শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

যাওয়া যাক কেরালা

News Sundarban.com :
এপ্রিল ১৮, ২০১৮
news-image

পশ্চিমে আরব সাগর, পূর্বে 500-2700 মিটার উচ্চ পশ্চিমঘাট পর্বতমালা দ্বারা এবং 44টি নদী-জাল বেষ্টিত কেরালা রাজ্যটি বহুমূখী ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যে মোড়া। সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গরাজি এবং গভীর উপত্যকা থেকে শুরু করে অনন্ত ব্যাকওয়াটার ও সুবিস্তৃত তটভূমি নিয়ে কেরালা রাজ্যের কাছে নেই বলে কিছুই নেই।
কোভালামঃ দক্ষিণ কেরালার থিরুবনন্তপূরম থেকে মাত্র 16 কিমি। কোভালম একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সমুদ্র সৈকত, যেখানে একটি-অপরটির সঙ্গে লাগোয়া তিনটি অর্ধচন্দ্রাকার বেলাভূমি রয়েছে। এই সমুদ্র সৈকত সেই 1930-এর দশক থেকেই বরাবর পর্যটকদের প্রিয় বিচরণ ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে, বিশেষত ইউরোপীয়দের কাছে। এই সৈকতে একটি ভীমকায় পাথুরে শৈলান্তরিপ রয়েছে যা একে সমুদ্রস্নানের পক্ষে আদর্শ একটি শান্ত-স্নিগ্ধ সৈকতের রূপদান করে।


ফোর্ট কোচিঃ ফোর্ট কোচির ঐতিহাসিক শহরটিকে ভালভাবে দেখার সেরা উপায় হচ্ছে পায়ে হেঁটে বেড়িয়ে পড়া। আপনার সামনে এসে দাঁড়াবে ইমানুয়েল দুর্গ। এই দুর্গ-প্রাসাদটি অতীতে পর্তুগীজদের আস্তানা ছিল এবং কোচির মহারাজা সঙ্গে পর্তুগালের সম্রাটের বন্ধুত্বের প্রতীক ছিল, যাঁর নামেই এর নামকরণ। এই দুর্গ-প্রাসাদটি নির্মিত হয়েছিল 1503 সালে । প্রাচীন ঠাকুর হাউস, যেটি ঔপনিবেশিক যুগের একটি কংক্রিট স্থাপত্য। আছে ডেভিড হল। ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দ্বারা এটি আনুমানিক 1695 সালে নির্মিত। হলটি খ্যাত নামা ওলন্দাজ সেনাপতি হেনড্রিক অ্যাড্রিয়ান ভ্যান রীড টট ড্র্যাকেস্টনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এখানকার বিখ্যাত প্যারেড গ্রাউন্ড, যে প্যারেড ময়দানে পর্তুগীজ, ওলন্দাজ ও ব্রিটিশ প্রত্যকেরই সৈনবাহিনী কুচকাওয়াজ করত। 1503 সালে পর্তুগীজ শাসকদের দ্বারা নির্মিত একটি রয়েছে। এ গির্জা বহু ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর সাক্ষী থেকেছে। এই গির্জাতেই ভাস্কো দা গামা সমাহিত হয়েছিলেন।


আলুঝোপ্পাঃ প্রাচ্যের ভেনিস নামে খ্যাত আলাপ্পুঝা চিরকালই কেরালার উপকূলকেন্দ্রিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে এসেছে। বর্তমানে, এই স্থানটি এখানকার নৌচালন প্রতিযোগিতা, ব্যাকওয়াটার অবসরযাপন, সমুদ্র সৈকত, সামুদ্রিক পণ্যসামগ্রী এবং ছোবড়া শিল্পের জন্য বিখ্যাত। আলাপ্পুঝা বেলাভূমি একটি উত্তম পিকনিক করার জায়গায়ও বটে। সমুদ্রের মধ্যে অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে যাওয়া এখানকার জেটিগুলি 137 বছরের পুরনো। সৈকতকেন্দ্রিক বিনোদনের সুবিধার মধ্যে বিজয়া সৈকত উদ্যান বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। এছাড়াও অনতিদূরে স্থিত লাইটহাউসটিও পর্যটকদের বিশেষ আকর্ষণের বিষয়।
বেকালঃ বেকাল দুর্গ থেকে কম-বেশি এক কিলোমিটার, আর উত্তর কেরালার কাসারগোদ জিলার জাতীয় সড়কের উপর দক্ষিণ কাসারগোদ থেকে মোটামুটি 16 কিমি দূরত্বে স্থিত। উত্তর কেরালার প্রান্তিক জিলা কাসারগোদ দুর্গ, নদী, পাহাড়, সুন্দর সমুদ্র সৈকত ও অসংখ্য দেব-দেবীর ভূমি হিসেবে পরিচিত। বেকালের মনোরম দুর্গটি কেরালার সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে সুন্দরভাবে সংরক্ষিত দুর্গ।
কুমারকমঃ কুমারকম গ্রামটি ভেম্বানদ সরোবরের উপর ভেসে থাকা একটি ক্ষুদ্র দ্বীপপুঞ্জ, এবং কুট্টানদ অঞ্চলের অন্তর্গত একটি স্থান। এখানকার পাখিরালয়, যা 14 একর অঞ্চলে ছড়িয়ে রয়েছে, পরিযায়ী পাখিদের একটি প্রিয় বিচরণ ক্ষেত্র এবং পক্ষীবিজ্ঞানী তথা পক্ষীপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য। বক, গয়ার, হেরন, বালিহাস, পানকৌড়ি, কোকিল, বুনোহাস এবং পরিযায়ী পাখি যেমন সাইবেরীয় সারস ইত্যাদি ঝাঁকে-ঝাঁকে এখানে আসে এবং পর্যটকদের মুগ্ধ করে দেয়। কুমারকমের পাখি দেখার সব থেকে ভাল পদ্ধতি হচ্ছে একটি নৌকোয় চড় এই গোটা দ্বীপপুঞ্জটির এক চক্কর দিয়ে নেওয়া।


