বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

যেভাবে ভাইরাস মুক্ত রাখবেন স্মার্টফোন

News Sundarban.com :
সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৮
news-image

পিসিকে ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার থেকে মুক্ত রাখার চ্যালেঞ্জের সাথে আধুনিক সময়ের নতুন চ্যালেঞ্জ স্মার্টফোনকে ম্যালওয়্যার থেকে মুক্ত রাখা। বিশেষ করে পিসির পাশাপাশি এখন সাইবার অপরাধীদের দৃষ্টি স্মার্টফোনের দিকে একটু বেশিই—এমনটিই বলছেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা। তাই স্মার্টফোনকে ম্যালওয়্যার থেকে মুক্ত রাখতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন সকলেই। সহজ তিনটি অভ্যাস এক্ষেত্রে আপনার সহায়ক হতে পারে। লিখেছেন উম্মে হাবিবা

স্মার্টফোনের ব্যবহার যে হারে দিন দিন বাড়ছে, সেই হারে বাড়ছে স্মার্টফোনের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন ম্যালওয়্যারের পরিমাণ। স্মার্টফোনগুলোর বিভিন্ন অ্যাপসের ছদ্মবেশেই মূলত এসব ম্যালওয়্যার হাজির হয়ে থাকে। বর্তমানে ৫০ লাখেরও বেশি এমন ম্যালওয়্যার অ্যাপস রয়েছে বলে জানাচ্ছে প্রযুক্তি নিরাপত্তা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ম্যাকআফি। আরেক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান সিম্যানটেক জানাচ্ছে, মোবাইল অ্যাপসের ছয় ভাগের এক ভাগই ম্যালওয়্যার। এমন পরিস্থিতিতে যে কেউই চমকপ্রদ কোনো অ্যাপস নিজের মোবাইলে ইন্সটল করে নিলে সেটি যে ম্যালওয়্যার নয়, তার নিশ্চয়তা দেওয়া মুশকিল। বিশেষ করে ম্যালওয়্যারগুলো আবার একটু বেশি চমকপ্রদ অ্যাপসের ছদ্মবেশ ধরতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

সাধারণ স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের আতংকিত করার মতো এই চিত্রের বিপরীতে ম্যালওয়্যার থেকে স্মার্টফোনকে নিরাপদে রাখার প্রচেষ্টাও আশাবাদী হওয়ার মতোই। স্মার্টফোন অপারেটিং সিস্টেম নির্মাতা শীর্ষ দুই কোম্পানি অ্যাপল (আইওএস) এবং গুগল (অ্যান্ড্রয়েড) বলছে, তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে স্ক্যান করা অ্যাপসগুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। বরং তাদের স্ক্যান করা অ্যাপসগুলো নির্ভরতার সাথেই ইনস্টল করে নিতে পারেন ব্যবহারকারীরা। প্রযুক্তি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলোও একই কথাই বলছেন। থার্ড-পার্টি অ্যাপস ব্যবহারে বাড়তি সতর্কতা এক্ষেত্রে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীকে অনেকটাই সহায়তা করবে বলে মন্তব্য তাদের। তাদের মন্তব্য, পরামর্শের ভিত্তিতেই ম্যালওয়্যার থেকে স্মার্টফোনকে মুক্ত রাখার জন্য সহজ তিনটি উপায় পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো এই লেখার মাধ্যমে।

অফিশিয়াল অ্যাপ স্টোর ব্যবহার করুন

অ্যাপস ডাউনলোড করতে গিয়ে যাতে ম্যালওয়্যার ডাউনলোড করে না বসেন, তা নিশ্চিত করার সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো অফিশিয়াল অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপস ডাউনলোড করা। গুগলের গুগল প্লেস্টোর কিংবা অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরই এক্ষেত্রে হতে পারে সহায়। এই দুই অ্যাপ স্টোরে থাকা অ্যাপসগুলোকে নিয়মিত বিরতিতে স্ক্যান করে থাকে অ্যাপল এবং গুগল। যেকোনো সময় কোনো অ্যাপে সন্দেহজনক গতিবিধি দেখা গেলে সেটিকে সরিয়েও ফেলা হয় দ্রুততম সময়ের মধ্যে। এসব অফিশিয়াল অ্যাপ স্টোরের বদলে অন্য কোনো অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপস ইনস্টল করতে গেলে তা পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান করবে না। অনেক অ্যাপ স্টোরেই গুগল প্লেস্টোর বা অ্যাপল অ্যাপ স্টোরের মতো শক্তিশালী স্ক্যানিং ব্যবস্থাই নেই। সাইবার অপরাধীরা থার্ড-পার্টি অ্যাপ স্টোরের এসব দুর্বলতা কাজে লাগিয়েই অ্যাপসের মধ্যে ম্যালওয়্যার উপাদানগুলো প্রবেশ করিয়ে থাকে। কাজেই অ্যাপস ডাউনলোড করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে পারলে তা ম্যালওয়্যার থেকে স্মার্টফোনকে মুক্ত রাখতে যথেষ্টই সহায়তা করবে।

