মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চিরবিদায় বাজপেয়ী (১৯২৪-২০১৮)

News Sundarban.com :
আগস্ট ১৬, ২০১৮

প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী। বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। ১১ জুন থেকে ভর্তি ছিলেন দিল্লির এইমসে। যার রক্তে মিশেগেছে সে আর কেউ নন তিনি অটলবিহারী বাজপেয়ী। স্বাধীন ভারতের দশম প্রধানমন্ত্রী। বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। গত ৩ দিন ধরে তাঁর শারিরীক পরিস্থিতির অবনতি ঘটে ৷ ভেন্টিলেশনে রাখা হয় তাঁকে ৷ কিন্তু চিকিৎসকদের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে এইমস হাসপাতালেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি ৷ বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা ৫মিনিটে দিল্লির এইমস-এ তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গেই ভারতীয় রাজনীতিতে শেষ হল এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়।বাজপেয়ীর মৃত্যুতে গভীর শোকের ছায়া রাজনৈতিক মহলে ৷আর এ জন্যই ব্যক্তি অটল বিহারী বাজপেয়ী বিরোধীদের শ্রদ্ধা ও প্রশংসাও আদায় করে নিয়েছেন।
গোয়ালিয়ের আর পাঁচটা সাধারণ পরিবারের ছেলের মতোই বড় হয়ে উঠেছিলেন তিনি। বাবা স্কুল শিক্ষক কৃষ্ণবিহারীও কবি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর কাছ থেকেই ছন্দের অনুরাগ পেয়েছিলেন হিন্দি সাহিত্যের ছাত্রটি। তরুণ অটলের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় আর্য সমাজের হাত ধরে। সংগঠনের যুব শাখা আর্য কুমার সভায় যোগ দেন তিনি। ১৯৪৪ সালে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হন। এর পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা বাড়ছিল তাঁর। বাবাসাহেব আপ্তের হাত ধরে ১৯৩৯-এ স্বয়ং সেবক হিসেবে যোগ দেন আরএসএস-এ। ১৯৪০-৪৪ সঙ্ঘের প্রশিক্ষণ শিবিরে ছিলেন তরুণ অটলবিহারী। ১৯৪৭ সালে পূর্ণসময়ের কর্মী হিসেবে যোগ দেন আরএসএসে। এরমধ্যেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর হন অটলবিহারী বাজপেয়ী। তখনকার দিনে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর হওয়াই তাঁর মেধার পরিচয়বাহী। বিস্তারক হিসেবে তাঁকে উত্তর প্রদেশে পাঠায় আরএসএস। দীনদয়াল উপাধ্যায়ের রাষ্ট্রধর্ম পত্রিকায় কাজ শুরু করেন। একই সঙ্গে লেখালিখি চলতে থাকে পাঞ্চজন্য-সহ অন্য পত্রিকাগুলিতেও। পাঁচবছরের শাসনকালে একাধিক আর্থিক সংস্কার করেন প্রধানমন্ত্রী। চালু হয় প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা, সর্ব শিক্ষা মিশনের মতো প্রকল্প। সোনালি চতুর্ভুজ প্রকল্পে গোটা দেশকে একসূত্রে বাঁধার কৃতিত্ব বাজপেয়ীর। ১৯৯৬ সালে তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্ব টেঁকে মাত্র ১৩ দিন। এরপর ১৯৯৮ সালে আবার দিল্লির মসনদে। সেবার তেরো মাসের জন্য। ১৯৯৯ সালে তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হন অটলবিহারী বাজপেয়ী।
বাজপেয়ীর মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ৷ ট্যুইট করে কোবিন্দ বলেন, ভারতীয় রাজনীতির মহান স্তম্ভ ছিলেন ৷ তাঁর প্রয়াণে আমি শোকাহত ৷ তাঁর নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা ও দূরদর্শিতায় সবাই মুগ্ধ ৷ তাঁর মধুর ভাষণ মুগ্ধ করেছে দেশবাসীকে ৷ তাঁর কাজ আমাদের স্মৃতিতে অমর হয়ে থাকবে ৷
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর জীবনাবাসনে শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ৷ বাজপেয়ীর মৃত্যু এক যুগের অবসান বলে ট্যুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ বাজপেয়ীর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করলেন এল কে আডবাণী ৷ ৬৫ বছরের পুরনো বন্ধুকে হারিয়ে আমি শোকস্তব্ধ বলে জানালেন আডবাণী ৷ সিনিয়র সহ কর্মী হওয়া সত্ত্বেও গত ৬৫ বছর ধরে তিনি আমার সব থেকে কাছের বন্ধু ছিলেন ৷ দুঃখপ্রকাশ করার জন্য আমার কাছে কোনও শব্দ নেই ৷RSS থেকে বিজেপি ওনার সঙ্গে কাটানো প্রত্যেক মুহূর্ত আমার কাছে স্মরণীয় ৷ জনসংঘ থেকে বিজেপি। জনতা সরকারের বিদেশমন্ত্রী থেকে ১৩ দিনের প্রধানমন্ত্রী। প্রথম অ-কংগ্রেসী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মেয়াদ পূর্ণ করার ঐতিহাসিক কৃতিত্ব। জোট সরকারের রূপকার থেকে রাজনীতির চাণক্য – নামের পাশে অনেক উপাধি। ছ’বছর ওনার ডেপুটি হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম আমি ৷
গত ৫ বছর ধরেই কথা বলার ক্ষমতা হারিয়েছিলেন। ভারতরত্ন নেওয়ার সময়ও কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে পারেননি। তবে ভারতের রাজনীতিতে তিনি একই রকম প্রাসঙ্গিক। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কথায়, দ্য গ্রেটেস্ট পার্লামেন্টারিয়ান ইন্ডিয়া হ্যাভ এভার মেড।
বাজপেয়ীর প্রয়াণে শোকবার্তা রাহুল গান্ধির ৷ ট্যুইটে শোকপ্রকাশ করলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধি ৷ ট্যুইটে রাহুল বলেন, ভারত মাতা তাঁর মহান সন্তানকে হারালেন ৷ বাজপেয়ীজিকে লক্ষ লক্ষ মানুষ ভাল বাসতেন ৷ তাঁকে শ্রদ্ধা করতেন সব ভারতবাসী ৷ তাঁর পরিবার ও অনুগামীদের সমবেদনা জানাই ৷ তাঁর শূন্যতা পূরণ হবে না ৷
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গভীর শোকাহত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে ৷ বাজপেয়ীকে চিরকাল শ্রদ্ধা করতেন মমতা ৷ শোকবার্তায় সেই কথাই উল্লেখ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এক দক্ষ রাজনীতিককে হারালাম আমরা ৷ তাঁর সঙ্গে কাটানো সময় চিরকাল মনে রাখব: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