শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকে আন্তর্জাতিক ম্যানগ্রোভ দিবসে ২২ লক্ষ ম্যানগ্রোভ গাছ রোপণ 

News Sundarban.com :
জুলাই ২৬, ২০২০
news-image

বিশ্লেষণ মজুমদার, ক্যানিং 

রবিবার সকাল থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সুন্দরবনের বিভিন্ন ব্লক গুলিতে ভাবে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক ম্যানগ্রোভ দিবস।ইতিমধ্যে সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকের ৬০০ হেক্টর ফাঁকা এলাকা চিহ্নিত করণ করে ২২ লক্ষ বিভিন্ন প্রজাতির ম্যানগ্রোভের চারাগাছ রোপণ করা হয়েছে।এই ব্লকে ২ কোটি ম্যানগ্রোভের চারা রোপণ করা হবে। আন্তর্জাতিক ম্যানগ্রোভ দিবসে গোসাবা ব্লকের কচুখালি গ্রাম পঞ্চায়েতের রামনগর মৌজায় নদী তীরবর্তী ৫ হেক্টর জায়গায় ১ লক্ষ বিভিন্ন প্রজাতির ম্যানগ্রোভ চারাগাছ রোপণ করেন গোসাবা বিডিও সৌরভ মিত্র,গোসাবা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অচিন পাইক,জেলা পরিষদের সদস্য অনিমেষ মন্ডল, পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ,পঞ্চায়েত প্রধান,পঞ্চায়েত সদস্য, বনকর্মী সহ অন্যান্যরা।গত ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তান্ডবে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রজাতির বহু ম্যানগ্রোভ গাছ নষ্ট হয়ে যায়।রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন সুন্দরবনে ৫ কোটি ম্যানগ্রোভ গাছ রোপণ রাজ্য সরকার।আর এই ঘোষণার পর থেকে শুরু হয়ে সুন্দরবনের বিভিন্ন অঞ্চলে ম্যানগ্রোভ বসানোর কাজ।

গোসাবা বিডিও সৌরভ মিত্র বলেন ইতিমধ্যে ২২ লক্ষ ম্যানগ্রোভ চারাগাছ বসানো হয়েছে গোসাবা ব্লকের ১৪ টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়।মোট ২ কোটি ম্যানগ্রোভ বসানো হবে এই গোসাবা ব্লকে।আন্তর্জাতিক ম্যানগ্রোভ দিবসে কচুখালি গ্রামপঞ্চায়েতের রামনগর মৌজায় এদিন ১ লক্ষ ম্যানগ্রোভ চারাগাছ বসানো হয়েছে।”
অন্যদিকে বাসন্তী ব্লকের মসজিদবাটি গ্রাম পঞ্চায়েত উপপ্রধান গৌর সরদারের নেতৃত্বে পঞ্চায়েতে এলাকার নদীর তীরে কয়েক হাজার ম্যানগ্রোভ চারাগাছ রোপণ করা হয়।পাশাপাশি ক্যানিং ১ ব্লকের মাতলা ১গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হরেন ঘোড়ুই ও উপপ্রধান প্রদীপ দাসের নেতৃত্বে মাতলা নদীর তীরে বিভিন্ন প্রজাতির কয়েক হাজার ম্যানগ্রোভ চারাগাছ রোপণ করা হয়।এছাড়াও নিকারীঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের মাতলা নদীর চরে গ্রামপঞ্চায়েত প্রধান তাপসী সাঁফুই এর নেতৃত্বে বিভিন্ন প্রজাতির ম্যানগ্রোভ রোপণ করা হয়।
উল্লেখ্য বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ সুন্দরবন। একটি প্রশস্ত বনভূমি যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলীর অন্যতম। গঙ্গা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এই অপরূপ বনভূমি উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা জুড়ে বিস্তৃত। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি।প্রায় ১০০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬০১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে এবং বাকি ৩৯৮৩ বর্গকিলোমিটার অংশ রয়েছে আমাদের দেশের মধ্যে।

ইকুয়েডরে ম্যানগ্রোভ কেটে চিংড়ি চাষ করার প্রতিবাদে ১৯৯৮ সালের ২৬ জুলাই আয়োজিত সমাবেশে একজন অংশ গ্রহণকারীর মৃত্যু হয়। সেই থেকে তাঁর স্মরণে প্রতিবছর এই দিনটি আন্তর্জাতিক ম্যানগ্রোভ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ম্যানগ্রোভ বা বাদাবনের জীববৈচিত্র্য অক্ষুণ্ন রাখা এর পরিবেশ ব্যবস্থা সুরক্ষার আহ্বান জানিয়ে আন্তর্জাতিক ম্যানগ্রোভ দিবস দিবসটি পালিত হয়।
নানান ধরণের প্রাকৃতিক কারণে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। সুন্দরবনে নদীর জলে এবং মাটির নোনার মাত্রা বেড়েছে। নদীগর্ভে পলিও জমছে অধিক হারে,পাশাপাশি সুন্দরবনের নদীগুলির গভীরতা কমছে।সেই সাথে সাথে বাড়ছে বাড়ছে দূষণের মাত্রাও।

বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড়ের সামনে প্রাচীর সমান বাধা হয়ে দাঁড়ায় পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবন। বায়ুমণ্ডল থেকে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড টেনে নেয়। এতে পরিবেশের দূষণ কমে। কার্বন ডাই-অক্সাইড কে খাদ্যে রূপান্তরিত করে সুন্দরবনের নোনা জলের বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ বেড়ে ওঠে। অথচ বাড়তি নোনা তাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।
সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যে প্রায় ৩৪ প্রজাতির গাছ আছে। এর মধ্যে কেওড়াগাছ সর্বাধিক কার্বন ডাই-অক্সাইড তার শিকড়, কাণ্ড, শাখা প্রশাখা ও পাতায় আটকে রাখতে পারে। এক হেক্টর কেওড়া বন বছরে ১৭০ টন পর্যন্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড আটকে রাখতে সক্ষম। বাইন গাছের ক্ষেত্রে ১১৫ টন,  গেঁওয়া গাছের ক্ষেত্রে ২৩ টন। গাছের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এই ক্ষমতাও হ্রাস পায়।

সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে ৬৬২ কোটি টন কার্বন ডাই-অক্সাইড সঞ্চিত। এর সঙ্গে প্রতিবছর যোগ হচ্ছে আরো ৩৮ লক্ষ টন। আটকে থাকা এই বিষ-গ্যাসের একাংশ শর্করায় পরিণত হওয়ায় প্রতিবছর আরো বেশি গ্যাস আটকে রাখতে সক্ষম হয়।
মিষ্টি জলের জোগান প্রায় বন্ধ। ফলে নোনার তেজ বেড়ে চলেছে প্রতিনিয়ত।নোনার বাড়-বাড়ন্তে অনেক প্রজাতির গাছ একেবারেই জন্মাচ্ছে না। আবার যেগুলো আছে, সাংঘাতিকভাবে তাদের বৃদ্ধি কমে গেছে। বিশেষ করে সুন্দরী ও গোলপাতা। অথচ সুন্দরী গাছের কারণেই এই বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্যের নাম সুন্দরবন।