বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জিতলেন মোদি

News Sundarban.com :
সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৮
news-image

যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম পাওয়ার পথ উন্মুক্ত করেছে ভারত। ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ দুই মন্ত্রী সম্প্রতি ভারত সফরের সময় নয়াদিল্লির সঙ্গে এ-সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ভারত সাঁজোয়া পর্যবেক্ষক ড্রোনের মতো উচ্চ প্রযুক্তির স্পর্শকাতর সামরিক সরঞ্জাম পেতে পারে।

এই চুক্তি হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল। এমনকি ট্রাম্পের দুই মন্ত্রীর ভারত সফর অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। এই অনিশ্চয়তার নানা কারণের একটি হলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ চরিত্র। অন্য কারণগুলোর মধ্যে রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা এবং পাকিস্তান-আফগানিস্তান প্রসঙ্গই উল্লেখযোগ্য। রাশিয়া ও ইরানের ওপর মার্কিন অবরোধ চলছে।

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ভারত সফর করেন। এই সফর গত এপ্রিলে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ট্রাম্প তাঁর তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনকে বরখাস্ত করায় সফর স্থগিত হয়ে যায়। পরে সফরের সময় নির্ধারণ করা হয় জুলাইয়ে। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ‘অনিবার্য কারণে’ এই সফর স্থগিত করা হলো। শেষে চলতি মাসে দিল্লি সফর করলেন মার্কিন দুই মন্ত্রী। এ সফরেই স্বাক্ষরিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ভারতের স্পর্শকাতর সামরিক সরঞ্জাম পাওয়ার চুক্তি।

নয়াদিল্লিতে বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে (বাঁ থেকে) মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও, প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সিথারামান। রয়টার্স ফাইল ছবি
নয়াদিল্লিতে বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে (বাঁ থেকে) মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও, প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সিথারামান। রয়টার্স ফাইল ছবি
সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোয় ভারত-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে অনেক পরিবর্তন এসেছে। বলা যায়, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের সঙ্গে তাঁর বৈঠক, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করা, ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়া, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের মতো সিদ্ধান্তগুলো এই সম্পর্ক পরিবর্তনে প্রভাব ফেলেছে। আর ট্রাম্পের এসব সিদ্ধান্তই তাঁর গায়ে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ তকমা সেঁটে দিয়েছে। লন্ডনভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কন্ট্রোল রিস্ক-এর ভারত ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পরিচালক প্রত্যুষ রাও বিবিসিকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার সময় ভারতের প্রতিনিধিদের অবশ্যই ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ ট্রাম্পের বিস্ময়কর সিদ্ধান্তগুলোর কথা মাথায় থাকে।

ভারতের সঙ্গে এই চুক্তি করার আগে যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই নয়াদিল্লির সঙ্গে মস্কো ও তেহরানের ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি ভেবেছে। মস্কোর সঙ্গে নয়াদিল্লির সামরিক ঘনিষ্ঠতার বিরোধিতাও করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকা রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের চুক্তির বিরোধী ছিল যুক্তরাষ্ট্র। স্টকহোম পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বরাত দিয়ে আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ভারত গত পাঁচ বছরে যে পরিমাণ সামরিক সরঞ্জাম কিনেছে, তার শতকরা ৬২ ভাগই কিনেছে রাশিয়ার কাছ থেকে। এ ছাড়া নয়াদিল্লি মস্কোর কাছ থেকে বিমান বিধ্বংসী এস-৪০০ মডেলের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, ভূমি থেকে আকাশে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কেনা নিয়ে আলোচনা করছে। রাশিয়ার কাছ থেকে প্রায় ৬০০ কোটি ডলারের বিনিময়ে অত্যাধুনিক এই আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ক্রয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে ভারত। এটা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন মনঃক্ষুণ্ন হলেও সেদিকে তাকায়নি মোদির ভারত। ভারতের কূটনীতিকেরা বলছেন, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই। ভারতের নিরাপত্তার জন্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

ইরানের চাবাহার বন্দর। আফগানিস্তানে প্রবেশের জন্য এই বন্দর ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এএফপি ফাইল ছবি
ইরানের চাবাহার বন্দর। আফগানিস্তানে প্রবেশের জন্য এই বন্দর ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এএফপি ফাইল ছবি
এদিকে ইরান এই মুহূর্তে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ জ্বালানি তেল বিক্রেতা দেশ। ভয়েস অব আমেরিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র চায় আগামী নভেম্বরের মধ্যে সব দেশ ইরানের কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ করুক। কিন্তু মোদির জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই কঠিন। কারণ, ইরানের কাছ থেকে দেশটি যে পরিমাণ তেল আমদানি করে, সেই বাজার নতুন করে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তেলের দাম নিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও বেকায়দায় আছেন মোদি। তেলের দাম বেড়েছে ভারতে। একে কেন্দ্র করে কয়েক দিন আগে ভারতজুড়ে বনধ পালন করেন কংগ্রেসসহ কয়েকটি দল। এ ছাড়া তেল আমদানি কমালে ইরানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির আশঙ্কাও রয়েছে মোদির। ভারত ইরানে চাবাহার বন্দর নির্মাণ করছে। আফগানিস্তানে প্রবেশের জন্য এই বন্দর ভারতের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে হয়তো ভারত ইরানের কাছ থেকে তেল আমদানির পরিকল্পনার বিষয়ে ‘চুপচাপ’ থাকার নীতিই নিয়েছে।

ভারত সফরের আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও পাকিস্তান সফর করেন। বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান ওই বৈঠকের পর ওয়াশিংটনের সঙ্গে ইসলামাবাদের ‘নতুন সম্পর্ক’ গড়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। ভারত চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে প্রভাব বিস্তারের লড়াইয়ে রয়েছে। এ কারণে ইরানের চাবাহার বন্দর তার চাই-ই চাই। ভারতের আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের উন্নয়ন আফগানিস্তানে তাদের পিছিয়ে দিতে পারে। তাই ইসলামাবাদ-ওয়াশিংটন সম্পর্কের দিকেও তীক্ষ্ণ নজর নয়াদিল্লির। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক প্রমিত পাল চৌধুরী আল-জাজিরাকে বলেছেন, ভারতের চাওয়া হলো আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি কখন কমে যায়। তাতে করে আফগানিস্তানে তাদের প্রভাব আরও বাড়ানো সহজ হবে। নয়াদিল্লির বিশ্বাস, পশ্চিমাদের সঙ্গে ইসলামাবাদের সম্পর্ক শীতল হওয়ায় আফগানিস্তানে তাদের সঙ্গে পেরে উঠবে না পাকিস্তান।