শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ভারত নিজের স্বার্থেই চাইবে আ.লীগ ক্ষমতায় থাকুক : তথ্য উপদেষ্টা

News Sundarban.com :
মে ২৮, ২০১৮
news-image
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেছেন, শুধুমাত্র এক কাশ্মিরের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমনে ভারতকে যে পরিমাণ সামরিক শক্তি ও অর্থ ব্যয় করতে হয়, সেখানে সেভেন সিস্টার হিসেবে পরিচিত দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত প্রদেশে বিদ্যমান বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন আরো শক্তিশালী হলে তা দেশটির অস্তিত্বকে সংকটের মুখে ফেলবে। আর এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তথা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি এখানকার ভূখন্ডকে ব্যবহার করে কোনো দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহন করায় তা ভারতের জন্য বিরাট ভূমিকা রাখছে। তাই ভারত নিজের স্বার্থেই মনে প্রাণে চাইবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকুক।
সোমবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‌‌‌‌‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক : গণমাধ্যমের ভূমিকা’ -শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইকবাল সোবহান চৌধুরী এসব মন্তব্য করেন। ইন্ডিয়ান মিডিয়া করসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ইমক্যাব) এই সভার আয়োজন করে।
এতে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা আরো বলেন, বাংলাদেশ ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, যেখানে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি ভারতীয় সেনারাও জীবন দিয়েছেন।
তিনি বলেন, তিস্তার পানিবন্টন চুক্তি নিয়ে দীর্ঘসূত্রিতা বা অচলাবস্থা, সীমান্তে হত্যা ও বাণিজ্য ঘাটতি- এমন কোনো কিছুই দুই দেশের সুসম্পর্ককে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।
ভারতবিরোধী কার্ড ব্যবহার করে এই দেশে কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছে- এমন মন্তব্য করে ইকবাল সোবহান চৌধুরী আরো বলেন, ৭৫ পরবর্তী শাসককরা এই কাজটি করেছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভূখন্ডকে কোনো দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন নীতি ও তার বাস্তবায়নের ফলে আমরা ভারতকে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা উভয় দিক দিয়েই লাভবান করেছি। এখন ভারতের সময় এসেছে তার প্রতিদান দেয়ার।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, শেখ হাসিনার সরকার এমন অবস্থান গ্রহণ না করলে শুধুমাত্র সেভেন সিস্টারের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমন করতে ভারতকে প্রতি বছর আরো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হতো এবং ব্যাপক সৈন্য বাহিনীর ব্যবহার করতে হতো।
এর বিনিময়ে ভারতকে বাংলাদেশের ব্যাপারে আরো সহনশীল হওয়ার আহবান জানিয়ে ইকবাল সোবহান বলেন, আসামে যখন বাংলাদেশের অনুপ্রবেশকারী আখ্যা দিয়ে সেখানকার বিশাল জনগোষ্ঠীর তালিকা তৈরি করা হয় তা বাংলাদেশের মানুষকে উদ্বিগ্ন করে তোলে, ভারতের বিভিন্ন স্থানে মসজিদে যখন মুসুল্লিদের নামাযে বাধা দেয়া হয় তা বাংলাদেশের মানুষকে ব্যথিত করে।
সভায় বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের একাংশের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি ভারত সফরে গিয়ে বলেছেন যে দুই দেশের সম্পর্ক পদ্মা-মেঘনা-ব্রহ্মপুত্রের মতো। কিন্তু সেখানে তিনি তিস্তার কথা বলতে পারেননি।
বুলবুল বলেন, আমরা আশা করবো ভারতের পক্ষ থেকে অচিরেই এমন পদক্ষেপ নেয়া হবে যাতে প্রধানমন্ত্রী পরবর্তীতে তিস্তার নামও বলতে পারেন।
সাংবাদিক নেতা বুলবুল শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, শেখ হাসিনার এবারকার ভারত সফর ছিল একান্তই সাংস্কৃতিক, এই সফরের সাথে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক বা দেনদরবারের বিষয় ছিল না।
বুলবুল বলেন, তিস্তার ব্যাপারে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অত্যন্ত আন্তরিক। সেখানে পশ্চিম বঙ্গের মমতা ব্যানার্জীর প্রাদেশিক সরকার বিরোধিতা করছে।
তিনি বলেন, এটাই কুটনীতির স্বাভাবিক ধারা যে প্রত্যেক দেশই তার স্বার্থ চাইবে। মমতা ব্যানার্জী তার নিজ দেশের স্বার্থকে গুরুত্ব না দিয়ে বাংলাদেশের স্বার্থ দেখবে এমনটা আশা করাই বোকামি ও ভিত্তিহীন।
তিনি বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে বিষয়টি উপলব্ধিতে এনে এমন কোনো প্রপাগান্ডা না চালানোর আহবান জানিয়েছেন যাতে সাম্প্রদায়িক উস্কানির সৃষ্টি হয় এবং দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
ইমক্যাবের সভাপতি সাংবাদিক বাসুদেব ধরের সভাপতিত্বে সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, ভারতীয় দৈনিক দি হিন্দুর ঢাকা প্রতিনিধি হারুন হাবিব।
তিনি বলেন, দুই দেশেরই বিষয়- স্বার্থ আছে, পারস্পরিক চাওয়া –পাওয়া আছে, যা বস্তবসম্মত স্বদিচ্ছার বাতাবরণে সমাধানযোগ্য। তিনি আশা প্রকাশ করেন, তিস্তার পানি বন্টন ও সীমান্ত হত্যা বন্ধের মতো যে জরুরি বিষয়গুলো আজও অমীমাংসীত আছে তার সমাধান হবে।
এ ছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় প্রেস কাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার সাহা।