শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সুন্দরবনে ব্যাঘ্র বিধবা পরিবারের করুণ আর্তনাদ,হাত বাড়ালো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা

News Sundarban.com :
অক্টোবর ২৪, ২০১৯
news-image

বিশ্লেষণ মজুমদার

পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ সুন্দরবন। ৪০০ প্রজাতির গাছ-গাছালী,নদী-নালা,১০২ টি ছোটবড় দ্বীপ মিলিয়ে এই বৃহত্তম ব-দ্বীপ সুন্দরবন। ৩৫০০ নদীবাঁধ দিয়ে ঘেরা এই জলাজঙ্গলে জলেস্থলে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীকুল সহ পৃথিবীখ্যাত হিংস্র রয়্যালবেঙ্গল টাইগারের আস্তানা।পাশাপাশি প্রায় পঞ্চাশ লক্ষের ও বেশী মানুষের বসবাস এই সমস্ত দ্বীগুলিতে।যদিও ইতিমধ্যে প্রায় ৪৮ টি দ্বীপ বিলীন হয়ে গেছে ।পাশাপাশি আগামী দিনে বিলীন হয়ে যেতে পারে ঘোড়ামারা দ্বীপও।

এই সমস্ত প্রত্যন্ত দ্বীপ এলাকায় দারিদ্রসীমার নীচে বেশীর ভাগ মানুষজন বসবাস করেন। জীবন জীবিকার তাগিদে বেশীর ভাগ মানুষজন সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরশীল।বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় প্রাণের মায়া ত্যাগ করে,জলে কুমীর আর ডাঙায় বাঘ আর জঙ্গল দস্যুদের অত্যাচার ভয় কে উপেক্ষা করে তাদের আস্তানায় হানা দিয়ে সুন্দরবনের নদীতে মাছ,কাঁকড়া,জঙ্গলের কাঠ,মধু সংগ্রহ করে মুলত এই সব পরিবার গুলি জীবন জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।

প্রতিনিয়ত সুন্দরবনের বাঘের আক্রমণে মৃত্যু হচ্ছে মৎস্যজীবিদের। আর সুন্দরবনের প্রত্যন্ত দ্বীপ এলাকায় প্রতিনিয়ত বিধবা হচ্ছে এক একটি পরিবার পাশাপাশি পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীর মৃত্যুতে শেষ হয়ে যাচ্ছে  পরিবারের সব স্বপ্ন।অসহায় ভাবে কোন প্রকারে অর্ধাহারে আবার কখনও অনাহারে দিনযাপন করে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে বেঁচে থাকতে হয় এই পৃথিবীর বুকে।

এমন করুণ পরিস্থিতির সম্মূখীন সুন্দরবনের ব্যাঘ্র বিধবা পরিবার গুলির করুণ আর্তনাদ এর কথা শুনে তাদের পাশে সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিল কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।বুধবার সকালে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গোসাবা ব্লকের লাহিড়ীপুর গ্রামপঞ্চায়েতের তিবলীঘেরী বাজার সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ব্যাঘ্রবিধবা পরিবারের ১৫০ জন কে মধ্যাহ্ন ভোজের ব্যবস্থা করেন “প্যারোট দীপঙ্কর চ্যারিটেবল ট্রাষ্ট”। মধ্যাহ্নভোজ শেষে প্রত্যেক কে জামা,কাপড় এবং শীতের কম্বল প্রদান করা হয় সংস্থার পক্ষথেকে।আবার সদ্য বাঘের কবলে পড়ে প্রাণ হারানো মৎস্যজীবি

ওই একই দিনে সদ্য বাঘের আক্রমণে মৃত্যু রাধাকান্ত আউলিয়া,শম্ভু মণ্ডলের পরিবারের হাতে নগদ একহাজার করে টাকা সহ ৭২ টি পরিবারের হাতে ও নতুন জামাকাপড়,শীতের কম্বল তুলে দেন ব্যাঘ্রবিধবা পরিবার গুলির হাতে।

বাঘের আক্রমণে মৃত সুভাষ সরদারের স্ত্রী বুলা সরদার,মৃত নিরাপদ মণ্ডলের স্ত্রী বীণারাণী মন্ডল ও তাঁর কন্যা লতিকা মণ্ডলরা বলেন ‘প্যারোট দীপঙ্কর চ্যারিটেবল ট্রাষ্ট এর এমন মাতৃসুলভ অনুদান আমাদের মতো হতদরিদ্র পরিবার গুলো চিরদিন মনে রাখবে’।

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রধান উদ্যোক্তা প্রশান্ত মন্ডল,দীপঙ্কর দিন্দা,উজ্জ্বল তাঁতি,সৌরভ বেরা’রা বলেন “সুন্দরবনের এই সমস্ত ব্যাঘ্রবিধবা পরিবার গুলির করুণ আর্তনাদ জানতে পেরে আমরা এমন সামান্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে তাঁদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি মাত্র।এমন কর্মসূচি আমাদের এই প্রথম। আগামী দিনে আরো বেশি বাঘে আক্রান্ত পরিবারের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাবো।”