জেলব্রেক করবেন না

প্রতিটি স্মার্টফোন অপারেটিং সিস্টেমেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্মাতাদের পক্ষ থেকে নানা ধরনের ফিচার বিল্ট-ইন হিসেবে দেওয়া থাকে। এই নিরাপত্তা বলয়ের কারণে অবিশ্বস্ত বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত অ্যাপস ইনস্টল কিংবা নিরাপত্তার সাথে সংশ্লিষ্ট অনেক কাজই করা সম্ভব হয় না। ফলে অনেকেই স্মার্টফোনের এই বিল্ট-ইন নিরাপত্তা বলয় ভেঙে ফোনকে উন্মুক্ত করার চেষ্টা করে থাকেন। এই প্রক্রিয়াটি জেলব্রেকিং নামে পরিচিত। কোনো ফোনকে জেলব্রেক করা হলেও ওই ফোনের ডাটা বা অন্য বিষয়গুলোর নিরাপত্তার জন্য ব্যবহারকারীকে সম্পূর্ণরূপে নিজের ওপর নির্ভর করতে হয়। সেক্ষেত্রে এই বিষয়ক কারিগরি জ্ঞানে সমৃদ্ধ না হলেও নিরাপত্তা নিয়ে শংকা থেকেই যাবে। এই সুযোগে অনেক ম্যালওয়্যার আপনার অগোচরেই প্রবেশ করতে পারে স্মার্টফোনে। তাই জেলব্রেক করার আগে আরেকবার ভেবে নিন—নিরাপত্তার সাথে আপোষ করতে রাজি রয়েছেন কি-না। নিরাপত্তাকেই যদি সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে চান, সেক্ষেত্রে জেলব্রেক না করাটাই সমীচীন হবে।

আপডেট থাকুন

স্মার্টফোনের অপারেটিং সিস্টেম থেকে শুরু করে ইনস্টল করা অ্যাপস—সবকিছুকেই নিয়মিত আপডেট রাখার চেষ্টা করুন। ম্যালওয়্যার নিয়ে যারা কাজ করে থাকে, তারা সবসময়ই চেষ্টা করে অপারেটিং সিস্টেম বা বিদ্যমান কোনো অ্যাপসের মধ্যে ফাঁক-ফোকড় বের করার। আর সেটা করতে পারলেই ম্যালওয়্যারকে ছড়িয়ে দেওয়া তাদের জন্য সহজ হয়ে যায়। সেটা তারা নিয়মিতই করে থাকে। সাইবার অপরাধীদের এই প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করতে অবশ্য বসে থাকে না অপারেটিং সিস্টেম বা অ্যাপ নির্মাতারা। তারাও যেকোনো সময় অপারেটিং সিস্টেম বা অ্যাপে কোনো ধরনের দুর্বলতা বা ত্রুটি দেখলে সাথে সাথে সেটার সমাধান বের করার সর্বাত্মক চেষ্টা করে। নতুন নতুন আপডেট বা প্যাচের মাধ্যমে হাজির হয় যেকোনো ত্রুটির সমাধান। আবার হ্যাকারদের আক্রমণে কোনো অ্যাপ বা অপারেটিং সিস্টেমে ঝুঁকি তৈরি হলে তারও সমাধান নিয়ে হাজির হয় আপডেট। এগুলো তাই নিয়মিত ইনস্টল করে নিতে হবে। অপারেটিং সিস্টেম বা অ্যাপকে আপডেট রাখতে পারলে তাই আপনার স্মার্টফোনকে ম্যালওয়্যার থেকে মুক্ত রাখার পথে অনেকটাই এগিয়ে যেতে পারবেন। এছাড়াও নতুন আপডেট থেকে উপভোগ করতে পারবেন নতুন নতন ফিচার ও ব্যবহার সুবিধা।