শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কাগজ কুড়োতে গেলে বাধা,ভিক্ষাতেও ভরছে না পেট,মরণ বাঁচোন লড়াইয়ে সামিল

News Sundarban.com :
মে ৩১, ২০২০
news-image

বিশ্লেষণ মজুমদার,ক্যানিং –

কাগজ কুড়োতে গেলে বাধা।ভিক্ষায় ভরছে না পেট অসহায় ভাবেই পথে পথে কোলের শিশু কে নিয়ে খাবারের সন্ধানে ঘুরতে হচ্ছে আমিনাদের মতো অসংখ্য কাগজ কুড়ানীদের।লকডাউন আর আম্ফান সাইক্লোনের পর এমন বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে সমগ্র আম্ফান বিধ্বস্ত এলাকায়।

কলকাতা সহ শহরতলি এলাকায় ড্রেন,ডাষ্টবিন কিংবা রাস্তার উপর অসংখ্য ময়লা প্লাস্টিক,নোংরা কাগজপত্র পড়ে থাকে। সেই সমস্ত ড্রেন,ডাষ্টবিন থেকে প্লাস্টিক,কাগজ কুড়িয়ে বিক্রি করে একশ্রেণীর মানুষ দিন গুজরান করতেন।করোনার প্রকোপে দীর্ঘ প্রায় দুমাস অতিক্রম করেছে লকডাউন।এরই মধ্যে আম্ফান সাইক্লোন বিধ্বস্ত করে দিয়েছে সমগ্র সুন্দরবন সহ রাজ্যের সাতটি জেলা।লকডাউন আর আম্ফানের দাপটে কার্যত এক প্রকার কাজ হারিয়ে বাড়িতে বসে রয়েছেন এই সমস্ত কাগজ কুড়ানী পরিবারের লোকজন।পাশাপাশি কোন রকম উপার্জন না থাকায় কার্যত অনাহারেই রয়েছেন এই সমস্ত পরিবার গুলো।তাদের অভিযোগ লকডাউনের সমস্ত কিছু বন্ধ থাকায় রাস্তাঘাট একপ্রকার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।ফলে রাস্তাঘাটে কাগজ প্লাস্টিক পড়ে নেই।কি করে সংসার চলবে?এযাবৎ সরকারী ভাবে কোন ত্রাণও মেলেনি তাঁদের।ভিক্ষা করতে গেলে ভিক্ষাও মিলছে না।
ঘুটিয়ারী শরীফ এলাকায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন আমিনা বিবি ও শাহেনশা সেখ। এই দম্পতির বছর দুয়েকের এক পুত্র সন্তান রয়েছে।কলকাতার পার্কসার্কাস এলাকায় কাগজ কুড়িয়ে দিন গুজরান করতেন। লকডাউনের পর কলকাতায় যেতে পারছেন না। কাগজ কুড়ানো বন্ধ। যা কিছু জমানো টাকাপয়সা ছিল সেগুলি সব শেষ।দুমাস বাড়ি ভাড়া দিতে না পারায় বাড়ির মালিকও বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি কলকাতায় কাগজ কুড়াতে গেলে এলাকায় আর ঢুকতে দেবে না এলাকার লোকজন।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন আমিনা বিবিদের মতো অসংখ্য কাগজ কুড়ানী পরিবার। অগত্যা নিরুপায় হয়ে কোলের শিশুকে নিয়ে লোকের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করতে হচ্ছে জীবনধারণের জন্য।কিন্তু সেখানেও বাধা।কেউ কেউ ভিক্ষা দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ করোনা সংক্রমণের ভয়ে ভিক্ষা না দিয়ে তাড়িয়ে দিচ্ছেন।শিশু কোলে নিয়ে কাজগ কুড়ানী আমিনাদের কথায় আমাদের জীবনের কোন দাম নেই!তিনচার দিন আমি ও কোলের শিশু অনাহারে রয়েছি।শিশুটির মুখ চেয়ে বেঁচে থাকার জন্য সামান্য ত্রাণও কেউ দেয়নি। কিভাবে কোলের শিশুদর বাঁচাবো ভেবে পাচ্ছি না!
স্থানীয় কয়েকজন যুবকের অভিযোগ “রাজ্য কিংবা কেন্দ্র সরকার এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার লোকজন প্রচুর পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী বিলি করছেন ঠিকই। কিন্তু প্রকৃত দুঃস্থ অসহায় মানুষের কাছে তা সঠিক ভাবে পৌঁচাচ্ছে না। যার জন্য এলাকায় এলাকায় এমন করুণ বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে।এমন করুণ মর্মর বেদনার বেহালদশা আগামী দশ বছরেও ঘুঁচবে কি না তা অনিশ্চিত।