শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় ৩৯ লাখ শিশু তীব্র রুগ্নতার শিকার হতে পারে

News Sundarban.com :
জুলাই ২৮, ২০২০
news-image

করোনাভাইরাস মহামারির আর্থ-সামাজিক প্রভাবের কারণে ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় পাঁচ বছরের কম বয়সী বাড়তি ৩৯ লাখ শিশু তীব্র রুগ্নতার শিকার হতে পারে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে পড়তে পারে বলে উগ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ।

দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণ অনুসারে, বিশ্বব্যাপী ৬৭ লাখ শিশু তীব্র রুগ্নতার শিকার হতে পারে এবং এর অর্ধেকেরও বেশি (৫৮ শতাংশ বা ৩৯ লাখ) হতে পারে শুধু দক্ষিণ এশিয়াতেই।

মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো ইউনিসেফের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

তীব্র রুগ্নতা হচ্ছে অপুষ্টির এমন একটি রূপ যা জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। এটি শিশুদের খুব রুগ্ন ও দুর্বল করে দেয়। এটি তাদের মৃত্যু, সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশ না হওয়া এবং শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঝুঁকিতে ফেলে।

ইউনিসেফের মতে, কভিড-১৯ মহামারির আগেও ২০১৯ সালে ৪ কোটি ৭০ লাখ শিশু তীব্র রুগ্নতায় ভুগেছে, যাদের মধ্যে ১৭ লাখ শিশুর বসবাস বাংলাদেশে। জরুরি পদক্ষেপ না নিলে এ বছর বিশ্বব্যাপী তীব্র রুগ্নতায় ভোগা শিশুর সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৫ কোটি ৪০ লাখে পৌঁছতে পারে। এতে বৈশ্বিকভাবে শিশুদের তীব্র রুগ্নতায় ভোগার হার এমন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে, যা এই শতাব্দীতে আর দেখা যায়নি।

ল্যানসেটের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কভিড-১৯ এর আর্থ-সামাজিক প্রভাবের কারণে নিম্ন ও মধ্যম-আয়ের দেশগুলোতে এ বছর পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশুদের মাঝে তীব্র রুগ্নতার প্রাদুর্ভাব ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর হার এতো উচ্চমাত্রায় বৃদ্ধির অর্থ হচ্ছে- বাংলাদেশে তীব্র রুগ্নতায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ২০১৯ সালের ১৭ লাখ থেকে বেড়ে ২০২০ সালে ১৯ লাখ হবে।

মহামারির আগের সময়ের তুলনায় ২০২০ সালের এপ্রিলে নানাবিধ জটিলতা নিয়ে তীব্র রুগ্নতায় আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের ভর্তির হার কমে হয়েছিল কেবল ১০ শতাংশ। যদিও অপরিহার্য পুষ্টি সেবাসমূহ পুনরায় চালু হতে শুরু করেছে, তবে এসব সেবা এখনও তাদের যথাযথ সক্ষমতায় ফিরে যায়নি। মহামারি শুরুর আগের সময়ের তুলনায় ২০২০ সালের জুনে হাসপাতালে ভর্তির হার ছিল ৫৬ শতাংশ।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি তোমো হোজুমি বলেন, অপুষ্টি মা ও শিশুদের মধ্যে কভিড-১৯ এর প্রভাব আরও বাড়িয়ে দিতে পারে, যে সংকট পরবর্তী বহু প্রজন্ম পর্যন্ত জারি থাকতে পারে। অপরিহার্য পুষ্টি পরিষেবাগুলো যাতে সম্পূর্ণ সচল থাকে এবং বাবা-মায়েরা যাতে তাদের শিশুদের পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে নিরাপদ বোধ করে তা নিশ্চিত করতে বৃহত্তর প্রচেষ্টার প্রয়োজন।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর বলেন, কভিড-১৯ এ আক্রান্তের প্রথম ঘটনাটি জানার পর সাত মাস পেরিয়ে গেছে এবং এটা ক্রমেই অত্যন্ত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, এই রোগ শিশুদের যত না ক্ষতি করছে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করছে মহামারিজনিত পরিস্থিতি। পারিবারিক দারিদ্র্য এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার হার বেড়েছে। অপরিহার্য পুষ্টি পরিষেবা এবং সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়েছে। খাবারের দাম বেড়েছে। ফলস্বরূপ, শিশুদের খাবারের গুণগত মান হ্রাস পেয়েছে এবং এতে অপুষ্টির হারও বাড়বে।

