শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই, হাম হ্যায় না : মমতা

News Sundarban.com :
জুলাই ২১, ২০২০
news-image

নিউজ সুন্দরবন ডেক্স: দুবছর আগে এক একুশে জুলাইযের মঞ্চ থেকে বিজেপিকে দিল্লিতে ক্ষমতাচ্যুত করার ডাক দিয়েছিলেন মমতা। লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তাঁর সেই আহ্বানের ফল হয়েছিল উল্টো। দিল্লিতে তো দূূরস্থান, এরাজ্যেও ১৮ আসন জিতে অপ্রতিহত শক্তি হিসাবে উঠে এসেছিল বিজেপি।রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে মঙ্গলবার দলের একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে ফের একবার বাংলার মাটি থেকে উৎখাতের ডাক দিলেন মমতা।বিজেপির উত্থানে ক্রমশ সংগঠন হারানো, কাটমানি থেকে আম্ফানের ক্ষতিপূরণ নানা দুর্নীতিতে দীর্ণ দলের কর্মীদের মনোবল বাড়াতে এদিন চেষ্টার কসুর করেননি তিনি। তৃণমূল নেত্রীকে আশ্বাসের সুরে বলতে শোনা গেছে ‘ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই, হাম হ্যায় না।’ তাঁর এই বক্তব্যের মধ্যে ক্ষমতা হারানোর ভিতি দেখছে রাজনৈতিক মহল।

বিজেপি জুজু যে তৃণমূল কংগ্রেস তথা দলনেত্রীর আত্মবিশ্বাসে চির ধরিয়েছে এই মন্তব্য থেকেই তা স্পষ্ট বলে মনে করছেন তাঁরা। পাশাপাশি বিজেপি বিরোধীতায় তিনি এদিন আঁকরে ধরেছেন বহিরাগত তত্বকে। বিজেপি দল এবং তার নেতাদের বহিরাগত বলে প্রমাণ করতে চেযেছেন মমতা।
২১ জুলাই-এর সমাবেশ যেমন মানুষ দেখে থাকতে অভ্যস্ত, সেই রকমটা হল না এইবার। ভার্চুয়াল মঞ্চ থেকে বক্তৃতা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সভার শেষ দিকে হঠাৎ তিনি বললেন, ‘ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই, হাম হ্যায় না। আপনারা আমার সঙ্গে আছেন তো। তাহলেই আমি আছি’। বাংলার রাজনীতির প্রেক্ষিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গোটা বক্তৃতার মধ্যে এই লাইনগুলি বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাহলে কি সত্যি সত্য়িই ২০২১ সালের নির্বাচনের আগে ভয় পাচ্ছে তৃণমূল নেতা কর্মীরা, ভয় পাচ্ছেন মমতা?
বিরোধীরা একযোগে তাই দাবি করছেন। বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেছেন, মমতার বক্তব্যে ভয়ের তাপ স্পষ্ট। উনি বিজেপি এবং সংবাদমাধ্যমকে ভয় পাচ্ছেন। রাহুল সিনহার দাবি, করোনা পরিস্থিতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের আসল চেহারাটা ফাঁস করে দিয়েছে। ধরা পড়ে গিয়েছে তাঁর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের নামে মিথ্য়াচার।অন্যদিকে সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোখেমুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট। তিনি পরিসংখ্যান দিয়ে দেখিয়েছেন ফ্রি রেশনের সুবিধা থেকে আমফানে ক্ষতিপূরণের যে হিসাব তিনি দিয়েছেন, তার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্য়াগত হিসাব মিলছে না। মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া পরিসংখ্যানেই তাঁর মিথ্যাচার ধরা পড়ে যাচ্ছে।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, তৃণমূল নেত্রীর ভয় ও হতাশা যে ক্রমশ বাড়ছে, তার বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এবছরই শেষ একুশে জুলাই পালন করছেন। আগামী বছর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি ভাষণ দিতে পারবেন না। একুশে জুলাই শহীদ দিবস পালনের জন্য আগামী বছর তাকে বিজেপি সরকারের থেকে অনুমতি নিতে হবে। দিলীপ বাবু বলেন, গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল নেত্রী ৪২টি আসনেই জয় লাভের অঙ্গীকার করেন এবং ১৮টি আসন হাতছাড়া হয়ে গেছে। অন্যদিকে বিজেপি ১৯এ তৃণমূলকে হাফ করার যে স্লোগান দিয়েছিল দলের কর্মীরা তা পূরণ করে দেখিয়েছে। আগামী ২০২১ সালে শাসক দলকে পুরোপুরি ক্ষমতাচ্যুত করবে। এরাজ্যের মানুষ শুধুমাত্র ৩৪বছরের বামফ্রন্ট সরকারকেই নয়, তার আগে ৩০বছরের কংগ্রেস সরকারকেও ক্ষমতাচ্যুত করেছে। তাই ১০বছরের তৃণমূল সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সময় লাগবে না।

বস্তুত, ক্ষমতায় আসার এক বছর আগে থেকেই গত কয়েক বছরে যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কথা বলতে দেখা যায়, এই বছর অনেক ক্ষেত্রেই তার অভাব দেখা গিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। আমফান-এর ক্ষতিপূরণ থেকে করোনা মহামারির সময়ে ফ্রি-তে রেশন – সব ক্ষেত্রেই কিছু দুর্নীতি হয়েছে তা কার্যত মেনে নিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, কয়েকটি ব্লকে এই ধরণের ঘটনা ঘটেছে, যা নিয়ে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম বাড়াবাড়ি করছে।সেই সঙ্গে ‘ভুল বুঝে’ বিজেপি-তে চলে যাওয়া কর্মীদের ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সিপিএম-কংগ্রেস’এর কর্মীদের বিজেপিকে ভোট না দিয়ে তৃণমূলের পক্ষে ভোট দিতে আর্জি জানান তিনি। সেইসঙ্গে বারবার করে যেভাবে তিনি দলের নেতা কর্মীদের ‘বিজেপির প্ররোচনা ও চাপের মুখে’ ভেঙে পড়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন, তেমনটা আগে দেখা যায়নি বলেই জানাচ্ছেন বিশ্লেষকরা।