বুধবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সুন্দরবনের নদীখাঁড়ি থেকে বাঘে তুলে নিয়ে গেল মৎস্যজীবীকে

News Sundarban.com :
জুন ২০, ২০২০
news-image

 সুভাষ চন্দ্র দাশ,ক্যানিং –

সুন্দরবনের নদী খাঁড়িতেও মাছ ধরা নিষেধ রয়েছে।আর এই নিষেধাজ্ঞার জন্য দিনআনা দিন খাওয়া দরিদ্র মৎস্যজীবীরা পড়েছেন চরম সমস্যায়।তা স্বত্বেও বনদফতরের সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অনেক মৎস্যজীবী বিনা অনুমতিতে গোপনে চুরি করে সুন্দরবনের নদীখাঁড়িতে মাছ কাঁকড়া ধরতে চলে যাচ্ছে জীবন জীবীকার জন্য।তেমনই শনিবার ভোরে সুন্দরবনের জঙ্গলের নদীখাঁড়ীতে মাছ কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের কবলে পড়ে নিখোঁজ হলেন এক মৎস্যজীবী।শনিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে সুন্দরবনের ব্যাঘ্র প্রকল্পের অন্তর্গত পিরখালী ১ নম্বর জঙ্গলে। নিখোঁজ মৎস্যজীবীর নাম মনোহর মন্ডল(৬৫)।
স্থানীয় সুত্রে জানাগেছে শনিবার ভোরে তিন সঙ্গীকে সাথে করে সুন্দরবনের পিরখালী ১ নম্বর জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন মনোহর মন্ডল। গোসাবা ব্লকের সুন্দরবন কোষ্টাল থানার লাহিড়ীপুর গ্রামপঞ্চায়েতের জেমসপুর গ্রামের বাসিন্দা এই মৎস্যজীবীর সাথে ছিলেন প্রতিবেশী মৎস্যজীবী গৌর মন্ডল,কবিতা মন্ডল,নমিতা মন্ডল। শনিবার সকাল ৭ টার সময় সকলে মিলে একটি নদী খাঁড়ির মধ্যে তাদের ডিঙি নৌকাটি নোঙর করে কাঁকড়া ধরছিলেন।আচমকা ঠিক সেই মুহূর্তে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গল থেকে একটি বাঘ বেরিয়ে এসে লাফিয়ে পড়ে মনোহরের উপর। নৌকাতেই ঐ মৎস্যজীবীর ঘাড়ে কামড় বসিয়ে দেয়।সঙ্গীকে বাঘে আক্রমণ করেছে দেখতে পায়।সঙ্গীকে বাঘের কবল থেকে উদ্ধারের জন্য তিন সঙ্গী কাঁকড়া ধরার শিক ও নৌকার বৈঠা নিয়ে বাঘের সাথে তুমুল লড়াই করেন।বাঘের হিংস্রতা এবং পরিস্থিতি ভয়াবহতার বেগতিক দেখে নিজেদের প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে তিন সঙ্গী রণে ভঙ্গ দিয়ে পিছু হটে।সুযোগ বুঝে মনোহর কে ঘাড়ে তুলে নিয়ে মুহূর্তের মধ্যে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে অদৃশ্য হয় যায় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যান তিন সঙ্গী। বেশ কিছুক্ষণ নৌকার উপর থেকে মনোহর কে খোঁজার চেষ্টা করলেও প্রাণ ভয়ে জঙ্গলের মধ্যে ঢোকার সাহস দেখাননি কেউই। সেখান থেকে তিন মৎস্যজীবী তড়িঘড়ি ফিরে আসেন জেমসপুর গ্রামের বাড়িতে। খবর দেন নিখোঁজ মৎস্যজীবীর পরিবারের সদস্যদের কে। খবর শুনে শোকে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিখোঁজ মৎস্যজীবীর পরিবারের সদস্যরা।
উল্লেখ্য গত ২০ এপ্রিল সুন্দরবন জঙ্গলের নদীখাঁড়িতে কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন জেমসপুরের বাসিন্দা রথীন সরকার। তাঁকে নৌকা থেকে বাঘে তুলে নিয়ে যায়।২৭ এপ্রিল সুন্দরবন জঙ্গলে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারায় ছোট মোল্লাখালির বাসিন্দা নবীন সরকার। ২৯ এপ্রিল সুন্দরবনের ঝিলা ৫ নম্বর জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে গিয়েই মৃত্যু হয় গোসাবা ব্লকের লাহিড়ীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চরঘেরীর বাসিন্দা সুজিত মন্ডলের।১৩ জুন কুলতলির দেউলবাড়ির গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ দুর্গাপুর গ্রামের চারজন মৎস্যজীবী সুন্দরবনের চিতুরি জঙ্গলের নদী খাঁড়িতে গিয়েছিলেন মাছকাঁকড়া ধরতে। সেখানে বাঘের আক্রমণে মৃত্যু হয় গোষ্ঠ নাইয়ার।
বনদফতর সুত্রে জানাগেছে মৎস্যজীবীদের বৈধ কোন অনুমতি পত্র ছিলো না।তা স্বত্বেও ঘটনাস্থলে মাছ কাঁকড়া ধরার উপর বনদফতরের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অনুমান সেই নিষিদ্ধ জায়গাতে কাঁকড়া ধরতে গিয়েই বিপদ ঘটেছে।একাধিকবার বনদফতরের তরফ থেকে নিষিদ্ধ জায়গায় মাছ কাঁকড়া ধরার জন্য বিভিন্ন ধরনের সচেতনতা মূলক কর্মসূচী গ্রহণ করা হলেও এক শ্রেণীর মৎস্যজীবী সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এবং লকডাউন কে অমান্য করে সেই নিষিদ্ধ সুন্দরবনের জঙ্গল ও নদী খাঁড়িতে মাছ কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বিপদের মুখে পড়ছেন। এই ঘটনাও তারই পুনরাবৃত্তি বলে দাবী বনদফতরের। সেই কারণে এ বিষয়ে মৎস্যজীবীদের আরও বেশী করে সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বন আধিকারিকরা।