জাতিসংঘের সংস্থাগুলো সতর্ক করে দিয়ে বলছে, তীব্র রুগ্নতায় শিশুদের হার বৃদ্ধির এই হিসাব বড় সমস্যার একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। নিম্নমানের খাবার ও পুষ্টিজনিত সেবাসমূহ বিঘ্নিত হওয়ার কারণে কভিড-১৯ শিশু ও নারীদের মাঝে অপুষ্টির অন্যান্য ধরনগুলোরও বৃদ্ধি ঘটাবে, যার মধ্যে রয়েছে খর্বাকৃতি, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টসের ঘাটতি এবং অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা। মহামারির প্রাদুর্ভাবের প্রথম দিকের মাসগুলোতে ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বৈশ্বিকভাবে অপরিহার্য এবং প্রায়শই জীবন রক্ষাকারী পুষ্টি পরিষেবাদিগুলোর আওতা সার্বিকভাবে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিছু দেশে লকডাউন ব্যবস্থার কারণে এই বিঘ্নের হার ৭৫ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশে পৌঁছেছে।

দ্য ল্যানসেটের প্রতিবেদনের বিষয়ে ইউনিসেফ, খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধানদের একটি সতর্কবাণীও আজ প্রকাশিত হয়েছে। এতে তারা বলেছেন, কভিড-১৯ মহামারির কারণে সারা বিশ্বে পুষ্টির ঘাটতি তৈরি হচ্ছে, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম-আয়ের দেশগুলোতে এবং এর সবচেয়ে খারাপ পরিণতি ভোগ করছে ছোট শিশুরা। নিম্নমানের খাবার, পুষ্টিসেবায় বিঘ্ন এবং মহামারি থেকে সৃষ্ট ভীতির কারণে অধিক সংখ্যক শিশু ও নারী অপুষ্টিতে আক্রান্ত হচ্ছে।

সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোতে মা ও শিশুদের পুষ্টি সুরক্ষা প্রদানে এখন থেকে চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত বৈশ্বিকভাবে মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর জরুরি ভিত্তিতে ২৪০ কোটি ডলার প্রয়োজন। জাতিসংঘের চারটি সংস্থার প্রধানরা শিশুদের পুষ্টির অধিকার রক্ষার জন্য সরকার, জনসাধারণ, দাতা এবং বেসরকারি খাতের কাছে কয়েকটি আবেদন জানিয়েছেন। সেগুলো হলো; খাদ্য উৎপাদনকারী, প্রক্রিয়াজতকারী এবং খুচরা বিক্রেতাদের সুরক্ষা দিয়ে; বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞাকে নিরুৎসাহিত করে; এবং খাদ্যপণ্যের বাজারকে অপরিহারয সেবার তালিকায় স্থান দিয়ে কভিড-১৯ মোকাবিলার ভিত্তি হিসেবে পুষ্টিকর, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী মূল্যের খাবার প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। শিশুকে স্তন্যদানের ক্ষেত্রে সুরক্ষা প্রদান করে, শিশুদের কৃত্রিম খাদ্য বা ফর্মুলার অনুপযুক্ত প্রচারণা বন্ধ করা এবং শিশু ও নারীরা যাতে পুষ্টিকর ও বৈচিত্রপূর্ণ খাবার পায় তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে মাতৃ ও শিশুর পুষ্টির জন্য সহায়তা হিসেবে সিদ্ধান্তমূলক বিনিয়োগ করা। জীবন রক্ষাকারী অন্যান্য পুষ্টি পরিষেবা বিস্তৃত করার পাশাপাশি শিশুদের তীব্র রুগ্নতাজনিত সমস্যা প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত ও চিকিৎসার জন্য সেবাসমূহ পুনরায় চালু ও জোরদার করা। স্কুল বন্ধ থাকাকালে পুষ্টিকর এবং নিরাপদ স্কুল মিল চালু রাখা এবং এ জন্য প্রয়োজনে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়া, বাড়িতে গিয়ে সহায়তা প্রদান করা, নগদ বা ভাউচারের মাধ্যমে ঝুঁকির মুখে থাকা শিশুদের কাছে পৌঁছানো; এবং সুরক্ষিত খাদ্যসামগ্রী প্রাপ্তির সুযোগসহ সবচেয়ে দরিদ্র ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে অপরিহার্য সেবাসমূহ ও পুষ্টিকর খাবার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সামাজিক সুরক্ষাসেবা বিস্তৃত করা।