শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দুই বাঙালি মিলে তাস পিটিয়ে, দেশকে আন্তর্জাতিক স্তরে সোনা এনে দিলেন

News Sundarban.com :
সেপ্টেম্বর ১, ২০১৮
news-image

এশিয়ান গেমসে এবারই প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ব্রিজ। আর প্রথমবারেই বাজিমাত দুই বাঙালির। শিবনাথ সরকার ও প্রণব বর্ধন এই দুই বাঙালি ভদ্রলোকের নাম দেশের ক্রীড়াকাশে জ্বলজ্বল করবে, এ কথা হলফ করে বলা যায়। দুই বাঙালি মিলে, তাস পিটিয়ে, দেশকে আন্তর্জাতিক স্তরে সোনা এনে দিলেন। এশিয়ান গেমসের ব্রিজ ইভেন্টে সোনা জিতলেন কলকাতার এই দুই খেলোয়াড়।তবে অনেকেই এই দুই ভদ্রলোকের বয়সের সংখ্যা শুনে ভিড়মি খাচ্ছেন। কিন্তু ব্রিজ খেলার প্রসঙ্গ এলে এদেশে খেলোয়াড়দের বেশিরভাগের বয়সই শিবনাথ ও প্রণব বর্মনের কাছাকাছি। প্রসঙ্গত, এশিয়ান গেমসে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা ব্রিজ দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্যের বয়স ৪০ বছর। আর এই একই দলে সব থেকে বয়স্ক খেলোয়াড় ৭৯ বছর বয়সী একজন। ফলে বুঝতেই পারছেন, ব্রিজের প্রসঙ্গ এলে বয়স্ক সংখ্যামাত্র।
গত ৪০ বছর ধরে ব্রিজ খেলার সঙ্গে যুক্ত প্রণব বর্ধন। শিবনাথ সরকারও ব্রিজ খেলেন প্রায় ৩০-৩৫ বছর ধরে। আর এই দুই বাঙালি পরস্পরের সঙ্গে জুটি বেঁধে খেলেন গত কুড়ি বছর ধরে। ২০ বছর ধরে একে অপরের সঙ্গে খেলাটাই এই দুই বাঙালির সাফল্যের আসল রসায়ন। ভারতীয় ব্রিজ দলের সঙ্গে জাকার্তায় যাওয়া ম্যানেজার নির্মল রাজাগোপালন বলছিলেন, ”গত এক বছরের বেশি সময় ধরে আমরা দল বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছি। প্রণব ও শিবনাথ দেশের সেরা খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্যতম। তাই ওঁরা দেশের হয়ে এশিয়ান গেমসে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এই দুজন গত বছর কোরিয়ায় এশিয়া প্যাসিফিক চ্যাম্পয়নশিপে সোনা জিতেছিলেন। ওই চ্যাম্পিয়নশিপে বিশ্বের যে সব খেলোয়াড়রা ছিল এশিয়ান গেমসেও তাঁদের প্রায় সবাই হাজির ছিল। এছাড়া আমরা এশিয়া ও বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের মতো বহু প্রতিযোগিতায় অংশ নিই। আজ শিবনাথ ও প্রণব সোনা জিতল বলে মানুষ এত কিছু জানতে পারছেন। আমাদের দেশে ব্রিজ নিয়ে বেশিরভাগ মানুষের আগ্রহ তেমন নেই। তবে শিবনাথ ও প্রণব যা করলেন তাতে এবার হয়তো মানুষ এই খেলা নিয়ে উত্সাহ পাবেন।”
প্রণববাবুর বয়স ৬০। আর শিবনাথ সরকার ৫৬ বছরের। ক্রিকেট, ফুটবল, টেনিস, ব্যাডমিন্টন বা অন্য কোনও খেলা হলে তাঁদের পক্ষে হয়তো এই বয়সে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা সম্ভব হত না। তবে তাঁরা যে খেলার সঙ্গে যুক্ত তাতে মাঠে নেমে শারীরীক কসরতের দরকার পড়ে না। বরং অনেক বেশি দরকার পড়ে মস্তিষ্কের জোর। সেখানেই বিশ্বের তাবড় ব্রিজ খেলোয়াড়দের টেক্কা দিয়ে গেলেন দুই বাঙালি। পাড়ার মোড়ে বা ক্লাবের ঘরে অথবা ট্রেনের কম্পার্টমেন্টে বসে বাঙালির তাস পেটানোর অভ্যাস পুরনো। তাস খেলার ভাল-মন্দ নিয়ে জনস্বার্থে অনেক কথাই প্রচলিত রয়েছে। সেইসব ধ্যান-ধারণার জীর্ণ, বস্তাপঁচা অংশটুকু প্রণব ও শিবনাথের এই সাফল্যে ধুয়ে-মুছে যাওয়ার কথা। তাস পিটিয়েও আন্তর্জাতিক স্তরে দেশকে গর্বিত করা যায়। প্রমাণ করে গেলেন এই দুই বাঙালি খেলোয়াড়।