শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

প্রাচীন বটগাছ কে রক্ষা করলেন গ্রামবাসীরা

News Sundarban.com :
জুন ৪, ২০২০
news-image

বিশ্লেষণ মজুমদার,ক্যানিং –

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার উদ্যোগ নিয়ে প্রাচীন বটগাছ কে রক্ষা করলেন গ্রামবাসীরা।গত ২০ মে আম্ফানের দাপটে প্রচুর গাছপালা ঘরবাড়ি ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল। বিভিন্ন এলাকায় বিশাল বড় বড় গাছ উপড়ে গিয়েছিল।সেই আম্ফানের দাপট থেকে রক্ষা পায়নি ৪৫০ বছরের প্রাচীন একটি বটগাছ।ভেঙে পড়ে যায় একটি মন্দিরের উপর।গাছটির ডালপালা ছেঁটে দিয়ে সোজা করে বাঁচানোর চেষ্টা করলেন গ্রামবাসীরা।পরিবেশ দিবসের প্রাক্কালে গ্রামবাসীদের গাছ বাঁচিয়ে রাখার এমন সচেতনতা এক অনন্য নজীর।

জানাগেছে বিগত প্রায় ৪৫০ বছর আগেই ক্যানিংয়ের দিঘীরপাড় গ্রাম পঞ্চায়েতে কুমারশা গ্রামের মধ্য দিয়ে একটি নদী প্রবাহিত হয়ে সুন্দরবনের অন্যান্য নদীতে গিয়ে মিশেছিল। তখন কুমারশা গ্রাম ছিল জঙ্গলঘেরা।এই জঙ্গলঘেরা নদীর তীরে ডাকাতরা গড়ে তোলেন একটি কালিমন্দির।সেখানে পুজো দিয়ে ডাকাত দল প্রতিনিয়ত ডাকাতি করতে যেতো।ডাকাতি করে ফিরে এসে আবার ডাকাত দল ধূমধাম করে মন্দিরে পুজোপাঠের আয়োজন করতো এই জঙ্গলের কালীমন্দিরে।সেই মন্দিরের পাশেই বড় হয়ে ওঠে একটি বট গাছ।পরে ডাকাত দলের সমস্ত ডাকাতরা বয়সের ভারে ধীরে ধীরে বৃদ্ধ হয়ে পড়ায় ডাকাতি করা বন্ধ করেদেয়।ডাকাতি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নদীর তীরে মন্দিরে ডাকাতদের আনাগোনা বন্ধ হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় পুজোপাঠও। কালক্রমে নদীও তার স্রোত হারিয়ে বিলীন হয়ে যায়।ধীরে ধীরে জঙ্গল পরিষ্কার করে গড়ে ওঠে জনবসতি। থেকে যায় মন্দির এবং ধীরে ধীরে বেড়েওঠা বৃহৎ এক বটবৃক্ষ।পরবর্তী সময়ে গ্রামবাসীরা মন্দিরকে সংরক্ষিত করে পুজোপাঠ শুরু করেন।বিগত ২০ মে আম্ফান সুপার সাইক্লোনে প্রাচীন সেই বটবৃক্ষ ভেঙে পড়ে মন্দিরের উপর।বৃহৎ প্রাচীন বটবৃক্ষ ভেঙে পড়লেও মন্দির অক্ষত অবস্থায় রয়ে যায়। মন্দিরের উপর থেকে গাছটি সরিয়ে কেটে ফেলার জন্য গ্রামবাসীরা বিভিন্ন জায়গায় অনুনয় বিনয় করলেও কোন কাজ হয়নি। অবশেষে এলাকারই যুবক শিবাজী সিংহ এগিয়ে আসেন।তিনি গাছটি কে না কেটে বাঁচিয়ে রাখার পরামর্শ দেন।যুবক শিবাজীর উদ্যোগে শুরু হয়ে যায় প্রাচীন বটবৃক্ষ বাঁচিয়ে রাখার তোড়জোড়। সেইমতো বৃহষ্পতিবার সকালে প্রাচীন বটবৃক্ষে ডালপালা কেটে গাছ কে বাঁচানের উদ্যোগ নিয়ে গাছ ক সোজা করেন গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসীদের এমন উদ্যোগে খুশি সাধারণ পরিবেশপ্রেমী মানুষজন। যুবক শিবাজী সিংহ জানায় “সুন্দরবনের উপর বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে এসেছে।প্রচুর গাছপালা ভেঙে পড়েছে।একটি গাছ কেটে ফেলতে হয়তো কয়েক মিনিট সময় লাগবে। বিন্তু পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাবে। তারপর একটি গাছ একটি প্রাণ। একটি গাছ বড় করতে সময় লাগবে অনেক দিন। যারজন্য প্রাচীন এই বটবৃক্ষ কে না কেটে বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগ নিয়েছি। ”