মুন্নারঃ মুথিরাপুঝা, নাল্লাথান্নি এবং কুন্দলা এই তিন নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত এবং সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় 1600 মিটার উচ্চতায় স্থিত মুন্নার শহরটি ছিল তদানীন্তন দক্ষিণ ভারতের ব্রিটিশ শাসকদের গ্রীষ্মকালীন ঘাঁটি। বিস্তৃর্ণ অঞ্চল জুড়ে চা বাগান, ঔপনিবেশিকালের সব বাংলো, ছোট ছোট নদী, জলপ্রপাত এবং শীতল আবহাওয়া, এই সবই এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যাবলী। এছাড়াও ট্রেকিং ও মাউন্টেন বাইকিংয়ের জন্য এটি একটি উপযুক্ত স্থান।
থেক্কাডিঃ থেক্কাডি শব্দটি শুনলেই যেন হাতির পাল, অসংখ্য পাহাড়ের সারি এবং সুগন্ধে ভরপুর মশলার বাগানের ছবি চোখের সামনে এসে হাজির হয়। থেক্কাডির পেরিয়ার বনাঞ্চলে রয়েছে ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভয়ারণ্য এবং প্রায় সমগ্র জিলা জুড়ে বিস্তৃত ছবির মতো সুন্দর চা-বাগান এবং শৈলশহরগুলি ট্রেকিং ও পর্বতচারণের জন্য বিশেষ উপাদেয় স্থান।
ওয়েনাদঃ পশ্চিমঘাট পর্বতমালার শীর্ষদেশে 2,132 বর্গকিমি জুড়ে বিস্তৃত জৈব-বৈচিত্রতাপূর্ণ ওয়েনাদ কেরালার একটি দর্শনীয় জিলা যা আজও তার আদিম সৌন্দর্য ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এখানকার পাহাড়গুলির আড়ালে এখানকার কিছু প্রাচীনতম আদিবাসীদের বসবাস, যাঁরা আজও আধুনিক সভ্য জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। আর কেরালায় ইদাক্কাল পাহাড়ের পাদদেশে ও আম্বুকুথিমালার আশে-পাশে যে সমস্ত প্রাগৈতিহাসিক গুহাচিত্রগুলির সন্ধান পাওয়া গেছে। ওয়েনাদের দক্ষিণ প্রান্তের মেপ্পাদির নিকটে 2100 মিটার উচ্চতায় অবস্থিত চেম্ব্রা শৃঙ্গ।
ভারকালাঃ ভারকালার স্নিগ্ধ সমুদ্র সৈকত একটি একটি খনিজ পদার্থপূর্ণ প্রস্রবণ সমৃদ্ধ পর্যটন গন্তব্যস্থল। এখানকার সমুদ্রের জলে একটি ডুব দিলেই তা সমস্ত শরীরকে দূষণমুক্ত ও আত্মাকে পাপমুক্ত করে বলে বলে লোকের বিশ্বাস; এই কারণেই তো এই সৈকতের স্থানীয় নাম ‘পাপনাশম সৈকত’।
জটায়ু পার্কঃ কেরালার পর্যটনে নয়া মাত্রা যোগ করতে তৈরি জটায়ু পার্ক। ৬৫ একর জায়গায় তৈরি বিশ্বের বৃহত্তম পাখির ভাস্কর্য খুলে দেওয়া হবে সামনের বছর জানুয়ারিতে। আরাও নানা অ্যাডভেঞ্চারের হাতছানিও থাকছে পৌরাণিক বিশ্বাসে ভর করে তৈরি এই জটায়ু পার্কে।
কেরালার ইতিহাস এর বাণিজ্যের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত যা সাম্প্রতিক সময়কাল পর্যন্ত মশলার বাণিজ্যকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হত। ভারতবর্ষের মশলা উপকূল হিসেবে খ্যাত কেরালা অতীতে গ্রীক, রোমান, আরবীয়, চীনা, পর্তুগীজ, ওলন্দাজ, ফরাসী এবং ইংরেজ পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের জন্য ভারতের অতিথি সেবকের ভূমিকা পালন করত। এঁরা সকলেই কোন না কোন রূপে এই রাজ্যে তাঁদের পদচিহ্ন রেখে গেছেন, তা সে স্থাপত্যকীর্তি, রন্ধনশিল্প বা সাহিত্য যে ক্ষেত্রই হোক।