মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ঐতিহ্যবাহী মাটির বাড়ি আজ বিলুপ্তির পথে

News Sundarban.com :
জুন ২৮, ২০২০
news-image

ঝোটন রয়, নামখানা:

গ্রাম বাংলার রাস্তাঘাট ও ঐতিহ্যবাহী মাটির বাড়ি আজ বিলুপ্তির পথে। যাকে ঘিরে রূপকথার মতন সৌন্দর্যের আঙিনায় ভরা থাকত গ্রাম বাংলা। ধপধপে সাদা আঁকাবাঁকা রাস্তাঘাট, যা প্রাচীন সভ্যতার আরেক রূপ। বর্তমান সময়ে আমরা এগুলোকে হারাতে বসেছি। মাটির বাড়ি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। এই বাড়ি প্রত্যন্ত গ্রামের মধ্যে আবদ্ধ থাকত। কালের আবর্তনে আজ আমরা হারাতে বসেছি। মাঠেতে ধান ফলিয়ে অপ্রয়োজনীয় বস্তু খড় দিয়ে এই মাটির বাড়ি ছাওয়া হতো।
এই প্রসঙ্গে নামখানা ব্লকের বাসিন্দা বাদল বিজলি বলেন, শীত-গ্রীষ্ম উভয় মৌসুমেই আরামদায়ক এই মাটির বাড়ি। এই বাড়িতে মনোরম পরিবেশ বিরাজ করতো।
তিনি আরো বলেন, গ্রামের মানুষের কাছে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বলে পরিচিত।

আরাম এর ফলে গ্রামের দরিদ্র মানুষের পাশাপাশি অনেক বিত্তবান মানুষেরাও এই মাটির বাড়ি তৈরি করে বসবাস করতেন। প্রাচীনকাল থেকেই মাটির বাড়ির প্রচলন ছিল। বর্তমানে তা বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে। এঁটেল মাটি দিয়ে এইসব বাড়ি তৈরি করা হতো। বাড়ি তৈরি করার সময় কাদা মাটি এক জায়গায় যাব করে কোদাল দিয়ে পিস পিস করে কেটে একের পর এক থাতিয়ে তৈরি করা হতো দেওয়াল।
মাটির বাড়ি গুলো ২ থেকে ৩ ফুট চওড়া করে দেওয়াল হতো। উঁচু করা হতো ১৫ থেকে ২০ ফুট। এমনকি কিছু কিছু মাটির বাড়ি দোতলা ও তৈরি করা হতো। তখনকার সময়ে বন থেকে গোড়ান গাছ, গেওয়া, হেতাল এবং জঙ্গলের মোটা মোটা কাঠ দিয়ে পাটাতন সাজিয়ে তার ওপর মাটির প্রলেপ দেওয়া হতো। যেটা আমরা ছাদ বলে থাকি।
বর্তমান সময়ে এই মাটির বাড়ি জায়গায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড় পাকা বাড়ি।

এই প্রসঙ্গে নামখানা ব্লকের শিবরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০ নম্বর বুথের তৃণমূল সাংসদ রাধা রানী দাস বলেন, সুন্দরবনের মানুষ যেভাবে আইলা, বুলবুল, আমফানের মত একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় সামলে উঠছেন সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই আমাদের বর্তমান সরকার গ্রাম গঞ্জের মানুষদের কথা ভেবে একের পর এক পাকা বাড়ি, রাস্তাঘাট তৈরি করে দিচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, কুড়ি সালের মধ্যে আমাদের রাজ্যে সমস্ত গরিব মানুষ মাটির বাড়িতে বসবাস করবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফ্রেজারগঞ্জ এ মাটির বাড়িতে বসবাসকারী একজন বলেন, বর্ষাকালে মাটির বাড়িতে বিভিন্ন অসুবিধায় পড়তে হতো। আমাদের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মাটির বাড়িতে থাকতে ভয় করে। তার জন্য ইট, বালি, সিমেন্ট, দিয়ে পাকা বাড়ি নির্মাণে মানুষ আজ বড়ই উৎসাহী।

তাছাড়া গ্রামের মানুষ আগের তুলনায় অনেক সচেতন। মাটির বাড়ির পরিবর্তে পাকা বাড়ির উপরে টিন এজ বেস্ট দিয়েছে। কেউবা ছাদ ঢালাই বাড়িতে বসবাস করছে।
একটা সময় ছিল শুধু নামখানা ব্লক নয় প্রত্যন্ত গ্রাম বাংলায় অসংখ্য মাটির বাড়ি দেখা যেত। তা তখনকার তুলনায় এখন একেবারেই কম। পরিস্থিতির চাপে পড়ে মাটির বাড়ি নির্মাণ বর্তমানে এতটাই কমে গেছে যে আগামী প্রজন্মের কাছে মাটির বাড়ি ইতিহাস হয়ে যাবে।