বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বুলবুলের সামনে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে মানবসভ্যতা কে বাঁচিয়ে দিল বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন

News Sundarban.com :
নভেম্বর ১৪, ২০১৯
news-image

পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ সুন্দরবন। যেখানে রয়েছে নদীনালা বেষ্টিত ৩৫০০ কিলোমিটার নদীবাঁধ,৪০০ প্রজাতির বিভিন্ন গাছগাছালি,অজস্র পশু পাখি সহ বিভিন্ন জীবজন্তুর বসবাস।১০২ টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই সুন্দরবন। বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং মানব জাতির অত্যাচারে ছোট বড় মিলিয়ে ৪৮ টি দ্বীপ ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে।পাশাপাশি বর্তমানে পঞ্চাশ লক্ষের ও বেশী মানুষের বসবাস সুন্দরবনের ৫৪ টি ছোট বড় বিভিন্ন দ্বীপে।সুন্দরবনের  রাজ্যের কলকাতা ও প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের ঢাকা শহর জনবসতিপূর্ণ। এই দুই শহরের ওপরে ঘূর্ণিঝড় বুুলবুল তান্ডব চালালে মহাপ্রলয়ের ঘটনা ঘটতে পারতো।যদিও বুলবুলের সেই ভয়াল ভয়ঙ্কর তান্ডব কে খড়গ্ হস্তে প্রতিহত করে মহাপ্রলয়ের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিলো ঘন অরণ্য বৃহত্তম বদ্বীপ সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ জঙ্গল। বুলবুলের দাপট নিজে সহ্য করে বাঁচিয়ে দিল মানবসভ্যতাকে।এই বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ জঙ্গল বিগত দশ বছর আগে ২০০৯ সালে ২৫ মে ভয়ঙ্কর আয়লা থেকে  রক্ষা করেছিল কলকাতা সহ সমগ্র উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে।এ বারও তার অন্যথা হয়নি।ঘূর্ণিঝড় বুলবুল কে প্রতিহত করতে বুক আগলে দাঁড়ালো সেই বৃহত্ত্ম সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যই। সুন্দরী, গরান, গেঁওয়া,বাণী,কেওড়ার শিকড়, শাখাপ্রশাখার প্রতিরোধে বুলবুলের দাপট অনেকাংশে পরাস্ত হয়েছে।আবহাওয়া এবং পরিবেশবিদ বিশেষজ্ঞদের  ধারণা, স্থলভাগে আছড়ে পড়ার পর বুলবুল কিছুটা গতিমুখ পরিবর্তন করেছিল, সেটা ম্যানগ্রোভের জন্যই।প্রথমে নির্ধারিত ছিল, সাগরদ্বীপে আছড়ে পড়ে উত্তরপূর্ব দিকে এগিয়ে যাবে বুলবুল।আর এই পথ অনুসরণ করলে শনিবার রাতে কলকাতার পুরোপুরি পূর্ব দিকে চলে আসতে পারতো বুলবুল।তার পরে বাংলাদেশের ঢাকা শহর মুখী হতো।কিন্তু এই সুন্দরবন ম্যানগ্রোভে আছড়ে পড়ে বুলবুল পূর্ব-উত্তরপূর্ব মুখী হয়ে যায়।দুই বাংলার বৃহত্তম সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ জঙ্গল নিজের উপরে বুলবুলের যাবতীয় অত্যাচার সহ্য করেছে।আর সেই কারণেই বুলবুল তার প্রবল শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।বিশেষজ্ঞদের মতে “শনিবার রাতে কলকাতায় যখন হাওয়ার গতিবেগ আচমকা বেড়ে যায়, তখন বুলবুল ছিল শহরের সব থেকে খুব কাছাকাছি অঞ্চলে। ৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্বে ছিল বুলবুলের অবস্থান।পুরোনো পথ অনুসরণ করলে, সেই সময়ে অবস্থান করতে পারতো ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার পূর্বে। সে ক্ষেত্রে শহরে আরও বেশি তাণ্ডব চালাতে পারতো বুলবুল।পরিবেশবিদদের দাবি  সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ জঙ্গলের বিভিন্ন প্রজাতির গাছগুলি সুন্দরবন ব-দ্বীপকে ঘিরে রয়েছে।তার জন্য শক্তিশালী বুলবুলের যতটা তান্ডব দেখানোর ক্ষমতা ছিল, তা পুরোটাই দেখাতে অক্ষম হয়ে পড়ে ম্যানগ্রোভ জঙ্গলের জন্য।এমনকি সুন্দরবনের যে অঞ্চলে ম্যানগ্রোভ প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে সেখানে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই বেশি।জি-প্লট, মৌসুনী, সাগরদ্বীপ এবং লোথিয়ান দ্বীপের একটা বড়ো অংশে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি কারণ সেখানে ম্যানগ্রোভ প্রায় নেই।ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণ কতটা জরুরি, এই ঘূর্ণিঝড় বুলবুলই সেটা বুঝিয়ে দিয়ে গেছে।

আগামী দিনে নিজেদের স্বার্থের জন্য “পাবান” কিংবা “আম্ফান” এর মতো ঘুর্ণিঝড় রুখতে জরুরী অত্যধিকহারে বৃক্ষরোপণ এবং ম্যানগ্রোভ ধ্বংস না করে বাঁচিয়ে রাখা।আর তা না হলে একদিন সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ জঙ্গল প্রাকৃতিক দুর্যোগ রক্ষার করার প্রতিরোধ হারিয়ে ফেলবে।পাশাপাশি প্রলয় ঘটে সলিল সমাধি ঘটবে সুন্দরবনের প্রাণীকুল সহ ম্যানগ্রোভ জঙ্গলের।