সুন্দরবনের প্রাক্তন শিক্ষকের অভিনব উদ্যোগ,ত্রাণের সঙ্গে দিলেন নগদ অর্থ,
সুভাষ চন্দ্র দাশ ,ক্যানিং –
বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ সুন্দরবন।বৃহত্তম এই সুন্দরবনের পিছিয়েপড়া ব্লক বাসন্তী।করোনার করাল গ্রাসে জর্জরিত সমগ্র পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সহ ভারতবর্ষও।আক্রান্ত দেশ তথা বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ এই সুন্দরবনও।করোনা সংক্রমণ প্রতিহত করতে চলছে লকডাউন। আর এই লকডাউনের জেরে কাজকর্ম হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন পিছিয়েপড়া সুন্দরবনের বাসন্তী ব্লকের সাধারণ মানুষজন।অসহায় দরিদ্র মানুষের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে এগিয়ে এলেন রানিগড় সাধু সুন্দর সিং চার্চ। বাসন্তী ব্লকের রাধারানীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে ‘রানিগড় সাধু সুন্দর সিং চার্চ’ রবিবার দুপুরে ‘করোনার ত্রাণ’ বিতরণ করলো।উল্লেখ্য গত ৯২ বছর আগে সুন্দরবনের শেষ প্রান্তে এই চার্চ গঠিত হয়েছিল।বর্তমানে এলাকার ৯০ টি পরিবার এই চার্চের সাথে অঙ্গাঙ্গী ভাবে যুক্ত। এই সমস্ত পরিবার গুলি অত্যন্ত দরিদ্রতম । দিনকয়েক আগেই এই সমস্ত হত দরিদ্রদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছিলেন বিশপ মহামান্য পরিতোষ।চার্চ সংলগ্ন বেশ কিছু আদিবাসী সম্প্রদায়, হিন্দু ও মুসলমান রয়েছেন। যাঁদের রোজার সময়ে ইফতার করার সামর্থ্য নেই। এমন সব পরিবার গুলি অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে দিন যাপন করছেন।তাঁদের জন্য চার্চের প্রাক্তন শিক্ষক তরুণ মন্ডল, অসীম মন্ডল, বিদ্যাসাগর জানা, মহিম মন্ডল সহ চার্চের সম্পাদক তথা প্রাক্তন শিক্ষক সুজিত মন্ডলের নেতৃত্বে রবিবার ৪০ টি দরিদ্র পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। যাঁদের অধিকাংশই আদিবাসী এবং ইসলাম ধর্মাবলম্বী। যাঁদের পবিত্র রোজা ভাঙার পর ইফতার করার কোন সামর্থ নেই।সেই কারনে তাঁদের প্রত্যেকের হাতে সরষের তেল, আলু, পিয়াজ, ডাল, লবণ, হলুদ, লংকা, আদা, রসুন, সোয়াবিন, মাস্ক, ও একটি সাবান তুলে দেওয়া হয়। এদিন এই ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুন্দরবনের বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক তথা প্রাক্তন শিক্ষক প্রভুদান হালদার।ত্রাণ সামগ্রীর সাথে প্রভুদান বাবু তাঁর জমানো পেনশনের টাকা ত্রাণ নিতে আসা ৪০ জন দরিদ্র মানুষের হাতে সমপরিমাণে ভাগ করে তুলেদেন। ঊল্লেখ্যে প্রভুদান বাবু একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। পেনশনের টাকায় তাঁর সংসার চলে। পেনশনের কিছু টাকা জমিয়ে ছিলেন।বর্তমানে করনাকালে অতি সংকটকালীন পরিস্থিতিতে দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য পেনশনের টাকা ৪০ টি অসহায় পরিবারের হাতে তুলে দিয়ে অভিনব বার্তা দিলেন সুন্দরবনের প্রাক্তন শিক্ষক।করোনার তান্ডব শুরু থেকেই রবিবার পর্যন্ত প্রায় ৯০ জনের হাতে কিছু টাকা সরাসরি তুলে দিয়েছেন প্রভুদান বাবু।তাঁর ইচ্ছা আগামী দিনে আরো ২০০ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সরাসরি তাদের হাতে কিছু অর্থ তুলে দিয়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছবেন।
ত্রাণের সাথে নগদ অর্থ কেন?জিঞ্জাসা করতেই সুন্দরবনের বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক তথা প্রাক্তন শিক্ষক প্রভুদান হালদার বলেন “বর্তমানে প্রত্যেকে টি পরিবার সরকারি আনুকূল্যে পর্যাপ্ত পরিমান চাল পাচ্ছেন। কিন্তু সামান্য নুন কেনার পয়সা নেই। ওষুধ কেনার পয়সা নেই। ইফতার করার পয়সা নেই।নেই একটা পান কেনার পয়সাও।সেই কারণেই ত্রাণের সাথে নগদ অর্থ দিয়েছি।
পাশাপাশি তিনি আবেদন করে বলেন আগামী দিনে যাঁরা এমন ত্রাণ বিতরণ করবেন, ত্রাণের সঙ্গে যদি সামান্য কিছু অর্থ সরাসরি এইসব কর্মহীন ব্যক্তিদের হাতে তুলে দেওয়া যায় , সেটাই হবে মানব ধর্মের শ্রেষ্ঠ কর্ম।”