্রাণী মারা গিয়েছে বা বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার-এর (ডব্লিউ ডব্লিউ এফ) সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। WWF-এর এই রিপোর্টই মঙ্গলবারই প্রকাশিত হয়। ২০১৯-২০২০ মৌসুমের দাবানল দেশের বন্যজীবনের ওপর কী প্রভাব ফেলেছে, প্রথমবার তা নিয়ে কোনও বিশদ রিপোর্ট প্রকাশ করল অস্ট্রেলিয়ার এই সংস্থাটি। এই দাবানলকে আধুনিক ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ বন্যপ্রাণী বিপর্যয় বলে উল্লেখ করেছে ডব্লিউ ডব্লিউ এফ। – আল জাজিরা

ডব্লিউ ডব্লিউ এফ-এর নতুন পরিসংখ্যান আগের হিসেবের প্রায় তিন গুণ। গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত আগের এক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, দাবানলে ১২০ কোটি বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হয়েছে।

রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, মৃত বা বাস্তুচ্যুত সরীসৃপের সংখ্যা ২৪৬ কোটি। এ ছাড়া ১৮ কোটি পাখি, ১৪ কোটি ৩০ লাখ স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ৫ কোটি ১০ লাখ ব্যাঙ হয় মারা গিয়েছে নয়তো বাস্তুচ্যুত হয়েছে। পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে অমেরুদণ্ডী প্রাণী, মাছ ও কচ্ছপ এই হিসাবের তালিকায় আসেনি।

গত ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার সরকার জানিয়েছিল, দাবানলের পর অন্তত ১১ কোটি ৩০ লাখ প্রাণীর জরুরি সাহায্য প্রয়োজন। এসবের মধ্যে ছিল কোয়ালা, ওয়ালাবী, পাখি, মাছ ও ব্যাঙ জাতীয় নানা প্রাণীকুল। ওই তালিকার অন্তত ৩০ শতাংশই প্রচণ্ড তাপের কারণে দক্ষিণ ও পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার বনে তাদের বাসস্থান হারিয়েছে।

সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়, নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়, নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়, চার্লস স্টার্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং বার্ডলাইফ অস্ট্রেলিয়ার ১০ বিজ্ঞানী মিলে সমীক্ষা চালিয়ে এই বিশদ রিপোর্টটি তৈরি করেন। নেতৃত্বে রয়েছেন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লিলি ভ্যান ইডেন এবং ক্রিস ডিকম্যান।

ক্রিস ডিকম্যানের কথায়, ‘যখন আপনি কল্পনা করবেন যে আপনার স্থানীয় ৩ শ’ কোটি প্রাণী আগুনের শিকার হয়েছে, এটা আসলে অনেক বড়—এই সংখ্যাটি মেনে নেয়াও কঠিন!’

ডিকম্যান বলেন, ‘মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যাটি এখনও তারা বের করতে পারেননি। কিন্তু, ধারণা করছেন, আগুনের লেলিহান শিখা থেকে পালিয়ে এসে বেঁচে থাকার সংখ্যাটি খুবই কম।’ তার ধারণা, পরবর্তীতে খাদ্যাভাব, বাসস্থানের অভাবের পাশাপাশি শিকারিদের হাত থেকে তাদের নিস্তার পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

এ গবেষণা প্রকল্পের অন্যতম লিলি ভ্যান ইডেনের বক্তব্য, ‘মহাদেশব্যাপী ক্ষতিগ্রস্ত প্রাণীর এমন হিসাব অস্ট্রেলিয়া বা বিশ্বের অন্য কোথাও আগে করা হয়নি। অন্যান্য দেশ এই গবেষণার ওপর ভিত্তি করে দাবানলের প্রভাব বুঝতে পারবে।’

বণ্যপ্রাণী ও তাদের বাসস্থান পুনরুদ্ধারে ২ কোটি ৭০ লাখ ডলারের বাজেট ঘোষণা করেছে অস্ট্রেলিয়া সরকার। যদিও পরিবেশবিদরা চাইছেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনটা আরও শক্তিশালী ও কঠোর করুক সরকার।

গত অক্টোবর মাসে সূচিত হওয়া এই দাবানলের কারণ অনুসন্ধান করছে রয়্যাল কমিশন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, দাবানলের এতটা নজিরবিহীন পৌনঃপৌনিকতা আর নির্মমতা মূলত জলবায়ু পরিবর্তনেরই ফল।

গত গ্রীষ্মে অস্ট্রেলিয়ার প্রায় প্রতিটি রাজ্যকেই ছোবল মারে দাবানল। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় তাসমানিয়ায়। দাবানলে সর্বগ্রাসী আগুনে বনজঙ্গল পুরে ছারখার হওয়ার পাশপাশি বনবাসী অসংখ্য প্রাণী মারা যায়। মৃত্যু হয় কম পক্ষে ৩৩ জন মানুষের। তবে বিশেষজ্ঞদের অনুমান, অন্তত ৪৪৫ জন মানুষ মারা গিয়েছেন।