শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ভারতের বন্যায় মৃতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে

News Sundarban.com :
আগস্ট ১৫, ২০১৯
news-image

আহমেদ শাহেদ : ভারতে ভয়াবহ বন্যায় ৫০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন ১০০ জনেরও বেশি মানুষ। যারা নিখোঁজ রয়েছেন তাদের আর জীবিত পাওয়ার আশা করছেন না পরিবারের লোকজন। ফলে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। বন্যা কবলিত রাজ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে কেরালা, বিহার, গুজরাট, আসাম ও মহারাষ্ট্র।

তার ওপর আগামী পাঁচদিন ভারতের একাধিক রাজ্যে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। ফলে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। ভয়াবহ বন্যায় ভারতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য বিহার। বিহারে মৃতের সংখ্যা ১২৩ ছাড়িয়েছে। বিহারের ১২টি জেলার সাড়ে ৮১ লাখ বাসিন্দা বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সবথেকে খারাপ অবস্থা সীতামারি জেলায়। শুধু সীতামারিতেই মারা গেছেন ৩৭ জন। এছাড়া বন্যাকবলিত বিহারের মধুবনীতে প্রাণ হারিয়েছেন ৩০ জন, আরারিয়াতে মারা গেছেন ১২ জন। বন্যার পানিতে একের পর এক ডুবছে জেলা ও শহর। বিহারের শেহর ও দ্বারভাঙ্গায় মারা গেছেন ২০ জন। পুর্নিয়ায় নয়জন, কৃষ্ণগঞ্জে পাঁচজন, মুজফফরপুরে চারজন, সুপৌলে তিনজন, পূর্ব চম্পারণে দুজন ও সহর্ষে একজন মারা গেছেন।

ভারতের আসাম রাজ্যেও বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। অসমে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১ জন। অসমের ১৯টি জেলা বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ২৪ লাখ মানুষ বন্যা কবলিত অবস্থায় বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে আশার কথা, কয়েকদিনে অসমে নতুন করে বৃষ্টি না হওয়ায় আর কোনো এলাকা প্লাবিত হয়নি।

তবে ভারতের বন্যা কবলিত রাজ্যগুলোতে লাফিয়ে লাফিয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। মৃতদের বেশিরভাগই বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে কিংবা ডুবে মারা গেছেন বলে জানা যায়। ভারতের কেরালা রাজ্যে সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত বন্যার কবলে মৃত্যু হয়েছে ৮৮ জনের। বেসরকারি মতে মৃতের সংখ্যা ৯১ জন। নিখোঁজ ৫৯ জন। ভয়াবহ বন্যার কারণে কেরালার ১ হাজার ৩৩২টি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন আড়াই লাখেরও বেশি বানভাসী মানুষ। বন্যার এই ভয়াবহ অবস্থার মধ্যেই ফের নতুন করে ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে দিল্লির আবহাওয়া দপ্তর মৌসুম ভবন।

কেরালার আলাপ্পুঝোলা, এরনাকুলাম, ইড্ডুকি, মালাপ্পুরম এবং কোঝকোড়ে লাল সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন। বন্যার ভয়াবহতা পরিদর্শনে গতকাল মঙ্গলবার কেরালার ওয়ানাডের চান্ডেলের সেন্ট জুডস কবরস্থান ইয়তান শিবিরে যান কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী। অন্যদিকে এদিন কেরালার বন্যাকবলিত এলাকা আকাশপথে ঘুরে দেখেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন।

অন্যদিকে ভয়াবহ বন্যায় ভারতের কর্নাটক রাজ্যে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৮ জন। কর্নাটকের ২ হাজার ৭৩৮টি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪০ হাজার ৫২৩টি বাড়ি। রাজ্যের ১ হাজার ২২৪টি ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন ৬০ হাজার বন্যাদুর্গত মানুষ।

বন্যার কারণে কর্নাটকে ৫০ হাজার কোটি রুপির ক্ষতি হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে। কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ১০ হাজার কোটি রুপি আপাতত বন্যাত্রাণের জন্য সাহায্য চেয়েছেন। বন্যার কারণে কর্নাটকের সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা হলো শিবমোজ্ঞা। এই জেলার বেশিরভাগ অংশই পানিমগ্ন।

কেরালা ও কর্নাটকের পাশাপাশি বন্যার ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যেও। সেখানে বন্যার প্রভাবে মারা গেছেন ৪৩ জন মানুষ। মহারাষ্ট্রের কোলহাপুর, সাঙ্গলি এবং সাতারা জেলা সবথেকে বেশি বন্যা কবলিত। জেলাগুলোতে প্রায় ৪ হাজার ৭০০ কোটি রুপির ফসল ও সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়া মহারাষ্ট্রের নাসিক ও উপকূল মহারাষ্ট্রে ২১০৫ রুপির মতো সম্পদ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইতিমধ্যেই নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে ৫ লাখ ৬০ হাজার মানুষকে। ৬১ হাজার গবাদি পশুকে নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ কেন্দ্রের কাছে বন্যা ত্রাণের জন্য ৬৮১৩ কোটি রুপি সাহায্য চেয়েছেন।

এছাড়াও একটানা ভারি বৃষ্টিপাতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যেও। সেখানে বন্যার পানিতে মারা গেছেন ৮ জন। উত্তরাখণ্ডে মেঘভাঙ্গা বৃষ্টিতে মৃত্যু হয়েছে ছয়জনের। এছাড়াও হিমাচলপ্রদেশে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। সম্পাদনা : সালেহ্ বিপ্লব