শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শহরের তিন হাসপাতাল ঘুরে বেঘোরে মৃত্যু যুবকের,ফের কাঠগড়ায় চিকিৎসা ব্যবস্থা

News Sundarban.com :
জুলাই ১৩, ২০২০
news-image

নিউজ সুন্দরবন ডেস্কঃ তিন দিনের মধ্যে আরও একবার এরাজ্যে রেফার রোগের বলি হল এক তাজা প্রাণ।ইছাপুরের সদ্য যুবা শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের পর জয়নগরের অশোর রুইদাস।অসুস্থ শরীরে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরেও ভর্তি না হতে পেরে কার্যত বিনা চিকিৎসায় ওই যুবকের প্রাণ গিয়েছে বলে অভিযোগ তার পরিবারের।তাঁর শরীরে কোভিডের উপসর্গ ছিল।তিনদিনের মাথায় ফের এক যুবক রেফারের বলি হওয়ায় রাজ্যের বেহাল স্বাস্থ্য ব্যবস্খার অমানবিক মুখ বারবার সামনে চলে আসছে বলে মত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।

অশোক রুইদাস নামে ঐ যুবক গত মাসের শেষে টাইফয়েডের উপসর্গ নিয়ে দক্ষিন বারাসতের একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে ভর্তি করা হন। রবিবার থেকে তার শ্বাসকষ্টের সঙ্গে জ্বর বাড়লে তাঁকে প্রথমে এস এস কে এম এর জরুরী বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁকে সেখান থেকে প্রথমে শম্ভুনাথ পন্ডিত হাসপাতালে রেফার করা হয়। পরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। সেখানে ভর্তি করার আগেই চিকিৎসা না পেয়ে হাসপাতালের মেঝেতে শুয়েই ২৬ বছরের ঐ যুবকের মৃত্যু হয় বলে তার পরিবারের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও একাধিকবার বলতে শোনা গিয়েছে, ‘কাজ করলেই তো ভুল হয়, এটাই স্বাভাবিক। কাজ না করলে ভুল হবে কীভাবে’। কিন্তু, ভুল করার অন্যতম শর্ত হল, সেটা থেকে শিক্ষা নেওয়া। নতুবা যখন একই ভুল বারবার ঘটে, তখন তাকে গাফিলতি আখ্যা দেওয়া হয়। সেই গাফিলতির অভিযোগেই এবার কলকাতা শহরে বিনা চিকিৎসায় বেঘোরে প্রাণ গেল জয়নগরের ওই যুবকের।

গত শুক্রবারই একাধিক হাসপাতাল ঘুরে কলকাতা মেডিকেল কলেজে মৃত্যু হয় বছর ১৮র শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের।ওই ঘটনায় ইছাপুরেরে ওই যুবকের পরিবারের তরফে বেলঘরিয়ার বেসরকারি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিয়োগ দায়ের করা হয়েছে। রবিবার মৃত যুবকের মা শ্রাবণী চট্টোপাধ্যায় বেলঘরিয়া থানায় অভিয়োগ দায়ের করার পর ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তিনি বলেন ,’আমার একমাত্র ছেলেকে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে। আমার ছেলের করোনা উপসর্গ ছিল না। কোন পদ্ধতিতে ওই নার্সিংহোম ৩ মিনিটে আমার ছেলেকে করোনা পজিটিভ বানাল, তা জানি না। আর ওই রিপোর্টের জেরে কোনও হাসপাতাল আর আমার ছেলেকে ভর্তি করতে চাইল না।

তাঁর দাবি, আমরা এটুকু জানি করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে অন্তত ১২ ঘন্টা সময় লাগে। বাড়ি থেকে আমার ছেলে হেঁটে ডাক্তার দেখাতে গাড়িতে উঠেছিল। আমি আমার অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে যখন বেলঘরিয়ার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করতে আসি, তারা জানায় আগে আমার ছেলের কোভিড টেস্ট হবে, তারপর ওরা সিদ্ধান্ত নেবে ভর্তি নেওয়া হবে কি হবে না। সেই মত ওরা ওর রক্ত নিয়ে কি পরীক্ষা করল জানি না। করোনা পরীক্ষা তো লালারসে হয়। মাত্র ৩ মিনিটে হাতে লেখা রিপোর্টে ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাল, আমার ছেলে নাকি করোনা পজিটিভ, তাই ওরা ভর্তি নেবে না। আমি বিশ্বাস করি না আমার ছেলের করোনা উপসর্গ ছিল। ওই রিপোর্টের কারণে আমার ছেলেকে সব হাসপাতাল ফিরিয়ে দিচ্ছিল।

সাগরদত্ত হাসপাতালেও ভর্তি না নেওয়ায় শেষ পর্যন্ত বেলঘড়িয়া থানার সাহায্যেই কলকাতা মেডিকেল কলেজে যান ইছাপুরের দম্পতি। শুভ্রজিতের মা বলেন,
‘কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল যখন ভর্তি নিল, তখন আমার ছেলের অবস্থা কাহিল হয়ে গেছে। ওই পরিস্থিতি দেখে ওরাও আর কোন চিকিৎসা দিতে চায়নি। ওকে কোনও রকম চিকিৎসা পরিষেবা না দিয়ে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে। তবে কলকাতা মেডিকেল কলেজের থেকেও এই বেসরকারি নার্সিং হোম এর জন্য অনেক বেশি দায়ী বলে আমাদের অভিযোগ। আমি চাই আমার ছেলের মৃত্যুর ঘটনার সঠিক তদন্ত করা হোক। ওর মৃতদেহ আমাদের দেয়নি কলকাতা মেডিকেল কলেজ। আমার ছেলের করোনা ছিল কি না তা পরীক্ষা করে দেখা হোক। না হলে ছেলের মৃতদেহ আমাদের হাতে ফিরিয়ে দিক কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। আমি আমার একমাত্র ছেলের মৃত্যুর ন্যায্য বিচার চাই।’
ওই ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ঘনিষ্ট মহলে ক্ষোভ প্রাকশ করেছেন বলে খবর। সরকারি বিধিভঙ্গকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও তোরজোর শুরু হয়েছে। তারই মধ্যে একই রকম আরেকটি মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসায় হতচকিত স্বাস্থ্য কর্তারা। পুরো ব্যবস্থার গোড়াতেই যে গলদ রয়েছে একান্ত আলোচনায় মানছেন তাঁরা।